আত্মরক্ষায় প্রত্যয়ী কন্যারা
জিয়াউল গনি সেলিম, রাজশাহী
🕐 ৯:১০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২০
দিন দিন দেশে ধর্ষণ নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে। বেড়েছে ইভটিজিংসহ বিকৃত ও বর্বর মানসিকতা। করা হচ্ছে যৌন হেনস্তা। সম্প্রতি নোয়াখালী ও সিলেটের এমসি কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনা নাড়া দেয় দেশে। শিক্ষার্থী-জনতার প্রতিবাদ, সমাবেশ ও দাবির মুখে ধর্ষকের জন্য সর্বোচ্চ আইন ফাঁসির অধ্যাদেশ জারি হয়েছে দেশে। এরই মধ্যে নতুন এই আইনে একটি মামলায় রায়ও দেওয়া হয়েছে। তারপরও থেমে নেই ধর্ষণ, হচ্ছে বর্বর নারী নির্যাতন। ধর্ষণ নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের সুরক্ষা দিতে তাই সচেতন হচ্ছেন অভিভাবক।
উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ৩২ স্কুলে কন্যাশিশুরা নিচ্ছেন কারাতে প্রশিক্ষণ। তাদের নতুন সকাল শুরু হয় আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থ জোগান দিচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আর কারিগরি সহায়তা করছে নেটজ বাংলাদেশ।
সরজমিনে চারটি জেলার এই আত্মরক্ষামূলক কর্মসূচি ঘুরে দেখা যায়, এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর স্কুলপড়ুয়া কন্যাশিশুদের যেমন বেড়েছে আত্মবিশ্বাস ঠিক তেমনি নিজেদের রক্ষার জন্য প্রস্তুতি।
নাচোলের দুলাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের সানোয়ারা সাহস করে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারত না। বাইরে একা বের হতে ভয় পেত। সেই সানোয়ারাও এখন ভয় পায় না। সানোয়ারা বলেন, এখন আমি নিজেকে যে কোনো বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব বলে মনে করি। একই সঙ্গে অন্যকে রক্ষায়ও এগিয়ে যেতে পারব। চার জেলায় সানোয়ারার মতো আরও ৬৪০ জন কিশোরী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রশিক্ষণার্থীদের অনেকে জানান, আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ নিয়ে নানা নির্যাতনের প্রতিবাদেও এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। বাল্যবিয়ে রোধ করেছেন। অন্য কন্যাশিশুদের যৌন নিপীড়ন, লিঙ্গবৈষম্য বিষয়েও সচেতন করছেন।
উন্নয়ন সংস্থা ডাসকোর কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন জানান, আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মেয়েদের সাহস বেড়েছে। এখন তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে। অভিভাবকরাও বুঝতে পেরে তাদের কন্যাশিশুদের প্রশিক্ষণে পাঠাচ্ছেন। যৌন হয়রানির হাত থেকে কন্যাশিশুদের রক্ষায় মূলত এই প্রশিক্ষণ। তিনি আরও বলেন, এখন চারটি জেলায় এ কর্মসূচি চলছে। ভবিষ্যতে অন্যান্য জেলায় বাড়বে বিস্তৃতি।
প্রশিক্ষণ নেওয়া বালিয়াডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলেন, আগে আমি নিজেকে রক্ষার কৌশল জানতাম না। এখন আমি সাহস রাখি। অভিভাবক চম্পা বেগম জানান, তাদের ভেতরে যে একটা জড়তা ছিল এখন তা নেই। তারা প্রতিবাদ করাও শিখেছে। আত্মরক্ষার প্রশিক্ষক সম্পা আক্তার বলেন, সব ধরনের অন্যায় ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আমরা এদের প্রস্তুত করছি। এরাই আগামীর সবুজ বাংলাদেশ।
নেটজ বাংলাদেশের কর্মকর্তা সারা খাতুন বলেন, এই কর্মসূচির ফলে উত্তরের চার জেলায় নারীদের মধ্যে আলো ফুটতে শুরু করেছে। এই কর্মসূচি পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। ডাসকো ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আকরাম জানান, বাংলাদেশের অন্যতম বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতনপ্রবণ এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের যে সব স্কুলে এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে সে সব এলাকার সামগ্রিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা এখন কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় পার করে নিজের পায়ে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছে।
নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা বলেন, ডাসকোর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি কর্মসূচি পালন করছে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখছে।