ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শ্রাবণীর ভূতবন্ধু

লিটন ঘোষ জয়
🕐 ৭:০০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০২০

ভূতটা একদম পচা। শুধু ভয় দেখায়। শুনেছি ভূতের নাকি খুব সাহস। তবে এ ভূতটার তেমন সাহস নেই। একেবারে ভীতুর ডিম। তা না হলে কি রাতে ভয় দেখাতে আসে? পারলে দিনের বেলায় আসুক না দেখি!

শুধু আমাকে ভয় দেখায়।
বাবা, মা, লাবণীকে নয়। যত বাড়াবাড়ি আমার সঙ্গে।
রাতে লোডশেডিংয়ে ঘরের বাতি নিভে গেলে ভূতটা চুপি-চুপি আসে।
তারপর আমাকে বলে— লুকোচুরি খেলতে।
আমি বলি, কেন তোমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলব?
অমনি ভূতটা বলল, আমি তো তোমার বন্ধু!
না, না তোমার সঙ্গে খেলব না। একথা শুনে ভূতটা ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদে। ঠিক যেমন আমি কাঁদি।
বাবা-মা কিংবা দাদা কোনো কিছু না দিলে।
ভূতটার অমন কান্না দেখলে খুব মায়া হয়। আমার একটা পুতুল ভূতটাকে দিলাম।
ভূতটা বলল, তাহলে এসো লুকোচুরি খেলি। খেলতে পারি তবে প্রমিজ কর। আমাকে আর ভয় দেখাবে না।
একথা শুনে ভূত হাসতে হাসতে বলল, কই তোমাকে ভয় দেখাই!
আমি তো সাহস দিতে ছায়া হয়ে তোমার সঙ্গে চলি। ব্যস শুরু হয়ে গেল আমাদের লুকোচুরি খেলা।
সেদিনের পর থেকে ভূতটা শ্রাবণীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
শ্রাবণী নাচতে জানে, ভালো গান গাইতে পারে। এজন্য ভূতটা তাকে আরও বেশি পছন্দ করে। রোজ রাতে ভূতবন্ধুটা এসে বলে— ও শ্রাবণী, ওই গানটা একটু গাও না!
কোনটা?
আরে বাবা! ওই গানটা— ‘পৃথিবী বদলে গেছে/ যা দেখি নতুন লাগে/ তুমি আমি এক আছি/ দুজনে যা ছিলাম আগে...।’
ভূতের কণ্ঠে গানটা শুনে শ্রাবণী বলল— আরে থামো! তুমি তো দেখছি গানটার বারোটা বাজিয়ে দেবে! এত সুন্দর একটা গান আর তুমি গাইছ কী বাজেভাবে!
তমা ও পিচ্চি সম্রাট ভূতের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার কথা শুনে বলল— পিসিমনি, তোমার ভূতবন্ধুর সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দাও। আমরাও তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলব।
ভূতটা তো আমার বন্ধু, ও তোমাদের সঙ্গে খেলবে না। পিসিমনির একথা শুনে সম্রাটের সে কী কান্না! কিছুতেই ওর কান্না থামে না। অবশেষে আইসক্রিম দিয়ে সেই কান্না থামানো গেল।
স্কুলে এসে আমি সব বন্ধুকে বলেছি আমার নতুন বন্ধুর কথা। বলেছি লুকোচুরি খেলার কথাও।
এমনকি বাবা-মা, লাবণীকেও বলতে বাদ রাখেনি।
এত কিছুর পরও আমাকে বলতে হয়, আমি ভূত বিশ্বাস করি না।
হঠাৎ ঘরের বাতিটা নিভে গেল। তার মানে— লোডশেডিং!
তাহলে তো আমার ভূতবন্ধু এখনি আসবে। ওরে বাবা আমার খুব ভয় করছে। আমি পালাই।
মা বলল, শ্রাবণী, তুমি শুধু শুধু ভয় পাও। জানো না ভূত বলতে কিছু নেই! তুমিই তো আমাকে বলেছিলে, বিজ্ঞান ভূত বলতে কোনোকিছু বিশ্বাস করে না। তাহলে ভয় পাওয়ার কী আছে? এই তো আমি তোমার পাশে আছি।
মা’র কথা শেষ না হতেই তমা বলল— পিসিমনি, আমিও আছি। আজ যদি ভূতটা আসে তাহলে আমি ওকে ঝাঁটাপেটা করব। দাঁড়াও আমি ঝাঁটা নিয়ে আসি।
ভূতবন্ধুটা আড়াল থেকে একথা শুনে মনে মনে বলল— বুঝেছি এ দেশে আমাদের আর থাকা হবে না। কারণ, শ্রাবণী নয় সম্রাটের মতো পিচ্চিটাও ভূত বিশ্বাস করে না। এজন্য ভূত মনে মনে বিজ্ঞানকেই দায়ী করল। তাছাড়া এখান থেকে এখুনি পালাতে হবে। তা না হলে ওরে বাবা! ঝাঁটার মার খেতে... ভূত খুব রেগে এসে বলল, বিজ্ঞানের জন্য এদেশ থেকেও আমাদের পালাতে হবে।
ভূতরাজা বলল— চল, সময় থাকতে পালাই। অভিযোগ করে লাভ নেই। কেননা, আমাদের অভিযোগ কেউ শুনবে না।
সেদিনের পর থেকে শ্রাবণী আর তার ভূত বন্ধুর দেখা পায়নি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper