মিথ্যে জীবন
ছন্দা দাশ
🕐 ২:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০২০
লাবণ্য’র সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল আজ। পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া। আত্মীয়-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশীতে ওদের ঘর ভর্তি। কেউ চিৎকার করে, কেউ শুধু চোখের জল ফেলে, কেউবা রুমাল চাপা দিয়ে নিজেদের শোক প্রকাশ করছে। কেউ কেউ লাবণ্যকে ধরে রেখেছে। মনে হয়, ওরা চাইছে লাবণ্য শোকে ভেঙে পড়ুক।
ওরা তখন সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু লাবণ্যর চোখ শুকনো, খটখটে। সাহারার মতো। তাই দেখে কেউ ভাবছে মেয়েটা খুব শক্ত মনের আবার কেউ ভাবছে বুঝিবা অধিক শোকে পাথর। কেউ একজন বলে উঠল- আহা, এমন জোড় সহজে দেখা যায় না। দুজনার বড় মিল ছিল গো। এ যে ঈশ্বরের দান। কেউ কখনো ওদের মধ্যে বিরোধ দেখেনি।
ইতোমধ্যে বাড়ির ভেতর থেকে ডাক এল, আর কতক্ষণ দেরি করবি? আত্মার কষ্ট হচ্ছে তো। ওকে ধরে নিয়ে কাজটা সেরে ফেল। শাঁখা, সিঁদুর ঘুচিয়ে দাও। অমনি কান্নার রোল চারদিকের পরিবেশ যেন আঁধারে ঢেকে গেল। কান্না এমন?ই ছোঁয়াচে, একজনকে কাঁদতে দেখলে অন্যজনকে তা স্পর্শ করবেই।
দু’তিনজন বয়স্ক মহিলা লাবণ্যকে ধরে পুকুরপাড়ে নিয়ে পাথর দিয়ে শাঁখা ভেঙে দিতেই লাবণ্য তার শূন্য হাতের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। তারপর কপালের সিঁদুর মুছতেই লাবণ্য’র কেবল মনে আসছে ‘যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম’।
কেন এমন হয়? তার কপালে সিঁদুর লেপ্টে আরও লাল হয়ে যেন অগ্নিশিখা হয়ে জ্বলছে। লাবণ্য পাথরপ্রতিমার মতো নিষ্পলক। সবাই লাবণ্য’র দুর্ভাগ্যের জন্য কাঁদছে, দুঃখ করছে। কিন্তু লাবণ্য জানে, একটা মিথ্যের জীবন সে কাটিয়েছে তার অবসান হলো আজ। গত ত্রিশ বছর সে যার সঙ্গে কাটিয়েছে ভুলেও তাকে ভালোবাসতে পারেনি।
এমনকি শান্তনুও জানে না একথা। দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা শান্তনুর চিতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে লাবণ্য বলে, মিথ্যে বলেছিলাম শান্তনু- ‘যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম’।