ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাহাদুর শাহ পার্কের ফের নবাবী

মুজাহিদ বিল্লাহ
🕐 ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২০

পুরান ঢাকার রাইসা বাজার থেকে একটু এগিয়ে সাত রাস্তার মোহনা। মোহনায় গাছগাছালিতে ঘেরা একটি মনোরম পার্ক। সকাল-সন্ধ্যা পার্কটি থাকে পাখির কলকাকলি ও মানুষের গুঞ্জনে মুখরিত। গাছের তলে শীতল পরশ নিতে বসেন লোকজন। চারদিক দিয়ে তৈরি রাস্তায় কেউ কেউ করেন ব্যায়াম। দুপুরের রোদ একটু পড়তেই যেন ভিড় লেগে যায়। নানা বয়সীরা বসে মেতে ওঠেন খোশগল্পেও। অথচ এই পার্কটি আগে এমন সাজানো গোছানো ছিল না। ‘বাহদুর শাহ পার্ক’ নামটিও ছিল না। কে জানত আঠারো শতকের আর্মেনীয়দের ‘বিলইয়ার্ড ক্লাব’ বা ‘আন্টাঘর’ খ্যাত ৮৪ কাঠার এই স্থানটি পরিচিতি পাবে এ নামে! কে-ই-বা জানত সিপাহী বিদ্রোহের ভয়ঙ্কর স্মৃতি বিজরিত স্থানটি হয়ে উঠবে ঢাকার ছোটখাটো একটি অক্সিজেন!

বাহাদুর শাহ পার্কে ঘুরতে আসা কয়েক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, রাজধানীর এ অঞ্চলে বসতির ঘনত্ব অনেক বেশি। উঁচু উঁচু বিল্ডিং যেন শ্বাস আটকে ধরে। বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস নিতে এবং ক্লান্তি মুক্ত হতে সবুজে ঘেরা পার্কে প্রায় প্রতিদিনই আসি। সকালে হাঁটতে আসা আনিমা রায় বলেন, আগে এখানে ময়লা-নোংরা থাকত, এখন খুবই সুন্দর। রাস্তায় নিরাপত্তাহীন হাঁটতে হয় না। কয়েকজন নারী ডায়াবেটিস রোগী জানান, আমাদের প্রতিদিন দুৎবেলা হাঁটতে হয়। রাস্তায় যান চলাচল করে। ফলে নিরাপদ নই। এখানে নিরাপদে হাঁটতে পারছি। তবে তারা পার্ক ব্যবস্থাপনায় সিকিউরিটি বাড়ানোর দাবি জানান। যদিও অনেকই জানেন না স্থানটির ইতিহাস। কয়েকজনের মধ্যে রয়েছে ধোঁয়াশা।

ইতিহাস বলছে, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকরা অসংখ্য বিপ্লবী সিপাহিকে ফাঁসি দেয়। জনগণকে ভয় দেখাতে সেই লাশ এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এই ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে। পরে সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এখানে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিসৌধ, আর স্থানটির নামকরণ হয় বাহাদুর শাহ পার্ক। এর আগে আঠারো শতকের শেষের দিকে এখানে ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল। যাকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছিল আন্টাঘর। পরে ১৮৫৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার নাম অনুসারে এর নামকরণ হয় ভিক্টোরিয়া পার্ক। ভিক্টোরিয়া পার্কের মধ্যে রয়েছে ছোট লাট সাহেবের হাতে ১৩৫ বছর আগে স্থাপিত ঢাকার নবাব স্যার খাজা আহসানুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র খাজা হাফিজুল্লাহর স্মৃতিস্তম্ভ।

সারা দেশে করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে লোকজনের আনাগোনা কম থাকলেও এখন জমজমাট। সন্ধ্যার আলোকসজ্জা আরও যেন টেনে নেয় মানুষকে। তালে তালে মেতে ওঠেন তারা। সব দেখেশুনে মনে হবে- বাহাদুর শাহ পার্ক ফিরে পেয়েছে তার নবাবী।

 
Electronic Paper