ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শফিক হাসানের হাতে কচুশাক

আবুল কালাম আজাদ
🕐 ১:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৬, ২০২০

‘শফিক সাহেব... হাসান সাহেব... কই যাচ্ছেন... শফিক সাহেব একটু শুনুন... এই হাসান সাহেব...।’
পেছন থেকে এরকম অবিরত ডাক শুনে শফিক সাহেব থামলেন। পেছনে তাকিয়ে দেখেন লম্বা লম্বা পা ফেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে রহমান সাহেব। একই এলাকার লোক। বিকেলে চায়ের দোকানে আড্ডার বন্ধু।

শফিক সাহেবের পুরো নাম শফিক হাসান। রহমান সাহেব তাকে কখনও শফিক সাহেব, কখনও হাসান সাহেব সম্বোধন করেন। দু’টি নামই নাকি তার খুব পছন্দ।রহমান সাহেব ছুটে কাছে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন, কেমন আছেন ভাই সাহেব?
: এই তো আছি। আপনার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো তো?
: শরীর তো ভালোই ছিল। সকাল থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। কঠিন ডায়রিয়া। শুধু ছোট ঘরে যাচ্ছি আর আসছি। হাতের পানি শুকাতে পারছি না।
: হঠাৎ এরকম ডায়রিয়া? খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম হয়েছে নাকি?
: আরে না, সকালে পত্রিকায় দুইটা খবর দেখলাম, তারপর থেকেই...।
: পত্রিকার খবর দেখে ডায়রিয়া! কী খবর বলুন তো।
: সরকারি অফিসের এক কেরানি ১৫ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
: বলেন কী! আরেকটা...?
: আরেক সরকারি অফিসের পিয়নের ঢাকা শহরে ৩৩টা ফ্ল্যাট, সুউচ্চ সাড়ে চারটা বাড়ি, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরে বাড়ি ও ফ্ল্যাট, নিজ গ্রামের বাড়িতে বাগান বাড়ি, ব্যাংকে কয়েক হাজার...।
: মাই গড! সাড়ে চারটা বাড়ি বুঝলাম না।
: তিনটা কমপ্লিট, একটা আধা কমপ্লিট। আপনিই বলেন, এইসব খবর দেখার পর শরীর ঠিক থাকে? সেই যে ডায়রিয়া শুরু হলো। বিশ প্যাকেট ওরস্যালাইন নিয়ে এলাম।
: এর ভিতরের খবর শুনলে তো আপনার ডায়রিয়া, আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তবমি সব একসঙ্গে শুরু হয়ে যাবে।
: ভিতরের খবর আবার কী ভাই সাহেব?
: এই অফিস সহকারী, পিয়ন এরা এত এত সম্পদের মালিক হলো কীভাবে? কারও না কারও আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা এরকম সুযোগ পেয়েছে। আর সেই আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের বাড়ি, ফ্ল্যাট হয় ইউরোপ-আমেরিকায়, তাদের টাকা জমে সুইস ব্যাংকে, তাদের বউ-ছেলেমেয়েরা দেশে থাকে না। তাদের খবর প্রকাশ হবে না। কেউ কিচ্ছু জানবে না।
রহমান সাহেব কেমন চুপসে গেলেন। মুখটা কাচুমাচু করে মাথা চুলকাতে লাগলেন। খানিকক্ষণ মাথা চুলকে মিনমিনে কণ্ঠে বললেন, আমরা মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে চলা মেরুদ-হীন কেঁচো। কেমন করে তাদের খবর রাখব বলেন? যাকগে, আপাতত ডায়রিয়া নিয়েই থাকি। আপনি কোথায় গিয়েছিলেন ভাই সাহেব?
: বাজারে।
: তা কী কিনলেন? কচুশাক বের হয়ে আছে দেখছি।
: হ্যাঁ, কচুশাকই কিনেছি।
: শুধু কচুশাক?
: জি, মাছ, মাংসের দোকানে যেতে সাহস পেলাম না।
: বলেন কী! আপনিও তো মোটামুটি একটা সরকারি চাকরি করেন। হায়ার এডুকেটেড, আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডও ব্রিলিয়ান্ট। তারা এত কিছু করছে, আর আপনার হাতে শুধু কচুশাক!
: কী করব বলুন, বেতন যা পাই তা অর্ধেক চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়। বাড়িওয়ালা বছরে তিনবার ভাড়া বাড়ায়। তারপর খাওয়া-পরা, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে...। অবশ্য কচুশাক আমাদের সবারই খুব প্রিয়। ঘুটা দিয়ে লেটকালেটকি করে রান্না করলে শুধু কচুশাক দিয়েই পেট ভরে ভাত খেয়ে উঠতে পারি।
: উহ! পেটের মধ্যে কামড় দিয়ে উঠেছে। আর থাকতে পারছি না। আসি ভাই সাহেব!

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper