ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা চালু প্রক্রিয়ায় ধীরগতি

তানজেরুল ইসলাম ও হাসান বাপ্পি, ঠাকুরগাঁও
🕐 ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ০১, ২০২০

সরকার পরিচালিত দেশের দুটি রেশম কারখানার একটি ঠাকুরগাঁওয়ে। গত উনিশ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে এই কারখানা। দেখভালের অভাবে বিকলের কাছাকাছি কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। কারখানাটি চালু করতে একাধিকবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সুস্পষ্ট নীতিমালার অভাবে তার সুরাহা হয়নি। এখন থেকে ঠিক এক বছর আগে রাজশাহী রেশম বোর্ডের এক সভায় আলোচনা হলেও কারখানাটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে আসেনি আশাব্যঞ্জক সিদ্ধান্ত। পরে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হলেও মাত্র একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের অভাবে ঝুলে যায় তার মূল কার্যক্রম। এতকিছুর পরও আশায় বুক বেঁধে আছেন রেশমচাষিরা। উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

অনুসন্ধান বলছে, ১৯৭৭-৭৮ সালে আরডিআরএস নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ঠাকুরগাঁও জেলার দুরামারি এলাকায় রেশম কারখানা স্থাপন করে। পরবর্তীতে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৮১ সালে কারখানাটি রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে একটানা ২৬ বছরে কারখানাটি দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে লোকসানের মুখে পড়ে। পর্যায়ক্রমে এই লোকসানের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

অথচ লোকসানের নেপথ্য অনুসন্ধান শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ২০০১ সালে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানাটিতে কর্মরত ১৩৪ শ্রমিক। বেকার হয়ে আর্থিক লোকসান গুণতে হয় ঠাকুরগাঁও জেলার অন্তত ১০ হাজার রেশম চাষিকে।

অনুসন্ধান আরও বলছে, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা পরিদর্শনে যায়। পরিদর্শন শেষে কারখানাটি চালু করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটি ১৫ দিনের মধ্য প্রতিবেদন জমা দেয়। যদিও পরবর্তীতে বন্ধ কারখানাটি চালু করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। দেখভালের অভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

ঠাকুরগাঁও জেলার রেশমচাষি মহিদুল ইসলাম বলেন, কারখানাটি বন্ধ হওয়ার কারণে তিনিসহ জেলার হাজার হাজার রেশম চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকে কৃষিকাজ করছেন। তবে রেশমের জন্য তুঁত গাছ উৎপাদন ও পরিচর্যা খরচ অনেক কম। রেশম চাষে স্বল্প ব্যয়ে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হন।

রেশম বোর্ডের ঠাকুরগাঁও উপ-পরিচালক সুলতান আলী জানান, চাষিদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য রেশম কারখানাটি পুনরায় চালু করা জরুরি। কারখানাটি চালু হলে জেলার হাজার হাজার রেশম চাষি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কারখানাটি বন্ধ হওয়ার পরও অনেক চাষি এখনো গুটি উৎপাদন করছেন। গুটিগুলোর স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থাপনা হলে চাষিরা উপকৃত হবেন।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. এ কে এম কামরুজ্জামান জানান, কারখানাটি চালু করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই মতামত দিয়েছেন। কারখানাটি পুনরায় চালু হবে এমন প্রত্যাশা করছেন তিনি।

বস্ত্র অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শাহদাত হোসেন জানান, ‘জনবল সংকটের কারণে রেশম উন্নয়ন বোর্ডকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংকট নিরসন হলে দেওয়া হবে।’

 
Electronic Paper