ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শাখা খোলায় নির্দেশ মানছে না ব্যাংক

জাফর আহমদ
🕐 ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০

ব্যাংকের নতুন শাখা প্রতিষ্ঠায় পল্লী অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবার উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রে একটি শাখা গ্রামে ও একটি শাখা শহরে খোলার নির্দেশ থাকলেও ব্যাংকগুলো তা মানছে না। ফলে শহর ও শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় বেশিসংখ্যক ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। সে সব শাখাগুলো একই ব্যক্তিকে তাদের গ্রাহক হওয়ার জন্য টানাটানি করছে। অন্যদিকে পল্লী অঞ্চলের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার অধীনে আনা ও সঞ্চয়মুখী করার যে উদ্দেশ্য তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এক বছর ছয় মাসে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ৩২৫টি নতুন শাখা খোলা হয়েছে। এর মধ্যে শহরে ব্যাংকের নতুন শাখা খোলা হয়েছে ২০১টি, আর পল্লী অঞ্চলে শাখা খোলা হয়েছে ১২৪টি। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে ব্যাংকের শাখা ছিল ১০ হাজার ২৮১টি। এর মধ্যে শহরে শাখা ছিল পাঁচ হাজার ৩৭২টি, পল্লী অঞ্চলে ছিল চার হাজার ৯০৯টি। ২০২০ সালের জুলাই মাসে ব্যাংকের শাখা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬০৬টি। এর মধ্যে শহরাঞ্চলের শাখা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৩টি। আর পল্লী অঞ্চলে ব্যাংক শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৩।

ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরও বেশ কিছু সূচক কার্যকর রয়েছে। নতুন শাখার অনুমোদন দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সব বিষয় বিবেচনা করে থাকে। কোনো ব্যাংককে নতুন শাখা অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের গ্রাহক সেবার মান নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কী পরিমাণ অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম মোকাবিলায় ব্যাংকটি কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে কি-না, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কেমন এবং নিয়ম মেনে প্রভিশন রাখতে পারছে কি-না দেখা হয়। প্রভিশন রাখলেও সেখানে কোনো ঝামেলা আছে কি-না, আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতের মান কেমন সাধারণত এসব বিষয় দেখা হবে।

গ্রাহকের ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট বদলে দেওয়া বা কয়েন নেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করে কি-না তাও পর্যালোচনার মধ্যে থাকে। এরপর নতুন শাখা লাভজনক করতে কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে এবং আশপাশে যেসব ব্যাংকের শাখা রয়েছে তাদের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এরপর নতুন শাখার অনুমতি দেওয়া হয়। সম্প্রতি নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে পল্লী ঋণ বা কৃষি ঋণের বিষয়টি যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের শাখা খোলার অনুমতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর পর্যবেক্ষণ করে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি ফোনে খোলা কাগজকে বলেন, পল্লী অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কম সুযোগ থাকার কারণে পল্লী অঞ্চলে শাখা খোলার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কম থাকে। একই সময়ে শহরে এবং গ্রামে শাখার খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। শহরে ব্যবসা করার বেশি সুযোগ থাকার কারণে আগে শহরের শাখা খুলে থাকে এবং পরে পল্লী অঞ্চলে শাখা খোলে। ব্যাংক শাখা খোলার ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের অনুপাত ঠিক না থাকলে পরবর্তী সময়ে আর নতুন শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকে সারা দেশে মোট যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ হয়ে থাকে তার চেয়ে বেশি আমানত সংগ্রহ হয়ে থাকে শুধু রাজধানীর ঢাকার গুলশান এলকায়। আবার মতিঝিল ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে একটি এলাকায় যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে তার অর্ধেক ঋণ বিতরণ হয়ে থাকে সারা দেশে থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্যের এই কেন্দ্রীয়করণের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও শহরমুখী ও প্রধান প্রধান শহরকেন্দ্রিক হয়। পল্লী অঞ্চলে শাখা কম হওয়ার কারণে মানুষের সঞ্চয়ের সুযোগ যেমন কম, সঞ্চয় কম হওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোও আমানত সংগ্রহ করতে পারে কম। আবার পুঁজি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ার কারণে বিনিয়োগও কম হয়। এ কারণে ঋণ বিতরণও কম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে এখন গ্রামে একটি শাখার বিপরীতে শহরে একটি শাখা খুলতে হচ্ছে। গ্রাম ও শহরে সমানতালে শাখা খোলার বিধান থেকে শিথিলতা চেয়ে আসছে নতুন ব্যাংকগুলো। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর যে ১০ হাজার ৬০৬টি শাখা রয়েছে। এসব শাখার প্রায় ৪৭ শতাংশ গ্রামে। এ সব ব্যাংকের সরাসরি শাখার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং বুথ ব্যাংকিং সেবা চালু আছে।

ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এসব শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার উল্লেখযোগ্য অংশ সেবা পাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। কিন্তু গ্রামীণ শাখার কাঠামো বিবেচনায় পল্লী অঞ্চলের মানুষের সেবার কথা বলা হলেও তা পাচ্ছে না। গ্রামীণ শাখা হিসেবে যেসব শাখা বিবেচিত হয় তার সবই একেবারে গ্রামে তা নয়। মূলত সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার বাইরে হলে সেসব শাখা গ্রামীণ শাখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারপরও একটি শাখা শহরে ও একটি শাখা পল্লী অঞ্চলের প্রতিষ্ঠার ঘোষণায় পল্লীর জনগোষ্ঠীর সেবা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা অর্জিত হচ্ছে না।

 
Electronic Paper