ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রেনেসাঁ কবি ফররুখ আহমদ

সাইফ-উদ-দৌলা রুমী
🕐 ১:২০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০

পরিচিতি
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে ১৯১৮ সালের ১০ জুন জন্মগ্রহণ করেন কবি ফররুখ আহমদ। তার বাবা খান সাহেব সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর। মায়ের নাম রওশন আখতার। তার লেখা সাত সাগরের মাঝি, সিরাজুল মুনীর, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা, পাখির বাসা, হাতেম তায়ী, নতুন লেখা, হরফের ছড়া, ছড়ার আসর প্রভৃতি বইয়ের অনেক কবিতাই পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেয়েছে। তার লেখা স্থান করে নিয়েছে হাজারও সাহিত্যপ্রেমী মানুষের হৃদয়। কিশোর বয়সে কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে ফররুখ আহমদ সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে ‘লাশ’ কবিতা লিখে তিনি প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন।

তিনি ছিলেন মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী কবি। তার কাব্যের মৌলিক প্রবণতা মুসলিম সংস্কৃতির গৌরব কীর্তন ও জাতীয় চেতনার পুনর্জাগরণ। বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগ নৈপুণ্য এবং বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের অভিনবত্বে তার কবিতা এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। ব্যঙ্গ্য কবিতা ও সনেট রচনায় তার কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?

এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে
কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয় ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এভাবেই পাঞ্জেরি কবিতায় নতুন দিনের প্রত্যাশা, কবি হৃদয়ের ব্যকূলতা, তীব্র কামনাপূর্ণ বাসনা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

ফররুখ আহমদ ১৯৩৭ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ (১৯৩৯) পাস করে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন ও ইংরেজি সাহিত্যে বিএ শ্রেণীতে ভর্তি হন, কিন্তু পরীক্ষা না দিয়েই তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ফররুখ আহমদ সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। ফররুখ আহমদ সনেটও রচনা করেছেন। তার রচনায় ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া আরবি ও ফারসি শব্দের প্রাচুর্য তার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার কবিতায় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, ছিল চমৎকার চিত্রকল্প ও উপমা।
কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হ’ল জানি না তা।
নারঙ্গি বনে কাঁপছে সবুজ পাতা।
দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা।
তবু জাগলে না? তবু, তুমি জাগলে না?
সাত সাগরের মাঝি চেয়ে দেখো দুয়ারে ডাকে জাহাজ,
অচল ছবি সে, তসবির যেন দাঁড়ায়ে রয়েছে আজ।
হালে পানি নাই, পাল তার ওড়ে নাকো,
হে নাবিক! তুমি মিনতি আমার রাখো;
তুমি উঠে এসো, তুমি উঠে এসো মাঝি মাল্লার দলে
দেখবে তোমার কিশতি আবার ভেসেছে সাগর জলে,
নীল দরিয়ায় যেন সে পূর্ণ চাঁদ
মেঘ তরঙ্গ কেটে কেটে চলে ভেঙে চলে সব বাঁধ।
তবু তুমি জাগো, কখন সকাল ঝরেছে হাসনাহেনা
এখনো তোমার ঘুম ভাঙলো না? তবু, তুমি জাগলে না?
কবি তার লেখনির মাধ্যমে বারবার মানুষের অবচেতন মনকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। কিন্তু আমরা কি তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছি! মেলেছি অন্তর চক্ষু? অথচ কবি অবিরাম দেখে গেছেন একটি নতুন দিনের আলোময় স্বপ্ন। কবিতার মধ্যে দিয়ে খুঁজে দিতে চেয়েছেন বাঁচার পথ!

তিনি যেমন কবিতা লিখেছেন। তেমনই শিশু কিশোরদের জন্য লিখেছেন চমৎকার সব কালজয়ী শিশুতোষ গ্রন্থ।
এসব গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ পাখির বাসা (১৯৬৫), হরফের ছড়া (১৯৭০), চাঁদের আসর (১৯৭০), ছড়ার আসর (১৯৭০) ফুলের জলসা ইত্যাদি। তার লেখা ছড়ায় যেমন ছিল চিত্রকল্প, তেমনই ছিল নন্দিত সুন্দর ছন্দ মিল, অন্তমিল ও বাংলার চিরচেনা প্রাকৃতিক উপমার ব্যবহার। তার ছড়ার ভাষা ছিল সহজ সরল ও শ্রুতিমধুর। আমরা কবির বৃষ্টির ছড়া পাঠ করলেই সহজেই তা অনুধাবন করতে পারি। কবি লিখেছেনÑ
বৃষ্টি এলো কাঁশবনে
জাগল সাড়া ঘাস বনে,
বকের সারি কোথা রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে।
নদীতে নাই খেয়া যে,
ডাকল দূরে দেওয়া যে,
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটল আবার কেয়া যে।
গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,
বৃষ্টি বাদল দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে মেঘ দেখে,
যায় দাঁড়িয়ে পথ- ভোলা।
মেঘের আঁধার মন টানে,
যায় সে ছুটে কোন খানে,
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের দেশ পানে।
ছড়ার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় বাংলার চিরচেনা রূপ। খোঁজ মেলে প্রকৃতির চিত্রকল্প ও উপমা। সাহিত্য সাধনায় তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শিল্প সাহিত্যের চর্চা করে গেছেন কবি ফররুখ আহমদ। তথাকথিত আধুনিক কবিদের মতো না হয়েও ফররুখ আহমদ আধুনিক কবি। পশ্চিমা আধুনিক কবিদের রচনার আঙ্গিক ও বিশুদ্ধতা তার লেখাতেও দৃশ্যমান। ফররুখ আমাদের কাব্য সাহিত্যে আধুনিক উত্তরণে প্রকৃত সাহায্যটা করেছেন তার কাব্যভাষা এবং আঙ্গিকের প্রয়োগে। কবি লিখেছেন,
সময়-শাশ্বত, স্থির।
শুধু এই খঞ্জন চপল
গতিমান মুহূর্তেরা খর স্রোতে উদ্দাম, অধীর
মৌসুমী পাখির মতো দেখে এসে সমুদ্রের তীর,
সফেদ, জরদ, নীল বর্ণালীতে ভরে পৃথ্বীতল।
সন্ধ্যাগোধূলির রঙে জান্নাতের এই পাখী দল
জীবনের তপ্ত শ্বাসে, হৃদয়ের সান্নিধ্যে নিবিড়,
অচেনা আকাশ ছেড়ে পৃথিবীতে করে আসে ভীড়; গেয়ে যায় মুক্তকণ্ঠে মৃত্যুহীন সঙ্গীত উচ্ছল।
মুহূর্তের এ কবিতা, মুহূর্তের এই কলতান হয়তো পাবে না কণ্ঠে পরিপূর্ণ সে সুর সম্ভার, হয়তো পাবে না খুঁজে সাফল্যের, পথের সন্ধান, সামান্য সঞ্চয় নিয়ে যে চেয়েছে সমুদ্রের পার; তবু মনে রেখো তুমি নগণ্য এ ক্ষণিকের গান মিনারের দম্ভ ছেড়ে মূল্য চায় ধূলিকণিকার।

‘ফররুখ আহমদের গল্প’- শিরোনামে কবি ফররুখ আহমদের পাঁচটি গল্প নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় আবদুল মান্নান সৈয়দের সম্পাদনায় (জানুয়ারি ১৯৯০ সালে)। গ্রন্থ দেখে স্বভাবতই আমরা পুলকিত হই। শিহরিত হই, বিস্মিত হই। সংগীত, অনুবাদ, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, কবিতার পাশাপাশি ফররুখ আহমদ গল্পও লিখেছেন। বড় লেখকরা এভাবেই আবিষ্কৃত হন। আবিষ্কৃত হয় তাদের বহুমাত্রিকতা। উদ্ভাসিত হন নতুন শিল্প নৈপুণ্যের সমুজ্জ্বলতায়। নবরূপে উদ্ভাসিত হয়েছেন আমাদের মাঝে কবি।

ফররুখ আহমদের ক্ষেত্রে এ ভূমিকায় অগ্রণী ছিলেন কবি ও গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দ। কবির লেখা গল্পগুলোর শিরোনাম হচ্ছে, ‘মৃত বসুধা’, ‘বিবর্ণ’, ‘অন্তর্লীন’ও হতাশার গল্প, ‘যে পুতুল ডলির মা’ এবং ‘প্রছন্ন নায়িকা’। তবে উল্লেখ করতে হয়, ফররুখ আহমদের সবচেয়ে পরিণত ও শ্রেষ্ঠ গল্প হচ্ছে, ‘প্রছন্ন নায়িকা’। ভাষার বুনোটের দিক থেকে পাকা অনেক চরিত্রায়নের দিক থেকেও পাকা হাতের পরিচয় মেলে। প্রধান তিন চরিত্র- হারুণ, ওয়াজেদ ও সালমা- কে খুব স্বচ্ছ স্পষ্টভাবেই চেনা যায়। নায়ক হারুণ আদর্শবাদী, একটু বাম- ঘেঁষা, আবেগি আবার কঠোর।
ওয়াজেদ শাহেব আদর্শনিষ্ঠ, আত্মবিশ্বাসী, সর্বত্যাগী কর্মী। গল্পের নায়িকা সালেমা বেগম সন্তান পিপাসায় কাতর। গল্পের শেষটি একেবারে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়, যন্ত্রণায় দীর্ণ কিন্তু তারই মধ্যে হারুণ আবার সঞ্জীবিত-উজ্জীবিত হয়ে উঠবে, এ রকম একটি ইঙ্গিত আছে মনে হয়!

পাঁচটি গল্পেই অবক্ষয়, শীত, নাস্তির একচ্ছত্র রাজত্ব। ফররুখ যদি শুধু এই পাঁচটি গল্প লিখতেন তাহলে তাকে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা যেতো একজন শূন্যতাবাদী ও অবক্ষয়ী লেখক হিসেবে। কিন্তু তারপরও নিবিড় পাঠে দেখা যাবে (‘মৃত বসুধা’ ও ‘প্রচ্ছন্ন নায়িকা’ গল্পদ্বয় বিশেষভাবে স্মরণীয়) ফররুখ নিবির্চার ভোগবাদকে সমর্থন করেননি বরং তার বিরোধিতাই করেছেন। সমকালীন জীবনের ছাপ এসব গল্পে প্রবল-প্রচুর। ফররুখ আহমদের গল্প-ভাষা কি কবিতাক্রান্ত? এর জবাবও আবদুল মান্নান সৈয়দ তার ভূমিকায় প্রযুক্ত করেছেন, এই গল্পগুলি যখন লিখছেন ফররুখ, তখনো তিনি তো কবিতা লিখছেন। সুতরাং কবির রচনা যখন, তখন কাব্যকুশলতা তো প্রযুক্ত হবেই। হয়েছেও। এবং দেখা গেছে, ফররুখের এইসব কাব্যকুশলতা গদ্যকর্মেরই সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

ফররুখ আহমদের এ গল্পগুচ্ছ তার বহুমাত্রিকতা, বহুবিধতা, বহুচারণতার প্রতীক এবং আমাদের সাহিত্যের এক নতুন অনুসঙ্গ। ফররুখ আহমদকে জানার, তার সাহিত্য পৃথিবীকে উপলব্ধির আরেক সমুজ্জ্বল মাত্রা। তার পরিচয়ের পরিধিতে সম্প্রসারিত অন্য এক নতুন অথচ অচেনা ভূবন।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়! ফররুখ আহমদ কেন আর গল্পচর্চা করেননি? অবশ্য সেটি এক রহস্যই বটে। তবে, অনুমান করা যায়, ক্রমশ আদর্শবাদীতায় নিমজ্জিত ফররুখ তার আদর্শ উজ্জীবনের জন্য গল্প-উপন্যাসের চেয়ে হয়তো বা কবিতাকেই শ্রেষ্ট মাধ্যম বিবেচনা করায় কবিতাতেই সম্পূর্ণ আত্মমগ্ন হয়ে যান কবি।

ফররুখ আহমদ প্রথমে কলকাতার আইজি প্রিজন অফিস এবং সিভিল সাপ্লাই অফিসে কয়েক বছর চাকরি করেন। ১৯৪৫ সাল থেকে তিনি মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং দেশভাগের পর ঢাকায় এসে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে স্টাফ শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি জনপ্রিয় খেলাঘর অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। ফররুখ আহমদ ছাত্রাবস্থায়ই এম.এন. রায়ের র‌্যাডিক্যাল মানবতাবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু ধর্মীয় কুসংস্কার ও পাকিস্তানের অপরিণামদর্শী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কঠোর হাতে লেখনী পরিচালনা করেন।

আদর্শ ও মানবতাবোধ
জীবন ও মানবতাবোধ, জাতীয়তাবোধ এবং ইসলামী ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার প্রতি তার দ্বিধাহীন সমর্থন ছিল। বস্তুত ফররুখ আহমদ আবিষ্কার করেছেন অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ইসলামের সংগ্রামকে। সাম্যবাদ কিংবা গণতন্ত্রের চরম উদ্দেশ্য সামাজিক শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। ফররুখ ইসলামের আদর্শের সঙ্গে তা খুঁজে পেয়েছিলেন। এ কারণেই বঝি নিপীড়িতের হয়ে, অত্যাচারিতের হয়ে বারবার ধ্বনিত হয়েছে তার কলম ও কণ্ঠ। তাই তো কবি তার লাশ শিরোনামের কবিতায় লিখেছেনÑ
যেখানে প্রশস্ত পথ ঘুরে গেল মোড়,
কালো পিচ-ঢালা রঙে লাগে নাই ধূলির আঁচড়,
সেখানে পথের পাশে মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে জমিনের ‘পর;
সন্ধ্যার জনতা জানি কোনদিন রাখে না সে মৃতের খবর।
জানি মানুষের লাশ মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে ধরণীর ‘পর,
ক্ষুধিত অসাড় তনু বত্রিশ নাড়ীর তাপে প’ড়ে আছে নিঁসাড় নিথর,
পাশ দিয়ে চ’লে যায় সজ্জিত পিশাচ, নারী নর
পাথরের ঘর, মৃত্যু কারাগার,
সজ্জিতা নিপুণা নটী বারাঙ্গনা খুলিয়াছে দ্বার
মধুর ভাষণে,
পৃথিবী চষিছে কারা শোষণে, শাসনে
সাক্ষ্য তার রাজপথে জমিনের ‘পর
সাড়ে তিন হাত হাড় রচিতেছে মানুষের অন্তিম কবর।
প’ড়ে আছে মৃত মানবতা
তারি সাথে পথে মুখ গুঁজে।
আকাশ অদৃশ্য হ’ল দাম্ভিকের খিলানে, গম্বুজে
নিত্য স্ফীতোদর
এখানে মাটিতে এরা মুখ গুঁজে মরিতেছে ধরণীর ‘পর!
এ পাশব অমানুষী ত্রুর
নির্লজ্জ দস্যুর
পৈশাচিক লোভ
করিছে বিলোপ
শাশ্বত মানব-সত্তা, মানুষের প্রাপ্য অধিকার,
ক্ষুধিত মুখের গ্রাস কেড়ে নেয় রুধিয়া দুয়ার,
মানুষের হাড় দিয়ে তারা আজ গড়ে খেলাঘর;
সাক্ষ্য তার প’ড়ে আছে মুখ গুঁজে ধরণীর ‘পর।
স্ফীতোদর বর্বর সভ্যতা-এ পাশবিকতা,
শতাব্দীর ক্রূরতম এই অভিশাপ
বিষাইছে দিনের পৃথিবী।
রাত্রির আকাশ।
এ কোন সভ্যতা আজ মানুষের চরম সত্তাকে
করে পরিহাস?
কোন ইবলিস আজ মানুষেরে ফেলে মৃত্যুপাকে করে পরিহাস?
কবির এ কবিতার মধ্য দিয়েই আমরা তার জীবন, আদর্শ, মানবতাবোধ ও জাতীয়তাবোধ খুঁজে পাই।

সাত সাগরের মাঝি (ডিসেম্বর-১৯৪৪), সিরাজাম মুনীরা (সেপ্টেম্বর-১৯৫২), নৌফেল ও হাতেম (জুন-১৯৬১, কাব্যনাট্য), মুহূর্তের কবিতা (সেপ্টেম্বর-১৯৬৩), ধোলাই কাব্য (জানুয়ারি, ১৯৬৩), হাতেম তায়ী (মে-১৯৬৬, কাহিনীকাব্য), নতুন লেখা (১৯৬৯), কাফেলা (আগস্ট-১৯৮০), হাবিদা মরুর কাহিনী (সেপ্টেম্বর-১৯৮১), সিন্দাবাদ (অক্টোবর-১৯৮৩), দিলরুবা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪) ইত্যাদি।

পুরস্কার
কবি ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানে জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০), প্রেসিডেন্ট পুরস্কার প্রাইড অব পারফরমেন্স (১৯৬১), আদমজী পুরস্কার (১৯৬৬), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৬), মরণোত্তর একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮০) লাভ করেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় তাকে সম্মানিত করা হয়। ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন রেনেসাঁ কবি ফররুখ আহমদ।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper