স্বপ্নবাজদের আলোর দিশা
আশিকুর রহমান
🕐 ৩:১২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই। সেই অন্ধকারে থাকা বইকে যুগে যুগে গুটি কয়েক পলান সরকারের ন্যায় ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ আলোকিত করেছেন। বইকে তারা বেছে নিয়েছেন জীবন বদলের হাতিয়ার হিসেবে। ফলে মানুষ ইতিবাচকতার চর্চার দিকে ধাবিত হয়েছে। হ্যাঁ, গল্প বলছি ‘আলোর দিশা’র কিছু স্বপ্নবাজদের। যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অনবরত ছুটে চলেছেন অন্যকে বই পড়ানোর নেশায়। সব পাঠকের হাতে পছন্দের বই তুলে দেওয়ার মাঝেই যেন তাদের আত্মার প্রশান্তি।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র রাসেল মুরাদের নেতৃত্বে ‘আলোর দিশা’ এখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তুলেছে ফ্রিতে বই বিলির কার্যক্রম। নিয়মিত শতাধিক শিক্ষার্থীরা পছন্দের বই নিয়ে পড়ছেন আবার ফেরতও দিচ্ছেন একদম বিনা পয়সায়। তাদের সংগ্রহে হালের লেখকদের বইসহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- সবার বই আছে। এছাড়া বেশকিছু ধর্মীয় বইপুস্তক, সাইন্স ফিকশন, ইতিহাস, দর্শন ও আত্ম-উন্নয়নমূলকসহ রয়েছে অসংখ্য বইয়ের সমাহার। পরিচালক রাসেল মুরাদ জানান, পছন্দের বই হাতের নাগালে পাওয়ায় দিনে দিনে অনেক নতুন পাঠক তৈরি হয়েছে। এছাড়া বই পাগল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ে রিভিউ দেওয়ার এক মৌন প্রতিযোগিতা চলছে।
বিভিন্ন হলে ও বিভাগে গিয়ে কড়া নেড়ে বই দেওয়া এবং তা আবার সপ্তাহখানেক বাদে ফেরত নেওয়ার মাঝেই অধিকাংশ সময় কাটে তাদের। কাজগুলো সম্পন্ন করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। কারণ জামশেদ, মাইদুল, নিপা, মেহেদী ও আশিকের মতো অনেকেই আছেন; যারা সুযোগ পেলেই বইয়ের ফেরি করেন। কখনোবা তীব্র্র রোদে ডায়না চত্বরে অন্যের হাতে বই তুলে দেওয়ার অপেক্ষা! প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বসানো হয় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। এছাড়া অনলাইন গ্রুপে বা কল দেওয়া মাত্রই সরবরাহ করা হয় পছন্দের বই। শুধু কি তাই, নিয়মিত পাঠচক্র, বুক রিভিউ ও লেখনি প্রতিযোগিতা, সভা-সেমিনারসহ আয়োজন করা হয় বিভিন্ন যুগোপযুগী অনুষ্ঠান। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গিয়ে মানুষকে বই পড়তে উৎসাহিত করে এসব স্বপ্নবাজরা। আবার কার্যক্রমগুলো ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে। এতে অন্যরাও দারুণ উদ্দীপ্ত হচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যখন করোনাভাইরাসে পর্যুদস্ত; তখন তারা ব্যস্ত বিভিন্ন অনলাইন টক শো নিয়ে। সেখানে আমন্ত্রণ করা হচ্ছে দেশ-বিদেশের অনেক গুণী মানুষদের। তারা বই পড়া ও লেখনির প্রয়োজনীয়তা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা ও উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করছেন। যা ইতোমধ্যে ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এভাবেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলছেন পলান সরকারের উত্তরসূরিরা। তারা সবাই বই বিলি করার কাজটা সারাজীবন চালিয়ে যেতে চান যাতে মানুষ আনন্দময় এই জগতের খোঁজ পায়।