ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

১৮ বছর পর স্বজনদের খোঁজ পেলো আসমা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
🕐 ২:৩৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০

সিনেমায় নায়ক নায়িকাদের আজগুবি হারিয়ে যাওয়া ও ফিরে পাওয়ার গল্প নিয়ে অনেক হাসি ঠাট্টা হয়। এবার শুনুন এক সত্যিকারের হারিয়ে যাওয়া ফিরে পাওয়ার গল্প। আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০২ সালে চট্টগ্রামে হারিয়ে যাওয়া আসমা নামের এক শিশুকে বাসায় কাজ করাতে পথ থেকে নিয়ে যায় স্থানীয় এক পরিবার। একদিন মারধর করলে সে আবার পথে বেরিয়ে পড়ে।

পরে নোয়াখালীর জনৈকা ফেরদৌসী কান্নারত আসমাকে কয়েকদিন নিজের হেফাজতে রাখেন। কিন্তু কেউ খোঁজ খবর করছে না দেখে তিনি আসমাকে নিয়ে আসেন নিজের এলাকা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর গ্রামে।

তারপর নিয়তি তাকে বিভিন্ন যায়গায় টেনে নিয়েছে। পাঁচ বছর ছিলো নোয়াখালীর টেলিফোন বিভাগের কর্মকর্তা ফরহাদ কিসলু'র বাসায়। এরপর আরো দুই বাসায় আরো ছয় বছর থেকে পুনরায় ফরহাদ কিসলু'র বাসায় ফিরে আসে। ফরহাদ কিসলু'র সহধর্মিণী ফাতেমা জোহরা সীমা আসমাকে তার বাবার বাড়ি একলাসপুরে পাঠিয়ে দেন।

তখন ফাতেমা জোহরা সীমা'র বাবার বাড়িতে গৃহ নির্মাণের কাজ চলছিলো। ডানপিটে আসমার সাথে এক নির্মাণ শ্রমিকের হৃদয়ের আদান প্রদান ঘটলে তারা পালিয়ে যায় চট্টগ্রামে। সেখানে তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় আসমা।

কখনো সুখে কখনো স্বামীর অত্যাচারে জীবন বয়ে যাচ্ছিলো। হঠাত স্বামী প্রবাসে চলে গেলে আবার নোয়াখালীতে ফিরে আসে আসমা। আশ্রয় নেয় পুনরায় ফরহাদ কিসলু'র বাসায়।

এবার জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফিরে আসা আসমাকে কীভাবে শেকড়ের খোঁজ পাওয়া যায় এ জন্য ফরহাদ কিসলুর স্ত্রী সীমা স্থানীয় সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সহযোগিতা চান নড়াই গ্রাম, ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলা এটুকু সূত্র ধরে।
সাংবাদিক মিঠু ব্রাক্ষনবাড়িয়া নবীনগরের বিটিভি ও ইত্তেফাক প্রতিনিধির মাধ্যমে তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় খুঁজে পান আসমার পরিবারকে!

পুরো ঘটনাটির নিজ চোখে দেখা মানবিক সংগঠক সুমন নুর জানান, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও কলে কথা হয় আসমার মা, ভাইয়ের সাথে। সে এক আবেগপূর্ণ দৃশ্য! দীর্ঘ আঠারো বছর পরে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে দেখে আসমার মা, বোনকে দেখে আসমার ভাই আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। এদিকে আসমারও যেনো মুখে কথা ফুটে না। শীঘ্রই আসমাকে নিতে আসবেন তার ভাই স্থানীয় একজন মাতব্বরকে নিয়ে।

এদিকে, দীর্ঘ ১৮ বছর পর হারিয়ে একটা মেয়ে সিনেমাটিকভাবে তার মা ভাইসহ পরিবারকে ফিরে পাওয়ার নেপথ্য কারিগর ফাতেমা জোহরা সীমা ও সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুকে সবাই সাধুবাদ জানাচ্ছেন। তাদের দুইজনের এই অসাধ্য সাধন একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

 
Electronic Paper