বিপৎসীমার উপরে চার নদীর পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
দেশের মধ্যে ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। বর্তমানে চারটি নদীর পানি চারটি স্টেশনে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৪৬ মিলিমিটার, যমুনার পানি সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৪ মিলিমিটার, গুড়ের পানি সিংড়া পয়েন্টে ৫২ মিলিমিটার এবং জাদুকাটা নদীর পানি লরেরগড় পয়েন্টে ১৪৫ মিলিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণাধীন পানি স্টেশনগুলোর মধ্যে ৬৬টি স্টেশনে পানি বেড়েছে। ৩২টির কমছে এবং ৩টির অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে। তারা আরও বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে যমুনা নদীর পানি বাড়তে পারে।
পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজান মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, তা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের লরেরগড়ে ২০০ মিলিমিটার, পঞ্চগড়ে ৭৭, নারায়ণহাটে ৬২, দুর্গাপুরে ১১৬, পাঁচপুকুরিয়ায় ৬৯, চট্টগ্রামে ৫৯, জাফলংয়ে ৯৪, মহেশখোরায় ৬৮, রাঙ্গামাটিতে ৫৮, ডালিয়ায় ৮৫, লালাখালে ৬৫ ও নাকুয়াগাঁওয়ে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সময়ে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের উজানে, অর্থাৎ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৪২৪, শিলংয়ে ২৪৫ ও পাসিঘাটে ৭২ মিলিমিটার।
ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা বহাল : উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় দেশের সব সমুদ্রবন্দরে জারি করা সতর্কতা শুক্রবারও বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদফতর। অধিদফতরের সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়।
কুড়িগ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : ভারী বৃষ্টিতে উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে কুড়িগ্রামের নি¤œাঞ্চল। সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে ধরলার পানি। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তার ভাঙন। ৫ম দফা বন্যায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ।
সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, এ বছর বন্যায় নদীপাড়ের মানুষ খুবই কষ্টে দিনে পার করছে। পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই আবার বন্যার পানি এসে ফসলসহ ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। এছাড়াও আমার ইউনিয়নের গত দুই সপ্তাহে অনন্ত শতাধিক ঘরবাড়ি ধরলা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। দু-একদিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। আর এই মুহূর্তে যেসব এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে সেসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকানো চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আশা করছি পানি কমে গেলে ভাঙনও কমে আসবে।