বহুমুখী সংকটে বান্দরবানের তুলা গবেষণা কেন্দ্র
তানজেরুল ইসলাম ও কৌশিক দাশ, বান্দরবান
🕐 ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
দেশে প্রতি বছর তুলার চাহিদা ৮৫-৯০ লাখ বেল। তবে চাহিদার তুলনায় এ দেশে বার্ষিক তুলা উৎপাদন মাত্র ২০-২৫ লাখ বেল। আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। এই শিল্পের ক্রমবিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সুতা ও সুতা তৈরির কাঁচামালের চাহিদা। গত পনেরো বছরের তুলনায় দেশে তুলার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।
অথচ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অত্যন্ত কম বলে আপাতত তুলা আমদানির বিকল্প পথ খোলা নেই। যদিও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অধীন দেশের পাঁচটি জেলায় তুলা গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। তবে বহুমুখী সংকটে ভুগছে কেন্দ্রগুলো। এসব গবেষণা কেন্দ্র থেকে গত এক দশকে তুলার কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবিত হলেও মাঠ পর্যায়ে সে ফসল তুলতে পারেনি তুলা চাষিরা।
জানা গেছে, দেশে পাঁচটি তুলা গবেষণা কেন্দ্রের মধ্য বান্দরবানে ‘পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্র’ একটি। ১৯৯২ সালে এই গবেষণা কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। গবেষণা কেন্দ্রটির আয়তন সাড়ে ১৫ একর। এই কেন্দ্র থেকে তুলার নতুন জাত উদ্ভাবন, তুলা চাষ বৃদ্ধিতে চাষিদের প্রশিক্ষণসহ তুলা উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া কথা।
তবে বহুমুখী সংকটে গবেষণা কেন্দ্রটির স্বাভাবিক কার্যক্রমেও অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অথচ এসব সংকট সত্ত্বেও ২০১৯ সালে বান্দরবানে ২১০০ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন হয়েছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলায় মোট তুলা চাষি ১২০০ জন। তবে চাষিদের মতে, জেলায় নিয়মিত তুলা চাষির সংখ্যা আরও অনেক কম।
বান্দরবান পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গবেষণা কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন পদে জনবল ৩৭ জন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন। ওই কেন্দ্রটির বাকি ১৭ জন জনবল প্রেষণে (ডেপুটেশন) বিভিন্ন জেলায় কর্মরত আছেন। কেন্দ্রটির আওতায় সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে বর্তমানে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া জেলা কার্যালয়ের অধীনে মাত্র ২০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গবেষণাধর্মী এই কেন্দ্রটিতে গবেষক আছেন মাত্র দুইজন।
পরীক্ষাগারে পরীক্ষা কাজে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব দীর্ঘদিনের। অথচ এত সংকট সত্ত্বেও কেন্দ্রটি থেকে বিগত দিনে এইচ সি-১, এইচ সি-২, এইচ সি-৩ নামে তিনটি তুলার নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে।
বান্দরবান পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মংসানু মারমা দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্রটি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অধীন রাজস্ব খাতে যাওয়ার পর বর্তমান জনবল কাঠামো (অর্গনোগ্রাম) কি তিনি জানেন না। পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্র একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
গবেষণার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ গবেষক ও সহকারী গবেষক। বর্তমানে মাত্র দুজন গবেষক দিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালানো কষ্টকর। কেন্দ্রটি থেকে প্রতি বছর ৩০ জনকে তুলা চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও ঋণ প্রদানের সুযোগ নেই। তবে বান্দরবান জেলা কার্যালয় থেকে অদ্যাবধি ১৩টি প্রশিক্ষণ পর্ব শেষে চাষিদের ঋণ প্রদান করা হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা।