ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও এক ধাপ আগালো

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৬:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

কক্সবাজার জেলার মহেষখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১৮.৫ মিটার গভীরতার বন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে আরো এক ধাপ অগ্রসর হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাপানের নিপ্পন কোয়ে যৌথ কোম্পানি এবং জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড যৌথ কোম্পানি দু’টিকে প্রকল্পটির পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দু’টির সাথে চুক্তির মাধ্যমে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটির কার্যক্রমে আরো এক ধাপ অগ্রসর হচ্ছে।

নিপ্পন কোয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকল্পের যাবতীয় ডিজাইন ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি এবং অবকাঠামোগত নির্মাণের বিষয়গুলো মনিটরিং এবং তদারকি করা হবে। পরবর্তিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বন্দর চালু করে দেওয়ার বিষয়টি সমন্বয় করবে। বন্দর চালু হওয়ার এক বছর পর্যন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সব ধরণের সাপোর্ট দেবে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে ২৩৪ কোটি টাকা দেয়া হবে। ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পের (বন্দর সংযোগ সড়ক অংশ) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কার্যক্রম সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করবে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে ৪৬৬ কোটি টাকা দেয়া হবে।

বুধবার ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এসংক্রান্ত দু’টি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রকল্প পরিচালক জাফর আলম এবং জাপানের নিপ্পন কোয়ের (NIPPON KOEI) প্রতিনিধি নাওকি কুডো (NAOKI KUDO) প্রকৌশলগত বিষয়ের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (বন্দর সংযোগ সড়ক অংশ) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের (আরএইচডি) কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রকল্প পরিচালক মো. সাদেকুল ইসলাম এবং জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি শুনজি ইউশিহারা (SHUNJI YOSHIHARA) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি যথাক্রমে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসাবে ভার্চুয়াল লাইনে সংযুক্ত ছিলেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন, জাইকার চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউহো হায়াকাওয়া (YUHO HAYAKAWA) বাংলাদেশস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইকি ইয়ামায়া (HIROYUKI YAMAYA) উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে আমাদের অধিকার আরো বেশি শক্তিশালি হবে। সুনীল অর্থনীতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে মাতারবাড়ী বন্দর নতুন উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র সম্পদ ও বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাতারবাড়ী বন্দর সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। মাতারবাড়ী বন্দরের বাস্তবায়ন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

মাতারবাড়ী বন্দরের প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রম ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে মাতারবাড়ী বন্দরে ১৮.৫ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে এবং প্রায় ৮ হাজার টিইইউ’স কন্টেইনার (বিশ ফুট দৈর্ঘের কন্টেইনার) নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে মাতারবাড়ী বন্দরে। ফলে সামগ্রিক পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে আনুমানিক ১৫ শতাংশ। মাতারবাড়ী বন্দর সড়ক, রেল ও নদীপথ দিয়ে সংযুক্ত থাকবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে একটি সুপরিকল্পিত কানেক্টিভিটি গড়ে উঠবে। যার ফলে যেকোন পণ্য সহজে এবং কম খরচেই পৌঁছে যাবে আমদানি-রপ্তানিকারকেদের দোরগোড়ায়। এ বন্দর দিয়ে কয়লা, লিক্যুয়িড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি), অপরিশোধিত তেল ও তেল পণ্য, সিমেন্ট, ক্লিঙ্কার, সার, খাদ্যশস্য, স্টিলপণ্য এবং স্ক্র্যাপ লোহা আমদানি সহজতর হবে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ী ও ধলঘাট এলাকায় বন্দরটি নির্মিত হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করবে। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭,৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২,৮৯২ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২,২১৩ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকারের ২,৬৭১ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ী বন্দরের অংশ এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সড়ক অংশ বাস্তবায়ন করবে।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় জাইকার অর্থায়নে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গভীর সমুদ্রবন্দরের সুযোগ তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাতারবাড়ী বন্দর দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ঘুচিয়ে দিতে যাচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা এটিকে ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করেন। প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১০ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদিত হয় ।

 
Electronic Paper