ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টায় সোহান
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ৩:২৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
উইকেটকিপার আর প্রথম স্লিপের ক্যাচ প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। কিপিং করছেন নুরুল হাসান সোহান আর স্লিপে দাঁড়িয়ে লিটন দাস! এই ছবিটা কি কোনো বার্তা দেয়? গত বছর ভারত সফর থেকে টেস্টে নিয়মিত উইকেটকিপিং করছেন লিটন। শ্রীলঙ্কা সফর যদি হয়, তাহলে কি সোহানকে নিয়ে নতুন চিন্তা আছে টিম ম্যানেজমেন্টের?
দলীয় সূত্রে যা জানা যায়, তাতে বলাই যায়, এবারও সোহানের বড় কোনো সুখবর নেই! থাকবে কী করে, দলে তিনজন উইকেটকিপিং অলরাউন্ডার আছেন মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস আর মোহাম্মদ মিঠুন। তিনজনই দলের ব্যাটিং লাইনআপে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে তারা উইকেটকিপিংয়েও দক্ষ। মুশফিক, লিটন, মিঠুনের ভিড়ে নুরুলের সম্ভাবনা তাই নেই বললেই চলে। টিম ম্যানেজমেন্ট বরং তাকে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে খুব ‘ভালো বিকল্প’ হিসেবে বিবেচনা করছে। মজাটা হচ্ছে- যদি টিম ম্যানেজমেন্টকে প্রশ্ন করা হয়, উল্লিখিত চার উইকেটকিপারের মধ্যে সবচেয়ে ভালো কিপিং করেন কে? সোহানের নামটাই আগে আসবে নিশ্চিত।
তবুও মূল স্কোয়াডে সোহানের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাটা কমে যায় অলরাউন্ডার প্রশ্নে। আধুনিক ক্রিকেটে শুধু উইকেটকিপার নিয়ে খেলতে চায় না বেশির ভাগ দলই। সব দলই এমন উইকেটকিপার নিতে চায়, যিনি ব্যাটিংও ভালো করতে পারবেন।
নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেন, ‘মুশফিক-লিটন কিপিং করলে হয় কী, একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান বা বোলার নিয়ে খেলা যায়। সোহান (নুরুল) যে ব্যাটিংয়ে খারাপ, সেটিও বলা যাবে না। তবে তুলনা করলে ওর চেয়ে মুশফিক-লিটনকে এগিয়ে রাখতে হবে। শুধু কিপার হিসেবে সোহানকে এগিয়ে রাখা যায়। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট যে চায় কিপিং-অলরাউন্ডার।’
জুলাইয়ে খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ব্যক্তিগত অনুশীলন শুরু করেছিলেন সোহান। পরের মাসে চলে আসেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। মিরপুরে যারা অনুশীলন করেছে বেশির ভাগই এগিয়েছেন শ্রীলঙ্কা সিরিজ সামনে রেখে। সোহানের অবশ্য বাংলাদেশ দলে সুযোগ পাওয়ার ভাবনাটা কাজ করেনি। তিনি ভালো করেই জানেন, মিরপুরের অনুশীলনে খেলোয়াড় সংখ্যা বেশি, মাঠে কিংবা জিমে সময় খুব বেশি বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। তবুও মিরপুরে চলে আসা কারণটা কী? জানতে চাইলে সোহান বলেন, ‘হাই-ইনটেনসিটি প্র্যাকটিস কিংবা একটা শৃঙ্খলার মধ্যে অনুশীলন করার লক্ষ্যে ঢাকায় চলে আসা। মিরপুরে সময় কম পেলেও এখানে ইনটেনসিটি বেশি। খুলনায় থাকতে এটাই মনে হচ্ছিল। মিরপুরে সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে সবকিছুই বেশি।’
ঢাকার সুরক্ষা বলয়ে থাকলেও কলম্বোগামী ফ্লাইটে (যদি সফরটা হয়) তার ওঠা হবে কিনা, সেটি জানা যাবে শিগগির। তবে সোহান এত কিছু ভাবতে চান না। তিনি মনোযোগী নিজের কাজটা নিয়ে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে গিয়ে মাহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে সোহানের দেখা হওয়ার ঘটনাটা নিশ্চয়ই জানা। ভালো ফিনিশার হতে কী করণীয়, নুরুলকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন ধোনি।
সাবেক ভারতীয় অধিনায়কের পরামর্শ গত তিন বছরে কতটা কাজে লাগিয়েছেন- সেটিই বলছিলেন সোহান, ‘ধোনিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতে মানসিকভাবে কীভাবে সে তৈরি থাকে। সে একটা কথাই বলছিল, নিজের শক্তির ওপর আস্থা রাখা। যদি ৮-১০টা বল পাও, ওই আত্মবিশ্বাস রাখা যেন শুরুতে ঝুঁকি না নিয়ে শেষ ২-৩ বলে স্ট্রাইকরেট দ্বিগুণ করে ফেলা যায়। শুরুতে নিজের মতো খেলা, নিজের শক্তির ওপর ভরসা করা। ওর কথা থেকে আমার ভাবনাটা বদলেছে। আগে ভাবতাম যেয়েই মারতে হবে। একটা বলও মিস করা যাবে না! এখন সেটা বেশ বদলেছে। ফিনিশিংয়ে ভূমিকা ঠিক রাখতে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
জাতীয় দলের নিয়মিত সুযোগ পাওয়ার লক্ষ্যেই নিজেকে দুর্দান্ত ফিনিশার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান সোহান। তবুও যদি না খোলে বাংলাদেশ দলের দরজা, সেটি নিয়েও খুব বেশি ভাবতে চান না ২৬ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার।
তিনি বলেন, ‘একটা সময় এটা খুব কাজ করত (বাংলাদেশ দলে সুযোগ না পাওয়ার হতাশা)। পরে ভাবলাম নিজের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হলে সেটির প্রভাব ঘরোয়া ক্রিকেটেও পড়বে। নিজেকে উদ্বুদ্ধ করি এভাবেই, নিজের প্রতি সৎ থাকা। যেখানেই খেলি না কেন শতভাগ চেষ্টা করব। কোথায় খেলছি, এটা নিয়ে বেশি ভাবলে সব ক্রিকেটে এটার প্রভাব পড়বে।’