ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজনীতিতে হাইব্রিডদের দাপট

সাব্বির আহমেদ সুবীর
🕐 ১:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

দেশে রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত নতুন মুখ আসছে; কিন্তু পুরনোরা মনেপ্রাণে ভালোবেসে দলকে আঁকড়ে ধরলেও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে বেশি দর কষাকষিতে যেতে পারছেন না। যে কারণে তারা দলে থাকলেও বড় কোনো পদে বা আদৌ কোনো পদে থাকছেন না। আর এই পদগুলো দিন দিন নতুনরা দখল করে নিচ্ছে। অবশ্য এমনটি হওয়া খুব বেশি অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। প্রকৃতির নিয়মে প্রবীণরা সক্রিয় কাজকর্ম থেকে কিছুটা সরে যাবেন, আর তাদের স্থান দখল করবে নতুন ও তরুণ কর্মীরা। প্রবীণ, নীতিবান, দলের প্রতি নিষ্ঠাবান কর্মী দলকে ভালোবেসে তা আঁকড়ে ধরলেও মাঠপর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসবে তরুণ, উদ্যমী ও দলকে ভালোবাসে এমন একদল নতুন নেতাকর্মী। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের নামে এক ধরনের হাইব্রিড নেতাদের আসতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী, সুবিধাভোগী হাইব্রিডদের প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে। যা একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বাধীনতার চেতনায় নিবেদিত দলের জন্য উদ্বেগজনক।

দেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের এবং স্বাধীনতার চেতনার পক্ষের প্রবীণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে গত এক দশকে নতুন অনেক নেতাকর্মী যোগ হয়েছে। আর এই নতুন নেতাকর্মীদের মাঝে কিছু হাইব্রিড নেতাকর্মীও জুটেছে। এই হাইব্রিড নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগ এমনকি অতীতে যেসব দল ক্ষমতায় ছিল, তাদেরকেও বিভিন্ন সময়ে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। এই হাইব্রিড নেতাকর্মীরা মূলত সুবিধাভোগী হিসেবেই দলে প্রবেশ করে এবং নিজেদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার দলের সদস্য হিসেবে ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে নিজেদের ফায়দা লুটে। এতে দলের দুর্নাম হয়, ত্যাগী নেতাদের সুনামের হানি ঘটে, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ফল হিসেবে তাদের মাঝে হতাশা ও বঞ্চনার সৃষ্টি হয় এবং পরিশেষে ক্ষোভ জেগে ওঠে। যা একটি জনগণতান্ত্রিক দলের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। এতে করে সরকার পরিচালনাকারী একটি অংশ অনেক বিভাগে অকর্মণ্য হয়ে পড়ে এবং সরকারের নীতিমালা প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি হয়। জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল বা সরকার ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। 

আমরা দেখেছি বিএনপি শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র কোনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না থেকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানাভাবে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সরকারি অনেক কর্মে বিশেষ করে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তিনি অনেকটা শেয়ারহোল্ডারের মতো কাজ করছিলেন। সরকার ও মন্ত্রী পরিষদের নেওয়া অনেক উন্নয়নমূলক কাজে তিনি বিভিন্ন ঠিকাদার এবং বাস্তবায়নকারী কমিটির কাছ থেকে নানা উপায়ে বখরা নিতেন। এতে উন্নয়নকর্ম গতিহীন হয়ে পড়েছিল এবং উন্নয়ন বাস্তবায়নকারী কমিটি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। শুধু তাই নয়, দলকে নিজের খেয়াল খুশিমতো পরিচালনার জন্য অনেক সৎ, নিষ্ঠাবান, নির্লোভ নেতাকর্মী নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। সরকারি নীতি ও দলীয় নীতি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। তবে এ ধারা শুধু যে বিএনপির সময় ঘটেছিল, এমনটি নয়। অন্যান্য সরকারের আমলেও ঘটেছে। তাদের সময়েও সরকারি নীতি ও দলীয় নীতি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাতে তখনকার সরকারের বদনাম হয়েছে। ইতিহাস তার সাক্ষী। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির এ যুগে আমরা ইচ্ছে করলে খুব সহজেই এ বিষয়ক তথ্য ও ইতিহাস জানতে পারি।

চলতি সময়েও আওয়ামী লীগের ভেতর অনেক হাইব্রিড নেতাকর্মী ঢুকে পড়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই দল ক্ষমতায় থাকায় অনেক সদস্য নানা উপায়ে ও অজুহাতে এই দলে ঢুকে পড়েছে। এদের মধ্যে কিছু সৎ মানুষ থাকলেও সুবিধাভোগী, নিজ স্বার্থ আদায়কারীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে।

কিছুদিন আগে পাপিয়া নামের একজনকে দেশের পুলিশবাহিনী ও র‌্যাব গ্রেফতার করে। তার প্রকৃত নাম শামিমা নূর পাপিয়া। তিনি নিজেকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের নেত্রী পরিচয় দিতেন। হাইব্রিড নেতাদের মধ্যে তিনি একজন। এসব নেতারা নিজেদের গায়ের জোরে স্থানীয় পর্যায়ে নেতা হয়ে যান। অনেক সময় কেন্দ্রে নিজের প্রভাব খাটিয়ে বা বিশেষ লাইনঘাট করে স্থানীয় পর্যায়ে নেতা বনে যান। এসব হাইব্রিড নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে খুব একটা কাজ করেন না বরং স্থানীয় নেতাকর্মীদের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে বাধার সৃষ্টি করেন। বলা যায়, পেশীশক্তি বেশি থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে তারা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো কাজ করতে থাকেন। অনেক সময় এসব কাজ বিশেষ কোনো সুবিধাভোগীর স্বার্থে যায় এবং এসব হাইব্রিড নেতারা সেখান থেকে নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়। শুধু তাই নয়, পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরী মাদক ব্যবসা, বেআইনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে র‌্যাব কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে জানা যায়- যা দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশ পায়। আর এসবের সামগ্রিক দুর্নাম ছড়াতে থাকে দলের ওপর। কখনো এসব হাইব্রিড নেতাদের অপকর্ম এতটাই বেড়ে যায় যে তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আর সেজন্য দেশের মানুষ সংশ্লিষ্ট দলের দিকে আঙুল তুলে।

গত বছর সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দল দেশে অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে নামেন। এ সময় তারা এস এম গোলাম কিবরিয়াকে গ্রেফতার করেন। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। র‌্যাব অভিযান চালিয়ে তার অফিসে যে সমস্ত বিদেশি মদ, এফডিআর, নগদ অর্থ, ডলার ও সিঙ্গাপুরী ডলার পেয়েছেন তা একজন সত্যিকারের কর্মীর আয়ত্তে থাকার কথা নয়। এসব ঘটনা দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম দলের সুনাম অক্ষুণ রাখে না যদিও দল তাকে তাদের কর্মী বা নেতা হিসেবে অস্বীকার করেছে। কারণ তিনি এতদিন এ পরিচয়েই চলতেন।

এ পরিচয়েই তার যাবতীয় কাজ চলত। এসব হাইব্রিড নেতাকর্মীরা দলে থাকলে সেই দলের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু থাকে তা বিবেচনা করাও কঠিন। এমন ধরনের হাই-প্রোফাইলধারী নেতাকর্মী দলে থাকলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলের জন্য কাজ করার আত্মত্যাগের মনোভাব অনেকটাই প্রচ্ছন্ন হয়ে আসে এবং কিছুটা থাকলেও সেই মনোভাব জোরাল হয় না। আর এসব উঁচু সারির নেতা কখনো দেশের সাধারণ মানুষের দুর্যোগে বা বিপদে এগিয়ে আসার মতো কোনো অবদান রাখেন না। তাছাড়া সাধারণ মানুষ ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাদের কাছাকাছিও যেতে পারেন না। ফলে দলের নির্বাচনী ইশতেহার ও দেশের উন্নয়ন অবকাঠামো অকার্যকর হয়ে পড়ে। বিভিন্ন অজুহাতে ও সুযোগে এসব হাইব্রিড নেতাকর্মী দলে ঢুকে পড়ে গোপনে গোপনে নিজেদের স্বার্থ আদায়ে সক্রিয় হয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কোনো অভিযোগও নিয়ে যেতে পারেন না। ফল হিসেবে দলের সুনাম ক্ষুণ হতে থাকে।

গত বছর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে আরো কিছু বিশেষ ব্যক্তি ধরা পড়েন। তাদের অনেকেই নিজেদের আওয়ামী লীগের বড় বড় পদের নেতা বলে পরিচয় দিতেন। এদের মধ্যে আরো অনেক পরিচিত মুখ রয়েছেন যারা ছাত্রনেতা বা যুবলীগ নেতা হয়ে অল্প ক’দিনেই অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নাম একসময় জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রথম পাতায় স্থান করে নিত। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে এদের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করা হয়। কিছুদিন আগে সাহেদ নামটি সারা দেশের মানুষের নজরে আসে। রাজধানীর একটি সুপরিচিত হাসপাতাল রিজেন্ট-এর মালিক সাহেদ। রিজেন্ট নামেও অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তার। তার মতো হাইব্রিড ক্ষমতাবান বোধ হয় এ বছর আর কেউ হতে পারেন নি, অন্তত মিডিয়ায় চাউর হতে পারেন নি।

তিনি তার হাসপাতালে করোনা রোগের টেস্ট করানোর ব্যবস্থা নেন। রোগীর বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করানোর কথা বলে সরকারের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েও প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে করোনা টেস্ট বাবদ ৫/৬ হাজার টাকা নেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তিনি সরকারের নজরে পড়ে যান। পরে আরও প্রকাশ হয় যে তার পরিচালিত রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার কোনো সরঞ্জামই নেই! মানুষের রক্ত টিউবে নিয়ে বাথরুমে বালতিতে রাখা হতো, পরে কিনা তা ফেলে দেওয়া হতো। মানুষকে তাদের ইচ্ছেমতো নেগেটিভ বা পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া হতো। এর কিছুদিন পরে অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ বেরিয়ে আসে। সরকারি ও বেসরকারি প্রচার মাধ্যমগুলোতে দেখা যায় তিনি আরও অনেক ধরনের অপরাধকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এটি তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে; কারণ বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তার সঙ্গে ছবি (সেলফি) উঠিয়ে সেগুলো মানুষকে দেখাতেন এবং ফায়দা লুটতেন। এ ছাড়াও তার নিয়মিত একটি বহুমুখী অপরাধ সংঘটন দল ছিল, তাদের মাধ্যমেও তিনি অনেক অপরাধকর্ম করতেন। যেদিন থেকে তিনি জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান করে নেন, সেদিন থেকেই তার একের পর এক অপরাধ কাহিনি বেরিয়ে আসতে থাকে। তিনি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহন না করলেও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনেক ছবি তুলেছেন। যেগুলো সম্প্রতি ইউটিউবে ও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আজকের দিনে সেলফোনে সেলফি তোলা খুব সহজ ও সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নামী ও ক্ষমতাবান মানুষদের সঙ্গে ছবি তুলে মানুষকে দেখিয়ে সহজেই তাদের আস্থাভাজন হওয়া যায়। তিনি এই কৌশল প্রয়োগ করে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

এই হাইব্রিড ক্ষমতাবান নেতাকর্মীরা আমাদের সমাজে আজ বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি যেমন সাধারণ মানুষদের কাছে ক্ষতিকর তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর দেশের জন্যও ক্ষতিকর। তাদের মাধ্যমে যে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের প্রশাসন তাদের কাছে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের ফাঁদে পা দিতে পারে। তবে এসব হাইব্রিড নেতাকর্মীরা শুধু বর্তমান সময়েই নয়, বেশ আগে থেকেই তৈরি হতে শুরু করেছে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেদিন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে তার দলে নিলেন, সেদিন থেকেই এসব হাইব্রিড নেতাদের জন্ম হওয়া শুরু হয়। তবে এরও একটি অবস্থান আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হেনরি কিসিঞ্জারের কর্মজীবন পাঠ করলে দেখা যায় তাকে সেক্রেটারি অব ডিফেন্স বানানো দরকার ছিল, কিন্তু তাকে বানানো হয়েছে সেক্রেটারি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স বা বৈদেশিক মন্ত্রী। হেনরি কিসিঞ্জার রাষ্ট্রযন্ত্রের বা মন্ত্রিত্বের অবসান হলে তিনি সরাসরি চলে যান ছাত্র পড়াতে জর্জ টাউন বিশ^বিদ্যালয়ে। পরে অবসর নিয়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে নিজের একটি কনসাল্টিং ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই নিয়োজিত থাকেন। পরে আর রাজনীতিতে ফিরে আসেননি বা তাকে কোনো হাইব্রিড নেতা বা কর্মী হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়নি।

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে একনাগাড়ে ক্ষমতায় আছেন, সেহেতু এ সময়ে এসব হাইব্রিড নেতাকর্মীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। সরকার বা সরকারের বিভিন্ন সদস্য যোগ্য মানুষদের মেধা, সুনাম, নির্লোভ ব্যক্তিত্ব কাজে লাগাবেন বলে তাদের নিজ দলে ঠাঁই দেন, কিন্তু তারা দলের আশ্রয় পেয়েই নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করা শুরু করেন। এ বিষয়ে সরকার, সরকারি দল এবং স্বাধীনতার চেতনার পক্ষের মানুষগুলোকে সচেতন হতে হবে।
প্রসঙ্গত বলতে হচ্ছে, অনেক সময় কেন্দ্র থেকেও কিছু মানুষকে স্থানীয় নির্বাচনে বা নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, এসব নেতাকর্মী অধিকাংশই হাইব্রিড নেতা। তারা দলের শুরু থেকে নেই, মাঝপথে এসে নিধিরাম সর্দার ধরনের নেতা।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও গবেষক আবুল ফজল তার এক লেখায় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ দলটির ধরন হচ্ছে, এটি একটি পাথর নিচে থেকে গড়াতে গড়াতে পাহাড়ের ওপর উঠেছে আর বিএনপি দলটির ধরন হচ্ছে, একটি পাথরকে পাহাড়ের ওপর থেকে ফেলে দেওয়া, যেটি গড়াতে গড়াতে আরো কিছু নুড়ি পাথর নিয়ে নিচে পড়া একটি দল।’ কথাটি আসলেই সত্যি। আওয়ামী লীগ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দল, এ দলটি স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই এ দলকে দেশের অগণিত মানুষ পছন্দ করে। তারা বিশ^াস করে দেশের ভালো কিছু করলে নিঃস্বার্থভাবে এ দলই করবে। আর জনগণের এ বিশ^াসকে বর্তমান শাসক দলের অবশ্যই গ্রাহ্য করা উচিত।

সাব্বির আহমেদ সুবীর : সভাপতি, বাংলাদেশ রাইটার্স ইউনিটি

 
Electronic Paper