ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং ‘দ্য বস’
রিকশাচালককে মারধরের প্রতিবাদে সোহাগ খুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
রিকশাচালককে মারধর থেকে বাঁচাতে গিয়েই কিশোর গ্যাংয়ের বলি হয় রাজধানীর উত্তরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মো. সোহাগ (২০)। ওই হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘দ্য বস’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল। তিনি বলেন, মো. সোহাগকে হত্যার অভিযোগে মাহবুবুল ইসলাম ওরফে রাসেল ওরফে কাটার (২০) ও মো. হৃদয়কে (২২) সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে দক্ষিণখান থানাধীন মোল্লারটেক থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও আটটি গুলি উদ্ধার করা হয়। শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে উত্তরখানের খ্রিস্টানপাড়া রোডের ডাক্তার বাড়ির মোড়ে ‘দ্য বস’ নামের গ্যাংয়ের সদস্য হৃদয় ও রাসেলসহ কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছিল। সে সময় একই রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি রিকশার চাকা থেকে কাদা ছিটকে হৃদয়ের শরীরে লাগে।
এতে ক্ষিপ্ত হৃদয় ওই চালককে মারধর করতে থাকে। ‘দ্য বস’ নামক কিশোর গ্যাংয়ের পরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. সোহাগ রিকশাচালককে মারধর থেকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় এবং তাদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়।
এ ঘটনা মেনে নিতে না পেরে হৃদয়, রাসেল নাদিমসহ কয়েকজন সোহাগের ওপর চড়াও হয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক জানান, নাদিমের কাছে থাকা একটি ধারালো ছুরি দিয়ে রাসেল সোহাগকে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে গ্রুপের সবাই চলে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় সোহাগ মাটিতে লুটিয়ে থাকে। পরে ওই রিকশাচালক এবং স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গলে সেখানে মারা যায় সোহাগ। ঘটনার পর দিন সোহাগের বড় ভাই বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সোহাগের পরিবারের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন সোহাগ খাবার কিনতে বাসা থেকে বের হয়েছিল। সোহাগ পরিবারের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। এ ঘটনায় সোহাগের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে শাফী উল্লাহ বুলবুল আরও বলেন, রাসেল উত্তরা আইডিয়াল কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করে। এ গ্রুপের সদস্য হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে কোনো ঝামেলা হলে সে যে কাউকে পায়ের রগ কাটার হুমকি দিত এবং সব সময় নিজের কাছে ছুরি কিংবা ক্ষুর রাখত।
জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় জানিয়েছে, সে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরে উত্তরার একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করে। হৃদয়ের রাসেল, নাদিম, সানি, মেহেদি, সাদ, সাব্বিরসহ এলাকার উঠতি বয়সী কিশোরদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে সে কিশোর গ্যাং ‘দ্য বস’ প্রতিষ্ঠা করে এবং সব সময় এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এ গ্রুপটি ‘হৃদয় গ্যাং’ নামেও পরিচিত।