ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাস্তায় কয়েকশ’ সৌদি প্রবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:২০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন বাতিলের পর বিপাকে পড়েছেন সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মার্চের ছুটিতে দেশে এসে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। রিটার্ন টিকিট থাকার পরও যেতে পারছেন না ফেরত। আবার অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষের দিকে। সময় মতো ফিরতে না পারলে রয়েছে চাকরি হারানোর শঙ্কা। ধার দেনায় ডুবে পথে বসতে হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

এমনই যখন অবস্থা তখন রিটার্ন টিকিট রি-ইস্যুতে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স নিচ্ছে অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা। আর টিকিট বিক্রি করছে ৯৫ হাজার টাকায়। ফলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সৌদি প্রবাসীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ওই এয়ারলাইন্সের সামনে জড়ো হন তারা। পরে দুপুরে মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। 

জানা গেছে, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পায়। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গত সপ্তাহে আবেদন করলেও বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে বিমানকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন না দিলে সাউদিয়ার অনুমোদন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তের খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সৌদি প্রবাসীরা।

গত সোমবার প্রবাসীদের অনেকে মতিঝিলে বিমান অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ করেন, আবার কেউ কেউ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনেও বিক্ষোভ করেন। গতকাল এই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে, প্রবাসী বিক্ষুব্ধদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

অন্যদিকে সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসে গত শনিবার থেকেই টিকিটের জন্য ঘুরছেন প্রবাসীরা। তাদের অভিযোগ, লাইনে দাঁড়ালেও টিকিট দিচ্ছে না সাউদিয়া। রিটার্ন টিকিট থাকার পরও অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা রি-ইস্যু করতে নিচ্ছে এয়ারলাইন্সটি। একই সঙ্গে টিকিট বিক্রি করছে ৯৫ হাজার টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার বিক্ষোভের মুখে ১০ জন প্রতিনিধিকে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যায় সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। তাদের মাধ্যমে অন্যদের টিকিট সংগ্রহের সিরিয়ালের টোকেন দেওয়া হয়। তবে গতকাল মঙ্গলবার কোনো ঘোষণা না দিয়েই অফিস বন্ধ করে দেয় তারা। কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে নোটিস লাগিয়ে দেয়া হয়- ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রয় সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। যে কারণে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রবাসীরা।

বিক্ষুব্ধ প্রবাসীরা দাবি করেন, তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সময় মতো সৌদি আরবে যেতে না পারলে চাকরি হারিয়ে পথে বসবেন তারা। নোয়াখালী থেকে আসা মো. এনামুল হক দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, মার্চ মাসে ছুটিতে দেশে আসি। এখানে এসেই লকডাউনে আটকে যাই। ফেরার সময় রিটার্ন টিকিট কেটেছিলাম। তবে যেতে পারিনি।

এদিকে ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। সময় মতো ফিরতে না পারলে চাকরি হারাব, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে আটকে জমানো সব টাকা শেষ হয়ে গেছে। অনেক ধার দেনা জমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে না পারলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। সোমবার চাপের মুখে যাদের সিরিয়াল টোকেন দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন শরীয়তপুরের মো. রাজু।

তিনি বলেন, গতকাল আমাকে ২৭৫৪ নম্বর টোকেন দেওয়া হয়েছে। সৌদি এয়ারলাইন্স বলেছে ৫ অক্টোবর এসে টিকিট সংগ্রহ করতে। অথচ আমার ভিসার মেয়াদ শেষ ২৬ সেপ্টেম্বর। তাহলে আমি যাব কীভাবে? বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি, নিজে বাঁচতে পরিবারকে বাঁচাতে বিক্ষোভ করছি। আমাদের সৌদি পাঠানোর ব্যবস্থা না করলে, পরিবারসহ না খেয়ে মারা পড়ব।

বিক্ষোভকারী মঈন উদ্দিন বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ শেষ ৩০ সেপ্টেম্বর। এই সময়ের মধ্যে যেভাবেই হোক আমাকে দেশে ফিরতে হবে। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরতে না পারলে আমাদের মতো হাজার হাজার প্রবাসী দেশে বেকার হয়ে পড়ে থাকবে। তাই সরকারকে দ্রুত এ বিষয়ে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রবাসীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সৌদি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

 
Electronic Paper