ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নুর নাটকের ৪৮ ঘণ্টা

আরেকটি মামলা দায়ের

প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার যেন শেষই হচ্ছে না। গত দুদিন ধরেই তাকে নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। মামলা, গ্রেফতার, মুচলেকায় মুক্তি, নতুন আরেকটি মামলা, ঢাকাসহ সারা দেশে ছাত্রদের বিক্ষোভসহ বিভিন্ন ঘটনায় গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে আলোচনায় ছিলেন নুর।

সবশেষ নুর ও তার সমর্থকদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এদিকে নুরের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলার পর নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নুরসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়। লালবাগ থানায় করা ধর্ষণ মামলার বাদীই নতুন এ মামলাটি করেন। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা এবং হেয়প্রতিপন্ন করতে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নুরসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। নুর ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সহসভাপতি নাজমুল হুদা ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হিল কাফি।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘এটা আসলে আওয়ামী লীগ সরকার ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কারসাজি। কে এই মামলার বাদী আর কে কে আসামি- তা আমি জানি না, জানতে চাইও না। এখন এদেশে ন্যায়বিচার নেই। কিন্তু একদিন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। সেদিন এ মিথ্যা মামলার বিচার হবে।’

নুর আরও বলেন, ‘মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি করছিলাম, সেখানে আক্রমণ করা হলো। আমি বুঝলাম না কেনই বা গ্রেফতার করা হলো, আবার কেন ছেড়ে দেওয়া হলো। রাষ্ট্রযন্ত্রের কারও সঙ্গে কারও মিল নেই। একজন মারধর করে, আরেকজন ছেড়ে দেয়। আমি আগেও বলেছি এদেশে ন্যায়বিচার নেই। আইনের শাসন নেই। গণতন্ত্র নেই।’

অন্যদিকে নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার লুনাও এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। এটা মিথ্য মামলা, একটা ষড়যন্ত্র। এটা আমি কেন, সবাই জানে। আমি আমার স্বামীকে চিনি। ও কখনোই এ ধরনের কাজ করতে পারে না এবং এটা সাপোর্ট করার কোনো ধরনের প্রশ্নই আসে না।’ এদিকে নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া। তারা বলেন, প্রয়োজনে গণফোরাম নুরসহ আন্দোলনরত নেতাদের আইনি সহায়তা প্রদান করবে।

গতকাল বিকালে গণমাধ্যমে মাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরামের এই শীর্ষ দুই নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের একটি বিশেষ অঙ্গসংগঠনের মহিলা কর্মীদের দিয়ে মিথ্যা ও নোংরা মামলা দিয়ে নুরকে হয়রানি করা হচ্ছে। অতীতেও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা পায়নি। আমরা সরকারকে এ রাজনৈতিক নোংরামি বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।

অন্যদিকে মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের ১৭তম বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে, মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। সব আমাদের নলেজে রয়েছে। যেভাবে অ্যাড্রেস করা দরকার, পুলিশ সেভাবেই তদন্ত করছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নুরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ মামলা এবং পুলিশের ‘হামলা’র প্রতিবাদে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশ থেকে নুরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাকে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক হিসেবে দাবি করা হয়। নেতাকর্মীরা এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার নিন্দা জানান।

এর আগে গত সোমবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত সাবেক ভিপি নুরকে নিয়ে চলে নানা নাটকীয়তা। তাকে দুই দফা আটক করে পুলিশ, পরে মুচলেকা দিয়ে রাত পৌনে ১টার দিকে মুক্ত হন নুর। ধর্ষণের অভিযোগে পুরান ঢাকার লালবাগ থানায় গত রোববার রাতে নুরুল হক নুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রী। এতে প্রধান আসামি করা হয় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে। আর ধর্ষণে সহযোগিতা করায় মামলার তিন নম্বর আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয় নুরের।

মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে গত সোমবার রাতে ঢাবির টিএসসি এলাকায় নুরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এরপর মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা টিএসসি থেকে মৎস্যভবন এলাকায় যান। সেখানে পুলিশের সঙ্গে নুরদের গোলযোগ বাঁধে। একপর্যায়ে পুলিশ নুরসহ সাতজনকে সেখান থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও পুলিশকে মারধর করার অভিযোগে নুরসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

এর ঘণ্টাখানেক পর রাত ১০টার দিকে নুরকে অসুস্থ অবস্থায় একটি মাইক্রোবাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসে ডিবি পুলিশ। পুলিশের হামলায় আহত বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্য নেতাকর্মীরাও সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। নেতাকর্মীদের হামলায় আহত পাঁচজন পুলিশ সদস্যও ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

সোমবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে ঢামেক হাসপাতাল থেকে আবারও নুরকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। ঢাকা মেডিকেলের পকেট গেট দিয়ে নুরকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় সময় তার সমর্থকরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে মুচলেকার মাধ্যমে নুরকে রাত পৌনে ১টায় মিন্টুরোডের ডিবি কার্যালয় থেকে তার পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, নুরসহ সকলকেই মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে নুর একটু অসুস্থ বোধ করায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসা শেষে তাকে ডিবি কার্যালয়ে এনে মুচলেকার মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

 
Electronic Paper