ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তিতাস গ্যাস

গ্রাহকের কাছে বকেয়া সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০

গ্রাহকের কাছে তিতাসের বকেয়া সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বিশাল অঙ্কের ৭৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে সরকারি পর্যায়ে, বাকিটা বেসরকারি গ্রাহকদের কাছে।

বিদ্যুৎ খাত, সার কারখানা, ক্যাপটিভ, শিল্পখাত, বাণিজ্যিক, আবাসিক ও মৌসুমি গ্রাহকসহ বাদ পড়েনি কেউ। কেন এত টাকা বকেয়া তা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ নিয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে আশাবাদী হতে পারেনি সংসদীয় কমিটি। এসব বকেয়া বিল আদায়ে তৎপর হতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ জানিয়েছে কমিটি। এদিকে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার পরও এখনো কীভাবে গ্রাহকরা সংযোগ পাচ্ছেন তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটির সদস্যরা। অবৈধভাবে নতুন সংযোগের নেপথ্যে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে উল্লেখ করে এসব অসাধু ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির সুপারিশ করেছে কমিটি। এরপর থেকেই তোলপাড় শুরু হয়েছে তিতাসে।

গতকাল রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, আট শ্রেণির গ্রাহকের কাছে তিতাস সংযোগ লাইনের সহায়তায় গ্যাস সরবরাহ করে। এসব গ্রাহক শ্রেণির কাছে মাসিক গড় গ্যাস বিক্রির পরিমাণ এক হাজার ৪৮৭ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৯৪ কোটি ৪৯ লাখ এবং বেসরকারি পর্যায়ে এক হাজার ৩৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহকারী এ সংস্থার গ্রাহক পর্যায়ে বকেয়া দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বকেয়ার মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৭৩৬ কোটি ৮৯ লাখ এবং বেসরকারি গ্রাহকের কাছে তিন হাজার ৮৮২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং কমিটির সদস্য নসরুল হামিদ, মো. আবু জাহির, মো. আলী আজগর, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর এবং বেগম নার্গিস রহমান। বৈঠকে কমিটির সদস্য ছাড়াও অংশ নেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সংসদীয় কমিটি থেকে জানানো হয়েছে, বকেয়া আদায়ে প্রচার, লিফলেট বিতরণ, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার, নোটিশ এবং বিশেষ ক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়িক সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমই ও সরকারি দফতরগুলোর সঙ্গে পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন তারা। কর্তৃপক্ষের এ বক্তব্যে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারেনি সংসদীয় কমিটি। কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘বিল যে পরিমাণ বকেয়া তা তিন থেকে চার মাসের সমপরিমাণ। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ জবাবে টিজিটিডিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বিল করার পরে শিল্পের ক্ষেত্রে ৪৫ দিন, আবাসিকের ক্ষেত্রে ২১ ও সিএনজির ক্ষেত্রে ২০ দিনের সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময়ে অনেকে বিল পরিশোধ না করার কারণে বকেয়া বাড়ছে। তিনি কমিটির সদস্যদের আশস্ত করে বলেন, চলতি বছরের মধ্যে বকেয়া সমতা পর্যায়ে আনা হবে।’

কমিটির সদস্য মো. আছলাম হোসেন সওদাগর বলেন, ‘গ্যাস বিতরণে অসংখ্য অবৈধ লাইন চিহ্নিত হয়েছে। এর বাইরেও অনেক অবৈধ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এ অবৈধ লাইন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ ছাড়া স্থাপন সম্ভব নয়।’ কমিটির অন্য সদস্য মো. আবু জাহির বলেন, ‘আপাতত আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এরপরও অনেক বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই সংসদসহ বিগত একাধিক সংসদেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্তসহ নির্দেশ ছিল। এরপরও কার্যপত্রে দেখা যায়, ২০টি সিএনজি পাম্পে অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এতে প্রমাণিত জড়িত কেউ না কেউ রয়েছে।’

জবাবে টিজিটিডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘অবৈধ সংযোগ দিতে যারা সহায়তা করেন তাদের বিরুদ্ধে যথানিয়মে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে যারা এক জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করেন তাদের বদলি করা হচ্ছে, যাতে সিন্ডিকেট করে কিছু করতে না পারে। ইতিমধ্যে ৮২১ কর্মকর্তা এবং ৬৫৬ কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।’

 
Electronic Paper