স্বেচ্ছাসেবক দল
কমিটিতে পদায়ন নিয়ে অসন্তোষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
সদ্য ঘোষিত জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ‘আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি’ গঠন নিয়ে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ত্যাগী ও সক্রিয় নেতাদের বদলে নিষ্ক্রিয়দের কমিটিতে পদায়ন, সক্রিয়দের বাদ পড়া ও জ্যেষ্ঠতা না মানার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিগগিরই এর সমাধান না হলে কমিটি বয়কট করে আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। তাদের দাবি, কমিটিতে সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদকদের অনেকেই আগে স্বেচ্ছাসেবক দল করেননি, দীর্ঘদিন রাজনীতিতেও নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তাবিত খসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ গত ২৭ অক্টোবর শেষ হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাত সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় এক বছর পর গত শনিবার ১৪৯ সদস্যের ‘আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি’ ঘোষণা করা হয়। তবে কত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে তা জানানো হয়নি।
অভিযোগ আছে, সাবেক কমিটির সদস্য, সহ-সম্পাদক, সম্পাদক, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কসহ অন্তত ১০ জন এবং অনেক নিষ্ক্রিয়দের সহসভাপতি করা হয়। অথচ দলের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন ও আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রাখা সাবেক দফতর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চুকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে। একইভাবে ছাত্রদলের সাবেক দফতর সম্পাদক, সহসভাপতি নাজমুল হাসানকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-দফতর সম্পাদক করা হয়। অথচ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সম্পাদক এবং নাজমুলের জুনিয়র তাদেরকে করা হয় সহ-সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া সদ্য ঘোষিত কমিটিতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কসহ অনেককে সহসভাপতি করা হয়েছে।
তবে সক্রিয়দের মধ্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আলাউদ্দিন জুয়েল, জেড আই কামাল, মাসুম বিল্লাহ, এবিএম মুকুল, জাফর আলী খানসহ বেশ কয়েকজনকে কমিটিতে রাখাই হয়নি। কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই। এ নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যা তাদেরকে আন্দোলনে দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের একাধিক নেতা।
তবে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, এটা আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সম্পাদকীয় অনেক পদ খালি আছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাকি পদগুলোতে পদায়নের নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। কমিটি থেকে বাদ পরা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আলাউদ্দিন জুয়েল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ঘোষিত কমিটিতে মাঠের রাজনীতি করা নেতাকর্মীরা বাদ পড়েছেন। ক
মিটিতে যাদের পদায়ন করা হয়েছে তারা দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতি থেকে দূরে এবং নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের আশ^াস দেওয়া হয়েছে, খুব শিগগিরই আলোচনা করে এর একটা সুরাহা করা হবে। অন্যথায় আমরা আমাদের মতো করে এগোব। স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসীন আলী বলেন, আসলে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বড় সংগঠন এখানে কমিটি দিতে গেলে সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। তারপরও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সবাইকে নিয়ে সুন্দর একটা কমিটি উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চার বছর পর হলেও আমরা একটা কমিটি উপহার দিতে পেরেছি এটা আনন্দের। এটা ঠিক কেউ হয়তো প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেয়ে গেছেন।
কেউ হয়তো কমিটিতে আসতে পারেননি। কেউ হয়তো নতুন পদ পেয়েছেন। এটা আংশিক কমিটি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে এই ক্ষোভটা থাকবে না। তিনি বলেন, ৩১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নামের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই হওয়া বাকি নামগুলো চলে আসবে। তিনি আরও বলেন, আমরা একটা দুঃসময় পাড় করছি। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
কমিটি প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান বলেন, এই কমিটি আরও গতিশীল নেতৃত্ব দেবে। আমরা যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন করছি, আশা করি এই কমিটির নেতাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকবে। তিনি বলেন, কমিটি গঠন করা হয়েছে, সাবেক কমিটি ও ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের নিয়ে। এখানে বয়স বিবেচনায় নয়। রাজনৈতিক কর্মকা- এবং রাজনৈতিকভাবে যারা সিনিয়র তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৪৯ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক) পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। গত শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কমিটির অনুমোদন দেন। বর্তমান কমিটির সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মারা যাওয়ায় এ পদে সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।