ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বন্যায় বিপর্যস্ত কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০

ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি চলতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক দফায় বন্যা আঘাত হেনেছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় কৃষি খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ক্ষেতের ধান, সবজি, ঘেরের মাছ-গবাদিপশু। আপ্রাণ চেষ্টা করেও এ ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না কৃষকরা। জেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাঁড়ালেও দফায় দফায় বন্যায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। এ পর্যন্ত চার দফায় বন্যার কবলে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষক।

গত আগস্ট মাসে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অনেক কৃষক তাদের জেগে ওঠা জমিতে, ধান, সবজি আবাদ করেছেন। তবে গত ৩/৪ দিন ধরে যমুনা, ধরলা তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বেড়েছে। এতে আবার পানির নিচে ফসল। একের পর এক বন্যায় ফসল হারিয়ে চরাঞ্চলের কৃষক এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে।

বগুড়ার ধুনটের কয়েকজন কৃষক বলেন, গত জুলাই আগস্টের বন্যায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ধার করে আবার ধান লাগিয়েছি। পাশাপাশি অনেকে সবজির চাষ করেছি। কিন্তু তিন দিনে পানি বাড়ায় সব পানির নিচে। জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছোঁয়ার পথে। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরাবাড়ী ঘাট পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এতে আমন ধানখেত তলিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক বলেন, কয়েক দফা বন্যায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাসকলাই, শাকসবজি বীজ ও আমন চারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অসময়ে আবার নদীর পানি বাড়ায় কৃষকের চিন্তা বেড়েছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, ‘ যমুনার পানি ব্যাপক বাড়ছে। দুই-এক বছর পর পর এ সময়ে যমুনার পানি বেড়ে বন্যা হয়। এবারও আশ্বিন মাসে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।’

আরও জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার এবং লালমনিরহাটে ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও প্রবল বৃষ্টিপাত আর উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে লালমনিরহাটের সদর উপজেলার ধরলা নদীপাড়ের কুলাঘাট, মোগলহাট ও বড়বাড়ী ইউনিয়ন; কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী, বড়ভিটা ইউনিয়ন; রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়ন; সদর উপজেলার হলোখানা, যাত্রাপুর, মোগলবাসা; এবং উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ১৫ হাজারের বেশি পরিবার বন্যাদুর্গত হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে সারডোব গ্রামে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করে অন্তত আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, গত তিন দিনে নদীর পানি বাড়ায় ২ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির ফসল ডুবেছে। এর মধ্যে আমন এক হাজার ৮৪০ হেক্টর, মাসকলাই ১২৭ হেক্টর, শাকসবজি ১২৭ হেক্টর ও বাদাম ১০ হেক্টর।

জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বন্যার ধকল কাটলেও তিস্তার ভাঙন তীব্র হয়েছে। বৃষ্টির পানি, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এবং তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসত বাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো।

ভাঙনে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, কাশিম বাজার, লখিয়ারপাড়া শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর, পুটিমারী, গ্রামে হাজার একর ফসলি জমি ও শতাধিক বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর জমি।

 
Electronic Paper