ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শিক্ষক তাড়ানোর কাজে শিক্ষার্থীকে ব্যবহার

টি.এম.মামুন, বগুড়া
🕐 ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

বগুড়ার স্বনামধন্য বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করছেন স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের শিকার হতে চলেছেন প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। ষড়যন্ত্র করে তারা ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ এনে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রের বিষয়টি পরিষ্কার করে তুলেছে অভিযোগকারী মেয়েটির লিখিত ও মৌখিক অসংলগ্ন বক্তব্য।

যে ছাত্রীর ছবি ব্যবহার করে চক্রটি সুকৌশলে গণমাধ্যমে অভিযোগ সাজিয়েছেন, সেই ছাত্রীই শিক্ষক সম্পর্কে ভালো ও সুন্দর মন্তব্য তুলে ধরে জড়িতদের শাস্তি চেয়ে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছুদিন যাবৎ চক্রটি কাজ করছে। বাংলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে বেকায়দায় ফেলার লক্ষ্যে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি এক শিক্ষার্থীকে দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় জেলা প্রশাসকের কাছে। যদিও তদন্ত কাজে সর্বদা অনুপস্থিত থেকে তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন অভিযোগকারী। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আড়াই বছর আগে ২০১৮ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন এই অভিযোগকারী।

অভিযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ শাফিকা আক্তারকে জনবহুল ব্যস্ততম সড়কে সন্ধ্যা ৬টায় ঘটনার একমাত্র সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে চাননি প্রতিবেদককে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীও লিখিত অভিযোগটি সত্য বা মিথ্যা এ বিষয়ে মন্তব্য না করেই বারবার শুধু তদন্ত প্রতিবেদনের কথাই বলছেন। গঠিত তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক ভাবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করলেও সেটা যে শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধেই হবে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থী জাফরিন রহমান। এতে প্রতীয়মান হয়, অভিযোগটি তার নিজস্ব কোনো বিষয় ছিল না, ছিল ঐ চক্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

অথচ ভিন্ন একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেল ওই ছাত্রীর ছবি দেখিয়ে শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে যা অসত্য। সংবাদটি দেখে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকসহ স্বজনরা হতবাক হয়ে পড়েন। বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে স্থানীয় টিভি সংবাদিক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তাদের কাছে।

পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বিষয়টি অসত্য মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে লিখিত জবাব দেন শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। একই দিনে প্রতারণার মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও অন্যায়ভাবে টিভিতে ছবি দেখানোয় সম্মানহানি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করে আইনগত প্রতিকার চাইছেন শিক্ষার্থী।

একই সঙ্গে নিজ পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেন ঐ শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাবি, একটি চক্র শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সম্পর্কে যে ধরনের মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রচার করেছেন তার উপযুক্ত বিচার হওয়া প্রয়োজন।

অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে কথা হয় বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের অভিভাবক সানজিদা নিপাসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলছেন, তাদের সন্তান তৃতীয় শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে, কোনো দিন শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের কোনো রকম খারাপ কিছু দেখেননি। বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ও কালচারাল উপকমিটিসহ বিভিন্ন উপকমিটির আহবায়ক হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল শিক্ষক।

প্রায় একই রকম কথা বলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সাবিহা নাজনীনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা মনে করেন, এ ধরনের অশোভন ও অশালীন বক্তব্য উপস্থাপন করে যারা শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের ক্ষতি করতে চাইছেন তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তার কাছে শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি, তিনি নিজেও খারাপ কিছু দেখেননি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ।

 
Electronic Paper