ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টিসিবির পেঁয়াজ অনলাইনে

জাফর আহমদ
🕐 ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০

দাম স্থিতিশীল রাখতে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি করবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবি। সেই সঙ্গে ট্রাকে খোলাবাজারেও বিক্রি চলবে। এ কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এদিকে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরুর জন্য ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল বুধবার ভারতকে দেওয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশ এ অনুরোধ জানায়। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে এ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ রপ্তানির নীতিমালায় ভারত হঠাৎ করে পরিবর্তন আনার যে ঘোষণা দিয়েছে তা বাংলাদেশকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কেননা, এতে বাংলাদেশের বাজারে সরাসরি প্রভাব পড়েছে। 

গতকাল ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, টিসিবি বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে না। এখন পেঁয়াজ পরিস্থিতি সামাল দিতে টিসিবির মাধ্যমে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রসঙ্গত, টিসিবি গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খোলা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। সেখানে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন।

এদিকে বাজারের আলোচনার বিষয় বদলে গেছে। কদিন আলোচনা ছিল ইলিশ নিয়ে, এখন পেঁয়াজ। বাজারে গিয়ে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ পেঁয়াজ সংগ্রহে। পেঁয়াজ নিয়ে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও দামে আগুন আছেই। গতকাল রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মিরপুর-১৪ নম্বরে কচুক্ষেত বাজারে দেখা গেছে পেঁয়াজের দোকানে ভিড়। এখানে যেমন খুচরা পেঁয়াজ মেলে তেমনি পাইকারিতেও পাওয়া যায়। খুচরা পেঁয়াজের ক্রেতারাও পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে ব্যস্ত। মিরপুরের বিভিন্ন গলিতে দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে বাজার ভেদে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। কচুক্ষেত বাজারে পাইকারি তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে একজন খুচরা ক্রেতা রহমত আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, বেশি করে নিলে এখনো ৮০-৯০ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছে। তাই বেশি করে কিনে রাখছি যাতে গত বছরের মতো বেশি দামে পেঁয়াজ না কিনতে হয়। গত বছরও তো এখনকার মতো বাড়তি দামেই কিনতে হয়েছিল, তাছাড়া সরকার বলছে টিসিবি পেঁয়াজ আমদানি করে রেখেছে, কম দামে বিক্রি করবে। বেসরকারি পর্যায়ে তুরস্ক ও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এত বেশি দামে পেঁয়াজ কিনছেন, তখন ঠকবেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার বলছে ঠিক আছে। কিন্তু কবে আমদানি করবে আর কবে দাম কমবে তার ঠিক আছে?

পেঁয়াজ নিয়ে হুলুস্থুল অবস্থা চলছে। প্রতিদিন যার ১০০ গ্রাম পেঁয়াজ লাগে, ১০ দিনে লাগে এক কেজি পেঁয়াজ। তিনিও এক কেজি পেঁয়াজ সংগ্রহের জন্য পুরো দিন ব্যয় করতে প্রস্তুত-এমন অবস্থা। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি ইতোমধ্যে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খোলা ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। কম দামের এক কেজি পেঁয়াজ সংগ্রহের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রেতা বেশি বড় হওয়ার কারণে লাইন বড় হচ্ছে। তবে ঠিকই মিলছে কম দামের পেঁয়াজ।

পেঁয়াজ নেই- এ খবর দ্রুত ছড়াচ্ছে। যথেষ্ট পেঁয়াজ আছে, দ্রুত আরও আমদানি করা হবে-সরকারের এ আশ্বাস ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না বা পৌঁছলেও তারা মানছে চাইছে না। এ বছর রেকর্ড প্রায় ২৬ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। যা পুরো বছরের চাহিদার সমান। দেশের পেঁয়াজেই পুরো বছর চলার কথা। উৎপাদন হওয়ার পর এখনো যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ আছে বলে বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তারপরও আমদানি অব্যাহত হচ্ছে।

গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ছয় লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সরকার টিসিবিকে পেঁয়াজ আমদানি করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজ নিয়ে সোমবার ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের এক নির্দেশে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়ে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে খুচরা বাজারে দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।

জানা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়বে শুনে বড় বড় মার্কেট থেকে পেঁয়াজ উধাও হয়ে যায়। দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত। তারপরও আবার চাহিদা মতো পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পুরান ঢাকার পাইকারি বাজারে খোঁজ নিলে আব্দুল হক নামে আড়তদার ফোনে খোলা কাগজকে বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ স্বাভাবিক আছে বরং যারা খুচরা বিক্রেতা তারাই বাড়তি পেঁয়াজ সংগ্রহে মরিয়া হয়ে অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি করছে।

পেঁয়াজের নাম কমাতে বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী। উদ্যোগগুলো হলোÑ ১) পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে কূটনীতিক মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র সচিবকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ২) আমদানিকৃত পেঁয়াজ স্থলবন্দর থেকে দ্রুততম সময়ে ছাড় করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এনবিআর চেয়ারম্যান এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ৩) আগামী মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত পেঁয়াজের ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আপাতত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পুনরায় পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ৪) পেঁয়াজের বিষয়ে দ্রুত সংনিরোধ সনদ ইস্যুর জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ৫) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং জোরদার করেছে। ৬) দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলাসহ সব জেলার জেলা প্রশাসকদের মনিটরিং জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ৭) মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকদের কাছে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে পত্র প্রেরণ করেছেন। ৮) পেঁয়াজ আমদানিকারকদের এলসি খোলার সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

গত বছর পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ থেকে অনুমতি পর্যন্ত দুই মাসের অধিক সময় লাগে। আমদানি করতে আরও সময় লাগে। এ বছর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের দিন থেকেই দেশের সরকার নড়েচড়ে বসেছে। কোন কোন দেশ থেকেই আমদানি করবে সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এতে পেঁয়াজের বাড়তি দাম প্রলম্বিত হবে না বলে মনে করছে কৃষি পণ্য আমদানিকারকরা। এ সুফল পেতে গুজব রোধ ও বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার প্রয়োজন বলে মনে করছের সংশ্লিষ্টরা।

 

 
Electronic Paper