ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দ্রব্যমূল্য, বাজার ও ভেজালের আগ্রাসন!

কাজী সুলতানুল আরেফিন
🕐 ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০

আমাদের দেশে কোনো কিছুর দাম একবার বেড়ে গেলে তার দাম সহজে কমার নজির নেই। যা কিছুর দাম বাড়তে থাকে তা শুধু বাড়তেই থাকে। যেমন- তেলের ক্ষেত্রে অতীতে আমরা দেখেছি দাম শুধু বেড়েই গিয়েছিল। কিন্তু পরে আর কমতে দেখিনি। অথচ এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে উন্নত দেশের চিত্র ভিন্ন। তারা যে সকল কিছুতে নাগরিকদের সুবিধা অল্প দামে দিয়ে থাকে আমাদের দেশে সে সকল জিনিসের দাম শুধু দিন দিন বাড়তেই থাকে। যেমন- তেল, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি। যদিও এমন হতো যে সাময়িক কারণে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার পরে আবার তা কমিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা হতো; তাহলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেত! আচমকা এসব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দিন দিন সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষের রোজগার সীমিত। সংগ্রাম করে টিকে আছে বেশিরভাগ মানুষ। ক্ষমতা কিংবা প্রভাব খাটিয়ে উপরি কামানোর সুযোগ তাদের নেই! সাধারণ মানুষ দুর্নীতিবাজদের মত অবৈধ উপার্জন করে না। তাদেরকে সীমিত আয় দিয়ে মানিয়ে নিতে হয়।

অন্যদিকে আরেকটি কথা, দেশ যদি উন্নতির পথে এগিয়ে যায় তাহলে নাগরিকদের ওপর এভাবে ঘন ঘন বর্ধিত মূল্যের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে কেন? নিত্য প্রয়োজনীয় এসব দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেজাল আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভেজালের যে সব চিত্র উঠে এসেছে তা রীতিমত আঁতকে ওঠার মতো। বাজারের নামী-দামি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা রীতিমত আঁতকে ওঠার মতো। এসব কোম্পানির পণ্যের মান যদি এমন হয় তবে অন্য সাধারণ কোম্পানিগুলোর পণ্যের মান নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে। হায় রে জীবন আমরা যেন এই ভেজালের বিষ খেয়ে খেয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এসব খেয়ে আমাদের এবং নতুন প্রজন্মের রোগবালাই এর সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এ দিকে পণ্য দ্রব্যের দাম নিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষ আয় অনুপাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম শুধু বেড়েই চলেছে। কিছু অসাধু কুচক্রী আর মুনাফালোভী লোক পণ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়ানো শুরু করেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে দরকারি পণ্যের গুদামজাতও করা শুরু করেছে। এই দেশে এখন মানবতা আর নৈতিকতা থেকেও মুনাফা অর্জন মুখ্য হয়ে গেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে।

কয়েক মাস আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সংবাদ প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের বাজারে নাভিশ্বাস উঠেছিল। রাতারাতি পেঁয়াজের কেজি শত টাকার ওপরে চলে গিয়েছিল। এখন আবার পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আড়ৎদাররা শক্ত অবস্থানে আছে। যাদের কাছে পেঁয়াজ মজুদ ছিল তাদের এখন পোয়াবারো। তারা পেঁয়াজ ছাড়তে নাখোশ। কারণ যত মজুদ তত মুনাফা। দেশ কিংবা দেশের মানুষের কথা ভাবতে তারা নারাজ। সাধারণ মানুষের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে। দেশ জুড়ে বইছে পেঁয়াজ মাতম।

বর্তমান চিত্র থেকে কয়েকটি দৃশ্য স্পষ্ট হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছে এ দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ কেউ করতে পারে না। কারবারিরা যা খুশি তাই করতে পারে। আরেকটি বিষয় স্পষ্ট তা হচ্ছে এ দেশে মুনাফাই হচ্ছে আসল। বেশিরভাগ কারবারিদের মধ্যে দেশপ্রেম বলতে কিছুই নেই। এটা বলতে বাধ্য হলাম কারণ দেশে পেঁয়াজের মজুদ এতটা বিপর্যস্ত ছিল না যে রাতারাতি দাম এত বাড়িয়ে দিতে হবে।

আরও একটা বিষয় আমাদের অনেককেই ভাবায় আমরা কৃষিতে এত উন্নতি করার পরেও আমাদের কেন অন্যদেশের পেঁয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়? মূল কথায় ফিরে আসি। এ দেশের বাজার কবে নিয়ন্ত্রিত হবে? পেঁয়াজের দাম নিয়ে এমন নাটক নতুন কিছু নয়! প্রতিনিয়ত এমন হচ্ছে। অনেক নিত্য দ্রব্য নিয়েও এমন চিত্র দেখা যায়। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় কঠোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং চলছে। তবে তা ঢিলেঢালাভাবে। এ মনিটরিং আরও শক্তিশালী করা দরকার। যেখানে দেশে অসাধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক বেশি। এ বাজার মনিটরিং এর সফলতা পুরোপুরি আসে না। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা এত বেশি যে এদের ওপর পুরোপুরি নজরদারি রাখা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। চারদিকে যেন শুরু হয় চোর পুলিশ খেলা! কিছু অপরাধীকে জেল জরিমানা করা হলেও এরা মোটেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। তাই এদের লাগাম টেনে ধরতে নতুন শাস্তির বিধান চিন্তা করা উচিত।

এবার আসি ভেজালের কথায়। যে সকল জিনিসের প্রতি মানুষের চাহিদা বেশি থাকে সে সকল জিনিসের প্রতি ভেজাল কারবারিদের কুনজর থাকে। এ চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে দাম এবং ভেজাল দুটোই সমান তালে এগিয়ে যায়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা সহ সকল পণ্যের দাম শুধু বেড়েই চলেছে। বাজারে ফল কিনতে গিয়ে ফলবিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তার কাছে ফরমালিন বা কেমিক্যাল ছাড়া ফল আছে কিনা’? সে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘ফরমালিন ছাড়া ফল পাবেন কই?’ তার কথা শুনে মনে হল ফরমালিন এখন যেন স্বাভাবিক কিছু হয়ে গেছে। এভাবে বিভিন্ন ফলমূল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যে দিন দিন ভেজাল বেড়ে চলেছে। দিন দিন আসল নকল চেনাও দায় হয়ে পড়েছে।

বাজার থেকে ফল কিনলে তা দীর্ঘদিন ধরে ঠিক থাকে। নষ্ট হয় না বা পচন ধরে না। কিন্তু কিছুদিন পরে পচে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ফলের স্বাভাবিক ধর্ম। চারদিকে এত খবর বা নিউজের পরেও ভেজাল কারবারিদের কাজ কারবার কমেছে বলে মনে হয় না! মনে হচ্ছে দিন দিন ভেজাল আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাইরের তৈরি খাবার কেনার সময় সাবধান থাকা উচিত! কারণ বাইরের এসব বেশিরভাগ ভেজাল দেওয়া থাকে। নানারকম কেমিক্যাল মিশিয়ে খাবারগুলোকে রাঙানো বা আকৃষ্ট করার জন্য। সামান্যতম সন্দেহ দেখা দিলেই সে দ্রব্য কেনা উচিত নয়। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই ভেজাল নিয়ন্ত্রণে আনতেও বাজার মনিটরিং করা হয়। ভেজাল কারবারিদের যেহেতু দেশের প্রশাসনের পক্ষে একা দমন করা সম্ভব হচ্ছে না সেহেতু আমাদের নিজেদের সচেতনতা খুব জরুরি। কোনো কিছু কেনার আগে যাচাই করে কেনা দরকার। রমজানের পর আসে ঈদ। সে ঈদে যে সকল ভোজ্য জিনিসের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর মাঝেও ভেজাল বিস্তার লাভ করবে এখন থেকেই। মানুষ যেন আজ ভেজালের হাতেবন্দি।

এই মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল নিয়ন্ত্রণের জন্য যে মনিটরিং করা হয় তা শুধু রমজানে এলেই বেশি তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু কেন? আমরা চাই সারা বছর ধরে যদি বাজার মনিটরিং করা হয় তাহলে এইসব দুষ্কৃতিকারীদের কার্যক্রম কিছুটা হলেও কমে আসবে! আসুন নিজেরাও কিছুটা বিষয় এড়িয়ে চলি এবং সচেতন থাকি। তাহলে হয়তো এসব অতি মুনাফালোভীরা কিছুটা থমকে যাবে!

কাজী সুলতানুল আরেফিন : কথাসাহিত্যিক
[email protected]

 
Electronic Paper