ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রোহিঙ্গাপুত্রের হাতে উখিয়া আ.লীগের সম্মেলন

নেজাম উদ্দিন ও কায়সার হামিদ মানিক, কক্সবাজার
🕐 ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০

রোহিঙ্গাদের একসময়ের ‘বিপ্লবী নেতা’ মৃত আবুল কাশেম ওরফে কাশিম রাজা। তারই ছেলে শাহ আলম। সেই শাহ আলমকে আহ্বায়ক করে তৈরি হয়েছে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। এমন ঘোষণায় কক্সবাজারজুড়ে চলছে তোলপাড়। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে সবখানে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মী এবং স্থানীয়রা। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মসজিদে মসজিদে ওই আহ্বায়কের জন্য মোনাজাত করছেন রোহিঙ্গারা। উল্লাসিত তারা। এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি নজরে এলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উখিয়ার ওই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয়রা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিলে বহু রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটত রাখাইনে। রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু। আশ্রিত হিসেবে থাকবে। তারা দলীয় বিষয় নিয়ে নাক গলাবে কেন? 

জানা যায়, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা একযোগে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো ধরনের কোন্দল নেই। শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে নেতাকর্মীরা।

এ অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগ গঠনতন্ত্র বহির্ভূত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করলে বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের নজরে আনা হয়। সেতুমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে উখিয়ার ওই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক শাহ আলম ওরফে রাজার পক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মসজিদে মোনাজাত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গারা উল্লাস করছেন। এতে স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সচেতন মহল জানান, উখিয়া টেকনাফ ছিল বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। বঙ্গমাতা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করায় উখিয়া টেকনাফ আসনে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে বারবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়ী হয়ে আসছেন। অসাধু ও অনুপ্রবেশকারী কিছু নেতা উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধান্ধায় ষড়যন্ত্রে নেমেছে।

কর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থাকায় গ্রামগঞ্জের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। উখিয়া টেকনাফ যেহেতু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা, সে হিসেবে রোহিঙ্গার স্বজন বা মিয়ানমারের বাসিন্দা সংশ্লিষ্ট কাউকে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক করাটা উচিত হবে না। এটি দলের জন্য বদনাম টেনে আনবে।

উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালে মিয়ানমার সরকারের চাপের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন আবুল কাশেম ওরফে কাসেম রাজা। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে উখিয়ার ইনানীর পাহাড়ি এলাকায় সপরিবারে আশ্রয় নেন কাসিম রাজা। কাসিম রাজার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে প্রথম ছেলে হলেন শাহা আলম চৌধুরী ওরফে রাজা শাহ আলম। পাকিস্তান সরকার এই কাসেম রাজাকে ব্যবহার করে আরাকান রাজ্যের তথা পাকিস্তান-বার্মা সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতেন বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের গুপ্তচররা ১৯৬৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর উখিয়ার ইনানী পাহাড়ি এলাকায় কাসিম রাজাকে হত্যা করে।

রাজা শাহ আলম কক্সবাজারে বিভিন্ন ব্যবসার সূত্রে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংস্পর্শে চলে আসেন। ২০০৮ সালে জড়িয়ে পড়েন জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র মতে, গত ৯ সেপ্টেম্বর উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আহবায়ক করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা শাহ আলমকে।

স্থানীয় সূত্র মতে, এই ঘটনায় উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পজুড়ে শুকরিয়া মোনাজাত হলেও চরম অসন্তোষ চলছে উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এমনকি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারাও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের মোনাজাতের ভাষা শুনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রাজা শাহ আলমের বক্তব্য নিতে কল করে লাইন কেটে দেওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 
Electronic Paper