ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কবিতার আমি অথবা আমার কবিতা

নাজমুল হাসান
🕐 ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০

অদ্ভুত আর জলমগ্নতায় ভেজা ছিল আমার শৈশব। জানি না কবে, কখন কীভাবে বৃষ্টির সঙ্গে আমার সখ্য হয়েছিল। নিজেকে ভাবতাম বৃষ্টিবালক। বৃষ্টির নেশা আমাকে উন্মাতাল করে তুলত। বৃষ্টির কাছ থেকেই আমি প্রথম ভালোবাসার পাঠ নিই।

আহা রে শৈশব! গ্রামীণ কোলাহল ছাপিয়ে ঘনঘোর বর্ষায় মেঘদেবী আকাশে উদিত হওয়া মাত্র আমরা ক’জন বন্ধু মিলে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠতাম। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দৌড়াদৌড়ি করে কাদায় গড়াগড়ি খেতাম। বৃষ্টির জল শরীর থেকে কাদা ধুয়ে দিত। পুনরায় কাদা মাখতাম। বারবার বৃষ্টি ধুয়ে দিত। বৃষ্টির কোনোই ক্লান্তি ছিল না।

তুমুল বৃষ্টিতেও আমি ছাতা ব্যবহার করতাম না, বৃষ্টি মন খারাপ করবে বলে। বৃষ্টি আমাকে মোহনীয় সুরে গান শোনাত। বাড়ির টিনের চালে নূপুর পায়ে নৃত্যরত বৃষ্টি জাদুময়তার সঙ্গীত শোনাত। তখন তো কবিতা বুঝতাম না। বুঝতাম না রবীন্দ্রনাথ। তবুও শৈশবের কোনো একদিন ভালো লেগে গিয়েছিলÑ আজ ঝরঝর মুখর বাদল দিনে...

বৃষ্টির দিনে মা আমাকে পাহারা দিতেন। আমি মায়ের রাঙাচোখ উপেক্ষা করে দৌড়ে তার চোখের আড়াল হতাম। শৈশবে এই একটি ক্ষেত্রে আমি ছিলাম ভীষণ অবাধ্য। এ জন্য মাকে অনেকদিন আক্ষেপ করতে দেখেছি।

শৈশব-কৈশোরে পরম মমতায় আগলে রাখা বৃষ্টি হঠাৎই বিরূপ আচরণ করে বসল কৈশোরের শেষের দিকে। আনন্দে আত্মহারা বৃষ্টিবালককেই দেখিয়ে দিল তার রুদ্রমূর্তি। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে সন্ধ্যায় সারা শরীর কাঁপিয়ে এল ১০৪ ডিগ্রির জ্বর। টানা তিনদিন দুঃস্বপ্নের ঘোরে কাটিয়ে যখন চোখ মেলে তাকালাম, দেহটা অসাড়। কোনো শক্তি পাচ্ছিলাম না। তারপর অভিমান করে বৃষ্টির সংস্পর্শে যাইনি বেশ কিছুদিন।

অনেকদিন পর অভিমান ভুলে বৃষ্টিকে ছুঁতে গেছি। সারা শরীরে মাখতে চেয়েছি বৃষ্টির সৌরভ। কিন্তু বৃষ্টি আর কখনোই আমাকে আপন করে নেয়নি। যতবার বৃষ্টিতে ভিজেছি ঠিক ততবার না হলেও বেশিরভাগ সময়ই হয় জ্বর হয়েছে নয়ত ঠাণ্ডা লেগেছে।

হঠাৎ এক বর্ষণমুখর দিনে এক কিশোরীর মুখচ্ছবি মনে দোলা দিতে থাকল। আনমনে শব্দরা বাসা বাধল সঙ্গোপনে। মুহূর্তেই সাদা পৃষ্ঠা ভরে ফেললাম আবেগের ফুলঝুরিতে। এরপর বিরামহীন লিখে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে ফেলেছি। একসময় সেই কিশোরীর বিরহে উন্মাতাল শব্দরা লুকোচুরি করতে থাকল। শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যে এই শব্দরাই হয়ে উঠল বেঁচে থাকার অন্যতম প্রেরণা। হয়ে উঠলাম কবিতার আমি অথবা আমার কবিতা। আমার কাছে কবিতা মানেই আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ।

আজও বৃষ্টি আর কবিতা ভালোবাসি। সেই শৈশব-কৈশোর আর তারুণ্যের ভালোলাগা আজও হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়, প্রথম প্রেমের প্রথম ছোঁয়ার মতো...


একান্ত ভাবনা

এমনটা হতেই পারত
আমি আর তুমি
নিরন্তর ভালোবাসাবাসি
হতেই পারত
আমরা দুজন প্রেমিক যুগল
আর ঘরবাঁধার স্বপ্নে বিভোর
হাতে হাত রাখার জন্য ব্যাকুল
চোখে চোখ রাখার জন্য
মদমত্ত ভোর, আর নির্জন সন্ধ্যা
হতেই পারত দুজন দুজনার
হতে পারত এই বনলতার শহরে
আমিই তোমার জীবনানন্দ
পরম মমতা জড়ানো কাছের মানুষ
এই যে এখন যেমন না দেখলে
দম বন্ধ বন্ধ লাগে
হতে পারত, তুমিই আমার নিঃশ্বাস
তোমার কোঁকড়ানো চুল
হতেই পারত
আমার স্বপ্নের ডালপালা
কিন্তু কেন যেন
কিছুই হল না
আবার অনেক কিছুই হল

দেখা হবেই

একদিন দেখা হবে এই শহরে
তোমার বাড়ির বারান্দায়
পার্কে, রানি ভবানীর আঙিনায়
অথবা দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির
সুনসান নীরবতায়

আমাদের দেখা হবে
চলনবিলের ডিঙ্গি নৌকায়
এক অসীম মুগ্ধতায়
দেখা হবেই আমাদের
অভিমান শেষে তোমার
একটুকরো ভালোবাসায়

জ্বরের ঘোরে

মধ্যরাতে ফিরে আসে
ফিরে আসে
সুইসাইডাল নোট
ফিরে আসে
তুমুল হাহাকার
বিরক্ত বিষাদ
সঙ্গোপনে ফিরে আসে
মৃত্যুদূত
ফিরে আসে
মৃত্যুচিন্তা
না পাওয়ার গ্লানি
ফিরে আসে বারংবার

 
Electronic Paper