ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কর্তৃপক্ষ সমীপে

জারিন তাসনিম
🕐 ১:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০

মাননীয় কর্তৃপক্ষ, সম্প্রতি অনলাইন ও সামাজিকমাধ্যমে একদল শিক্ষার্থী রীতিমতো আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। তারা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ভার্সিটি খুলতে চায়। আমি এদের মধ্যে কয়েকজনের কাছে তাদের এমন ইচ্ছার কারণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছি। তাদের কথাগুলোই আমি পরিচয়সহ বর্ণনা করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিসটিকস ডিপার্টমেন্টের রিফাত নামের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, সে ক্যাম্পাসে তার অসমাপ্ত প্রেম রেখে এসেছে। অনেকদিন দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়ায় সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা তুমুল। অনেকদিন প্রেমিকার হাতের নরম স্পর্শ থেকেও সে বঞ্চিত। তাই সে চায় অতিসত্বর ক্যাম্পাস খুলুক। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহিত নামের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, বাসায় থেকে মদ-গাঁজার আসরে যোগদান করতে পারছে না। তার প্রাণ এখন অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত।

একদিন বাইরে থেকে সিগারেট খেয়ে আসার পর গন্ধ পেয়ে তার বাবা বেদম প্রহার করেছে। এতে নিতম্ব অঞ্চলের কিছু ছাল চামড়া উঠে গেছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই সে দ্রুত ক্যাম্পাসে ফেরত যেতে চায়।

এদিকে কথা হয়েছে কয়েকজন আপুর সঙ্গেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আপু বললেন, ‘ক্যাম্পাসে যেতে চাই, কারণ বাসায় আমার কোনো ফটোগ্রাফার নেই। ক্যাম্পাসে থাকলে ফ্রেন্ডদের বললেই ছবি তুলে দেয়। তাছাড়া নতুন শাড়িও নেই সেলফি তুলেই আপলোড দেব। ফ্রেন্ডরা থাকলে ওদের শাড়ি পড়তে পারতাম। ফেসবুকে ডিপি চেঞ্জ করি না প্রায় ৬ মাস। ক্যাম্পাসে যাওয়া খুব দরকার।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আপু জানালেন, বাসায় থাকলে প্রেমিকের সঙ্গে রাতে ফোনে কথা বলার সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে প্রচুর ঝগড়া হচ্ছে। তিনি মুক্তি পেতেই ক্যাম্পাসে যেতে চান। শাবিপ্রবির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ একই প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘বাসায় ওয়াইফাই নাই, হলে আছে। ওয়াইফাই ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসছে।’

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের অনন্যা গুপ্তা জানালেন, করোনার সময়ে বাসায় কোনো পরিচালিকা নেই। যার কারণে বাসায় ঘর মোছা থেকে শুরু করে শৌচাগার পরিষ্কার- সবকিছুর ভার তার ওপর এসেছে। এ দাসীবৃত্তি থেকে তিনি মুক্তি পেতেই ক্যাম্পাসে ফিরতে চান।

তবে সবচেয়ে আনন্দদায়ক কথাটি বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই প্রথম বর্ষের সাদমান সাকিব। তিনি জানালেন, ‘অনলাইনে ক্লাস ভালো লাগে না। স্যারদের মন খুলে প্রশ্ন করা যায় না। অনেক আগেই সিলেবাস শেষ করে বসে আছি, বারবার রিভিশন দিচ্ছি। ক্যাম্পাস তাড়াতাড়ি খুলে দিলেই পরীক্ষায় বসতে পারব। ভালো সিজিপিএ ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার নেই।’

প্রিয় কর্তৃপক্ষ, এদের সঙ্গে তাল দিয়ে আবার আন্দোলনে যোগ দিয়েছে ‘সেভাখোদক’ (সেপ্টেম্বরে ভার্সিটি খোলা দমন কমিটি) দল। এই দলের নামের মধ্যেই একটা খাদক ভাব আছে। এরা সারাদিন বাসায় বসে খাই খাই করে। কথা বলেছি এই দলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গেও।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদনান জানিয়েছেন, তার হল ভালো লাগে না। ছেলেগুলো সারাদিন হৈচৈ করে, মেয়েদের সঙ্গে ঘোরে।

তিনি কিছুই করতে পারেন না। কারণ তার প্রেমিকা বাসার পাশেই থাকে। এখন বেশ ভালো সময় কাটছে তার, এই বছর ভার্সিটি না খুললেই খুশি।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদিয়া বললেন, ‘বাসায় আরাম করতে ভালো লাগছে। খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, নেটফ্লিক্স দেখছি। করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলুক।’

বগুড়া মেডিকেল কলেজের ফাইরোজ জানালেন পড়ালেখা ব্যাপারটাই তার কাছে টক্সিক মনে হয়। বরাবরই তিনি এর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পছন্দ করেন।

খুব ভালো লাগছে এভাবে থাকতে। অটো প্রমোশনের স্বপ্ন দেখছেন। ক্যাম্পাসে গেলেই প্রুফ পরীক্ষা শুরু হবে। তাই সারাজীবন বাসায়ই থাকতে চান।

এই গেল ছাত্র সমাচার। আর বেশিকিছু লিখে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করব না।

মাননীয়, পড়াশোনা জীবনের অনস্বীকার্য অংশ হলেও তা মহামাফরর জন্য হুমকির পথে। একদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অন্যদিকে সেশনজটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্রসমাজ আজ দ্বিধান্বিত। আশা করি প্রতিবারের মতো এবারও বিচক্ষণ কোনো সিদ্ধান্ত পাব। তবে আমরা ঘরেই ভালো আছি।

বিনীত,
পড়াশোনাবিমুখ সমাজের এক প্রতিনিধি

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper