ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দুঃসময়ে মানুষের পাশে...

করোনায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছাদবাগান

বিল্লাল হোসেন
🕐 ১:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২০

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। তাই এখনই উত্তম সময় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ছাদবাগান বা বাড়ির আঙিনায় বাগান হতে পারে উত্তম হাতিয়ার। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই বাড়িতে অবস্থান করছে। ফলে কাজের বাড়তি চাপ নেই বললেই চলে। তাই বেশিরভাগ সময়ই পরিবারের সঙ্গে বা শুয়ে-বসে কাটছে অনেক মানুষের। এদিকে করোনাভাইরাস ও বন্যার কারণে বাজার থেকে তরতাজা ফলমূল, শাকসবজি ও অন্যান্য পণ্য কেনা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হল ছাদবাগান বা বাড়ির আঙিনায় বাগান করা। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির ছাদে প্রচুর জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকে এই জায়গাগুলোতে মাটির টবে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফলমূলÑ আম, পেয়ারা, আমলকি, জাম, জামরুল, বরই ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি যেমন বেগুন, পুঁইশাক, ধুন্দল, ঝিঙে, লাউ, কুমড়া, বরবটি, টমেটো, শসা, মরিচ ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে।

অনেকেই আবার ভবনের গায়ে ঝুলন্ত বাগান করতে পছন্দ করেন এটিও করতে পারেন। আবার, যারা গ্রামে থাকেন তারা বাড়ির আঙিনায় এই অবসর সময়ে বাগান করতে পারেন। করোনার সময়ে ছাদবাগান বা বাড়ির আঙিনায় বাগান করা গেলে খুব সহজেই প্রতিদিনের খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব। যে ফলমূল ও শাকসবজি চাষ করা হবে তা সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও নিরাপদ। তাই ছাদবাগান নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিরাপদ ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর ছাদবাগান থেকে তোলা ফলমূল এবং শাকসবজি অবশ্যই বিষমুক্ত হবে তাই এগুলো খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। ফলে নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা, কমবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। কেননা বাজার করতে গেলেই জনসমাগমের মধ্যে যেতে হবে। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও ছাদবাগানের আরও গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে। সেগুলো হলÑ

প্রচুর অক্সিজেন উৎপন্ন করে যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।
বৃষ্টির পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে।
বিভিন্ন ধরনের পাখির আবাসস্থল তৈরি করে যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাগান করলে মানসিক প্রশান্তি আসে ফলে করোনকালীন দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
বৈশি^ক উষ্ণায়ন কমাতে সাহায্য করে।
রেডি-টু-ইট খাবারের প্রতি নির্ভরতা কমায়।
তাজা ফলমূল ও শাকসবজির জোগান দেয়।
ছাদকে বিভিন্ন ক্ষতিকর দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচায়। ফলে ছাদের জীবনকাল বৃদ্ধি পায়।
বিভিন্ন ধরনের শক্তি যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদির ব্যবহার কমায়। কেননা গাছপালা প্রাকৃতিকভাবেই পরিবেশকে ঠা-া রাখে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করে।
শহরে গাছপালা নেই বললেই চলে। তাই ছাদবাগান প্রতিষ্ঠা করা গেলে সবুজ এবং টেকসই নগরায়ন করা সম্ভব হবে।
জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান বিশে^ শিল্পায়নের ফলে বায়ুদূষণ বেড়েছে মারাত্মক হারে। বাংলাদেশের বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর এতে ভারী ধাতু, বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক ইত্যাদির মাত্রা সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ছাদবাগান ও আঙিনায় বাগান করা খুবই জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, গাছপালা বাতাসের এই দূষণের মাত্রাকে কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বেশি বেশি বাগান করা হলে বাতাসের মান আস্তে আস্তে উন্নত হবে এবং আমরা নির্মল বাতাসে নিঃশ^াস নিতে পারব।
বিশেষ করে শহরাঞ্চলে শব্দদূষণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। শব্দদূষণ কমানোর একমাত্র পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উপায় হচ্ছে বৃক্ষরোপণ করা। ছাদে ও বাড়ির আঙিনায় প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা গেলে শব্দদূষণ কমানো সম্ভব হবে।
যথাযথ প্রক্রিয়ায় ছাদবাগান ও আঙিনায় বাগান করা গেলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে টাকা উপার্জন করাও সম্ভব।
বাগানে কাজ করার ফলে শারীরিক ব্যায়ামও হয়ে যায়।
সর্বোপরি ছাদবাগান ও বাড়ির আঙিনায় বাগান খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের অন্যতম হাতিয়ার। এটি একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব মাধ্যমও বটে। সুতরাং সুস্থ-সবল জাতি গঠনে এই বাগানের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত ছাদে বা বাড়ির আঙিনায় বাগান করা তাহলে আমরা খাদ্যে স্বাবলম্বী হতে পারব এবং নিরাপদ খাদ্যেরও জোগান দিতে পারব। একইসঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। করোনাকালে ছাদবাগান হোক নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের প্রধান জোগানদাতা। হ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper