ঢাকা দক্ষিণে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে বিড়ম্বনা
তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২০
রাজধানীতে বিদ্যুতের ঝুলন্ত তার ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান অব্যাহত রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ কারণে নগরীতে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস করতে পদে পদে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি খোদ আদালত পাড়ায় দেখা দিয়েছে মারাত্মক সমস্যা। এছাড়াও আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার, ই-কর্মাস, কল সেন্টার, ব্যাংক ও হাসপাতালের মত জরুরি সেবা অনলাইনে পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব সমস্যা কোন আমলে নেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলেন, মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহারে ঝুলন্ত তার অপসারণ করার বিষয়ে নগরবাসীকে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতেই এই অভিযান চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী, আইন বিভাগসহ ক্ষণিকের জন্য যাদের সমস্যা হচ্ছে তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় অনলাইনে ক্লাস করার পরামর্শ দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এছাড়া এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে না। এ লক্ষে দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ এখনি এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করেছে। নগরবাসীর অভিযোগ কোনো নোটিস কিংবা এলাকায় মাইকিং ছাড়াই উচ্ছেদ চালানো হয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
আর অনলাইনে দেশ-বিদেশে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বেগ পেতে হয়েছে। বিনোদন প্রেমীদের চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখতে বিঘœ ঘটছে। করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রাখতে অনলাইন নির্ভরতা বাড়লে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটির লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য ঘরে বসেই অনলাইনে স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার নানা স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস, চাকরিজীবীরা ভার্চুয়াল মিটিং অফিস পরিচালনা এবং ব্যবসায়ীরা অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তা নিমেষেই ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম বিঘ্নিত হচ্ছে।
ডিএসসিসি তথ্য মতে, মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস গত ৩০ জুলাই বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে ইন্টারনেট ও ডিসের ক্যাবল অপসারণ করার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সিটি করপোরেশন ৫ আগস্ট ক্যাবলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এই ঘোষণার পর আর নতুন করে কোনো ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ কারণে মাইকিং করা হয়নি।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বলেন, ডিএসসিসির মেয়রের নির্বাচনি ইশতেহারে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকারের কথা ছিল। তা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া ক্যাবল ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশনের সড়ক ও পোল ব্যবহারের কোনো অনুমোদন ছাড়াই কাজ করছে। আইনে আছে সিটি করপোরেশন জায়গা ব্যবহার করতে হলে ফি দিতে হবে। অনুমতিও নিতে হবে। অনুমোদন নেই এ কারণে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এটা মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহারের সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু গতকাল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, নগরের সৌন্দর্য ও দৃষ্টিনন্দন করতে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়ার আগে ক্যাবল অপারেটদের বিষয়টি জানানো প্রয়োজন ছিল। কারণ মাটির নিচ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার বিষয়টিও সরকারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না করেই কোটি কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট করলে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানে পড়বে। মেয়র সাহেব একটি বার বিষয়টি ভাবার প্রয়োজন মনে করেনি। এটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ বলেন, ডিএসসিসির ইন্টারনেট ও ডিস ক্যাবল কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত অমূলক। ক্যাবল অপারেটররাও চায় নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাক বহির্বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের আলোকসজ্জ্বা বাড়লে আমাদের গর্ব। সব দিক চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে কাজ করলে সবার জন্য ভাল বলে জানান তিনি।
করোনা মহামারিতে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারেনি। এ অবস্থায় উচ্ছেদ করা হচ্ছে আমাদের লোকসান কে দেবে। এখন বিদ্যুৎ বিল, অফিস ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন নিয়ে বিপাকে। উচ্ছেদের খবরে কোনো বাসায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা সবই অনলাইনে চলছে। ডিএসসিসির মেয়রের কাছে দাবি করোনাকালীন মুহূর্তটা বিবেচনায় নিয়ে যেন ক্যাবল উচ্ছেদ বন্ধ রাখার দাবি জানান তারা।