সিনহার ফিল্ম টিমের সদস্যদের কী অবস্থা
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া
🕐 ১০:২৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৭, ২০২০
পুলিশের গুলিতে খুন হওয়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরির সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রানী দেব কারাগারে। আর তাহসিন রিফাত নুর অভিভাবকের জিম্মায় ছাড়া পেলেও উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটছে তার। ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করতে তারা গত ৩ জুলাই কক্সবাজার আসেন। মেজর সিনহা ছিলেন ফিল্মটির প্রযোজক। ‘জাস্ট গো’ নামক একটি ইউটিউব প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ডকুমেন্টারি ফ্লিমটি তৈরির কাজ চলছিল। তারা তিনজনই ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী।
সাহেদুল ইসলাম সিফাত, শিপ্রা রানী দেবনাথ তৃতীয় বর্ষে এবং তাহসিন রিফাত নুর শেষ বর্ষের ছাত্র।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে গত ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের গুলিতে খুন হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা। খুনের ঘটনার পরপরই শিপ্রা রানী দেব ও তাহসিন রিফাত নুরকে হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্ট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, নীলিমা রিসোর্ট থেকে পাঁচটি বিদেশি মদের বোতল, ১ লিটার বাংলা মদ ও এক পোটলা গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারের পর তাদের রামু থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাহসিন রিফাত নুরকে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আর উদ্ধারকৃত মালামালসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় একটি মামলা করে শিপ্রা রানী দেবকে গত ১ আগস্ট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। একই সঙ্গে মামলার আইও রামু থানার এসআই দীপংকর আসামি শিপ্রা রানী দেবের বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালত গত ৫ আগস্ট রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য রাখেন। কিন্তু ৫ আগস্ট আদালতে রিমান্ড আবেদনটির কোনো শুনানি হয়নি। শিপ্রা রানী দেবনাথ তখন থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে।
ঢাকার স্টামফোর্ট ইউনিভার্সিটি সূত্র জানা গেছে, শিপ্রা রানী দেবনাথ গত ৮ দিন আগেও অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিয়েছেন। ফটোগ্রাফার হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার হাজারাহাটি গ্রামের নব কুমার দেবনাথের কন্যা শিপ্রা রানী দেবনাথ। নব কুমার দেবনাথ বিজিবির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। শিপ্রা রানী দেবনাথ ২ ভাই বোনের মধ্যে বড়।
মেজর সিনহা নিহত হওয়া নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মোট ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। তার মধ্যে সিনহার সঙ্গে তার প্রাইভেটকারে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আসামি করে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা হয়। তার একটি ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং অপরটি সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে। গত ১ আগস্ট দায়েরকৃত মামলা দুটির বাদী হন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত। তিনি সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের করা হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামি।
এ মামলায় সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। তখন থেকে সাহেদুল ইসলাম সিফাত কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন। ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বেশ সুনাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা সহপাঠীরা।
৩৬ বছর বয়সী সাবেক সেনা অফিসার সিনহা মো. রাশেদ খানসহ তার টিমের চার সদস্য গত ৫ জুলাই কক্সবাজার পৌরসভার মাধ্যমে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে করোনার নমুনা টেস্ট করান। টেস্টে তাদের রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহারকৃত ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ সাত আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে শুনানি শেষে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এ আদেশ দেন। একই দিন সন্ধ্যায় আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে র্যাব।