দুর্বৃত্তের কবল থেকে মুক্তি পাক চামড়া বাজার
সম্পাদকীয়
🕐 ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৭, ২০২০
চলতি বছর কোরবানিকৃত গবাদি পশুর চামড়াকে ঘিরে যে ‘তুঘলক্তি কাণ্ড’ দেখা গেল, এমনটি আর কখনো হয়নি। বিগত কয়েক বছর ধরে চামড়ার বাজারে বিরাজ করছিল নানামুখী অস্থিরতা। গুটিকয়েক লোক এতে লাভবান হলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের গুনতে হয়েছে লোকসান। অন্যদিকে চামড়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধাভোগী যারা, বঞ্চিতই থেকে যেতে হয়েছে তাদের। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চামড়ার বাজার স্বাভাবিক রাখতে মাঠপর্যায়ের ব্যবসায়ী, চামড়া থেকে সুবিধাভোগী ও চামড়া রপ্তানি করে বৈদেশিক আয় ধরে রাখতে প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তা দিয়েছিল সরকার। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কাঁচা চামড়া রপ্তানির। শেষ পর্যন্ত সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে লাগল না। অশুভ সিন্ডিকেট সরকারের এ উদ্যোগ কাজে লাগাতে দেয়নি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চামড়ার সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়াই ফটকাবাজের দখলে, চামড়ার প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাত প্রক্রিয়ার সঙ্গে আধুনিক ও দক্ষ মানুষ যুক্ত করা গেলে চামড়ায় যে সম্ভাবনা আছে, তা কাজে লাগানো সম্ভব। সারা বছরে চামড়ার অর্ধেকের বেশি সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে। এ বছর করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যন্ত। বাদ যায়নি কোরবানিকেন্দ্রিক চামড়া সংগ্রহও। এ বছর কোরবানির ঈদের আগে লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহে গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম দাম বেঁধে দেওয়া হয়। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে ধরা হয় প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা। সারা দেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা। কিন্তু মাঠপর্যায়ে চামড়া বিক্রেতাদের অভিযোগÑ ধার্য করে দেওয়া দামের এক-তৃতীয়াংশও পাওয়া যাচ্ছে না।
চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুমে ব্যবসায়ীরা যাতে দাম পায় এজন্য সরকার ব্যাংক ঋণ ও চামড়ার দাম বেঁধে দেয়। তারপরও চামড়ার দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ফল আসছে না। অভিযোগ আছে আড়ৎদাররা চামড়ার দাম দিচ্ছে না। বছরের অধিক সময় ধরে চামড়ার বাকি টাকা পাচ্ছে না। মূলত তারাই চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে যেমন চামড়া তেমনই দিচ্ছি। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চামড়ার দাম পাওয়া, না পাওয়ার পেছনে আমাদের কোনো হাত নেই। লবণযুক্ত চামড়া আমাদের কাছে যখন আসবে তখন সরকার নির্ধারিত দামে ক্রয় করব।
সঠিক পরিকল্পনার অভাবে শিল্পটি শিরদাঁড়া মজবুত করতে পারছে না বলে মনে করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, নানামুখী অযতেœ পড়ে আছে দেশের চামড়া শিল্প। ঈদ এলে চামড়ার নানা সম্ভাবনার কথা বলা হলেও চামড়া নিখুঁতভাবে বের করার প্রশিক্ষণ নেই। সরকার নির্দিষ্ট স্থানে প্রশিক্ষিত মানুষ দ্বারা পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে পশু জবাই করার সময় বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চামড়া শিল্পের বিদ্যমান নৈরাজ্য বন্ধে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। এই খাতে অনেক মানুষের রুটি-রুজির বিষয় জড়িত রয়েছে। দুর্বৃত্তের লোভের বলি হয়ে এই শিল্প যেন পথ না হারায় সংশ্লিষ্টদের সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228