ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে প্রাণের উচ্ছ্বাস

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী
🕐 ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০২০

নির্মল বিনোদনের খোঁজে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পাড়ে নেমেছে মানুষের ঢল। কিন্তু করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। কারও মুখে মাস্ক আছে; কারও নেই। এর মধ্যেই সদ্যযৌবন ফিরে পাওয়া পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই।

পদ্মা নদী ঘিরেই রাজশাহীর মানুষের আবেগ, অনুরাগ, বিনোদন আর ভালোবাসার টান। যেন বিনোদনের সব সুর মিলেছে পদ্মা নদীর মোহনাতেই। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পদ্মার কূলে থাকছে বিনোদন পিপাসুদের ভিড়। কদিন আগের মরা পদ্মা, উজান থেকে আসা ঢল আর ভারি বর্ষণে বর্ষায় টইটম্বুর হয়ে উঠেছে।

নদীর উত্তাল স্রোত আছড়ে পড়ছে পদ্মার পাড়ে। তাই ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির টানে সবাই ছুটে যাচ্ছেন পদ্মার পাড়ে। মুখের মাস্ক খুলে নির্মল বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন বিনোদনপ্রেমীরা। ভরা পদ্মার প্রতি মানুষের যেমন টান থাকে, তেমনই আছে এখন। করোনার ভয়ে এতটুকুও হেরফের হয়নি।

ঈদের চতুর্থ দিন বিকালে তাই জনসমাহারে ভরে উঠেছে পদ্মা নদীর পাড়। কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠেছে তীরবর্তী গোটা এলাকা। নগরীর পঞ্চবটি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ ছুঁয়ে পদ্মার পাড় সবার জন্য হয়ে উঠেছে সেরা বিনোদনের ঠিকানা।

বৃষ্টি হওয়ার ভ্যাপসা গরম কেটেছে। নেমেছে তাপমাত্রা। তাই এমন ঠা-া আবহাওয়ায় সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন পদ্মার পাড়ে। ঈদের খুশিতে শিশু কিশোরা হৈ চৈ করছে। ঈদ আনন্দে মেতে উঠতে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় উঠে ভরা পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তরণ-তরুণীরা। যদিও সারা বছর মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে রাজশাহীর পদ্মার তীর। এর ওপর এখন যোগ হয়েছে ঈদের বাড়তি আনন্দ। ঈদের ছুটি শেষ হলেও জনসমাগম বেড়েছে দ্বিগুণ। ঘরবন্দি মানুষগুলো অখণ্ড অবসর উদযাপনে চলে গেছেন পদ্মায়। নদীর বয়ে চলার মাঝেই আটপৌরে জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলছেন। আর নদীর স্রোতের শব্দে খুঁজছেন মানসিক প্রশান্তি।

মহানগরীর কাজলা ফুলতলা থেকে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সব জায়গাতেই এখন মানুষের জটলা। রাজশাহীতে হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন স্পট, তার মধ্যে মানুষের পছন্দের তালিকায় এখনো সবার ওপরেই রয়েছে পদ্মাপাড়। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই সমান পছন্দ পদ্মা। তাই করোনা আতঙ্কের মধ্যেও বিনোদন পিপাসুরা ভিড় করছেন সেখানে। এতে পদ্মাপাড়ে বাদাম, চটপটি থেকে শুরু করে ফুটপাতের সব দোকানগুলোর ব্যবসাও হচ্ছে ভালো। কর্মস্থল শুরু হলেও বিকালে ছুটির আমেজ বিরাজ করছে সেখানে।

নগরীর কাজলা এলাকা থেকে ঘুরতে আসা অমি বলেন, করোনার মহামারিতে বর্তমানে সব বিনোদন কেন্দ্রই বন্ধ। ঈদের দিন থেকে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে দর্শনার্থীরা যাচ্ছেনও। কিন্তু উন্মুুক্ত পরিবেশ, মুক্ত বাতাস আর নির্মল বিনোদনের জন্য পদ্মার জুড়ি নেই। পদ্মা ঘেঁষে থাকা মহানগরের লালন শাহ পার্কের পাশেই ভিড়ছে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা।

সেখানকার এক মাঝি রাকিবুল জানান, ঈদের মৌসুমে পদ্মা পাড়ে ভিড় হতো অসখ্য মানুষের। করোনার কারণে মানুষ অনেক কম। এরপরও নদী ভরা থাকায় তাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। একেকজন ২০ থেকে ৫০ টাকা দিয়ে নদীতে এক চক্কর ঘুরে আসতে পারছেন। কেউ কেউ ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় নৌকা রিজার্ভ নিয়ে নদীবক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দিনশেষে কম করে হলেও তাদের এক থেকে দেড় হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে।

পদ্মার তীরে থাকা একজন চটপটি বিক্রেতা বলেন, করোনার কারণে এতদিন বিক্রি প্রায় বন্ধই ছিল। কিন্তু ঈদের ছুটিতে মানুষ আবারো নদীর ধারে বেড়াতে আসছেন। এই সুবাদে টুকটাক করে বিক্রিও শুরু হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তার মত অনেক ব্যবসায়ীই এখন পেয়ারা, আমসহ বিভিন্ন পদের আচার, ফুচকা-চটপটি ইত্যাদি মুখরোচক খাবার পরিবেশন করছেন। অনেকে তা কিনেও খাচ্ছেন। এতে তাদের কিছুটা নগদ আয়ও হচ্ছে বলে জানান চটপটি বিক্রেতা।

 
Electronic Paper