রেডিওতে ক্লাস প্রচারের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:২২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৪, ২০২০
করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত দেশের শিক্ষা খাত। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থগিত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। করোনা মহামারীতে প্রকট হচ্ছে সেশনজটের আশঙ্কা। পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। সংকট সমাধানে প্রথমে অনলাইন ক্লাসের ব্যাপ্তি বাড়ায় সরকার। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। তাই সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরই স্কুল-কলেজে যাবে ছাত্রছাত্রীরা।
এদিকে শিগগিরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি রেডিওতে ক্লাস সম্প্রচার শুরু হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জানাতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফসিউল্লাহ জানান, রেডিও সম্প্রচারের বিষয়ে ইতোমধ্যে আমাদের রেকর্ডিং কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। শিগগিরই আমরা রেডিও সম্প্রচার শুরু করব। তবে এ কার্যক্রম শুরুর আগে আমরা অভিভাবকদের বিষয়টি খুব ভালোভাবে জানাতে চাই। তাই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অভিভাকদের বিষয়টি জানাতে।
তিনি আরও জানান, পাশাপাশি রেডিওগুলোতে এ সংক্রান্ত প্রচারণার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং এটুআই সমন্বয় করে রেডিওতে প্রচারের কন্টেন্ট তৈরি করবে। বাংলাদেশ বেতার এবং ১৬টি কমিউনিটি রেডিওতে এগুলো প্রচার করা হবে। এফএম রেডিও বা স্মার্টফোনের রেডিও অপশন থেকে এসব ক্লাস শোনা যাবে। মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত ৭ এপ্রিল থেকে টেলিভিশনে সম্প্রচার করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। ইউনেস্কোর অর্থায়নে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। তবে টিভি না থাকায় অনেকেই ক্লাস দেখতে পাচ্ছেন না বলে জানা যাচ্ছে। তাই, রেডিওতে ক্লাস প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৬ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর ফলে পিছিয়ে যায় এইচএসসি পরীক্ষাও। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দেখা দিচ্ছে সেশনজটের আশঙ্কা।
শিক্ষা কার্যক্রম যাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে আশঙ্কা থেকে প্রথমে মাধ্যমিক স্কুলের জন্য সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনা শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উদ্যোগে শুরু হয় প্রাথমিকের ক্লাস। জানা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি সংকটের কথা মাথায় রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার তাগাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে ইউজিসির আহ্বানের পরও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তার অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারছে না সফলভাবে।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। আবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে একটি বা দুটি বিভাগে সপ্তাহে একটি, দুটি ক্লাস নিচ্ছে। তুলনামূলকভাবে বড় প্রতিষ্ঠান, ডিজিটালাইজ না হওয়া এবং শিক্ষার্থীরা গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ কাজে সফল হতে পারছে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান সেমিস্টার গত এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সেমিস্টার কোর্স অনলাইনব্যবস্থায় পাঠদানের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম সম্পন্ন করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ সেমিস্টারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।