ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মূলহোতা গ্রেফতারের পরও প্রশ্নপত্র ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০২০

প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার তিন দিন আগে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। কিন্তু প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব হয়নি। গ্রেফতারের আগেই জসীমের ভায়রা সামিউল জাফর প্রশ্ন নিয়ে পালিয়ে যায়। জসীমের স্ত্রী শারমিন আরা জেসমিন শিল্পী মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রশ্নপত্রেই ওই বছর ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল। পাঁচ বছর পর সম্প্রতি জসীম উদ্দিনসহ এ সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্য সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জানা গেল এসব তথ্য। সেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সারা দেশে আন্দোলন এমনকি ফল বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে রিটও করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর অনড় থাকায় জালিয়াতি করে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, জসীমের নেতৃত্বে ভয়ঙ্কর এ সিন্ডিকেট ১৪ বছর ধরে মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। চক্রের হোতা জসীম উদ্দিনের খালাতো ভাই আবদুস সালাম স্বাস্থ্য অধিদফতরের ছাপাখানার মেশিনম্যান। ওই ছাপাখানা থেকেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন জসীমের কাছে পৌঁছে দিত।

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ২০০৬ সালে সালামকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে বিভাগীয় মামলাও হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর সে আবার সেই পদে ফিরে আসেন। ২০১১ সালে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে জসীম উদ্দিনও গ্রেফতার হয়েছিল। এ সময়েই সালামের নাম উঠে আসে। কিন্তু তাদের আশ্রয়দাতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সিআইডির সূত্র বলছে, জসীমের নেতৃত্বে পারিবারিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্নফাঁস হচ্ছে।

জসীমের খালাতো ভাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেশিনম্যান আবদুস সালাম প্রশ্ন ছাপানোর সময় তা ফাঁস করত। জসীম উদ্দিন সেই প্রশ্নপত্র সারা দেশে ছড়িয়ে দিতেন। সারা দেশে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতের তার ঘনিষ্ঠজনরা। এর মধ্যে রয়েছেন তার ভাতিজা পারভেজ খান, বোনজামাই জাকির হোসেন দীপু, ভায়রাভাই সামিউল জাফর, দুলাভাই আলমগীর হোসেন, স্ত্রী শারমিন আরা জেসমিন শিল্পী এবং ভাগ্নে রবিন। প্রশ্নপত্র ফাঁস করার বিনিময়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তারা হাতিয়ে নিতেন ১০-১২ লাখ টাকা।

এভাবে সালাম কোটিপতি হয়ে বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার ফাঁস হয়েছে। প্রেসের মেশিনম্যান সালাম ও তার খালাতো ভাই জসীম দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে তোলে। তাদের মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থী টাকার বিনিময়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমরা এ পুরো চক্রটি চিহ্নিত করেছি। অনুসন্ধান এখনো চলমান রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে সালামকে মেশিনম্যানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় কিছুদিন পর আবার সালামকেই আগের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানোর সময় সালামকে ছাপাখানায় প্রবেশ করানো হতো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এমনকি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেফতার সালামের খালাতো ভাই জসীম অবাধে ছাপাখানায় আসা-যাওয়া করত।

এদিকে ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতা জসীম উদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন ব্যাংকের এক কোটি ২১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা সমমূল্যের বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি চেক ও নগদ ৩৮ হাজার টাকা, দুটি মডেল প্রশ্নের ৮৮ কপি প্রশ্ন ও উত্তরপত্র উদ্ধার করা হয়। চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেও সে বছর ঠেকানো যায়নি প্রশ্নফাঁস। তখন স্বাস্থ্য অধিদফতর তড়িঘড়ি করে ফলও প্রকাশ করে। এ ফল বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন একজন আইনজীবী। তারপরও সেই পরীক্ষার ফল বাতিল করা হয়নি।

 
Electronic Paper