ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনা পরিস্থিতিতে শিশুদের লেখাপড়া

উজ্জল কুমার বিশ্বাস
🕐 ৩:১১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২০

কোন সংক্রামক রোগ যখন বিশাল একটি জনগোষ্ঠির মাঝে খুব দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পড়ে; তখন বলা হয় রোগটি মহামারী আকার ধারন করেছে। বিশ্বে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের মহামারী লেগেই আছে এবং এতে কোটি কোটি মানুষেরে প্রাণ হানিও ঘটেছে। এসব মহামারীতে প্লেগ এবং ফু এর কথাই বেশি শোনা যায়। অদৃশ্য নিরব ঘাতক হিসাবে ফু ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ানো মহামারী অধিক আতংকের। বিশ্বে এ যাবৎ প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট-বড় মহামারীর কথা শোনা যায়।

৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ‘‘দ্যা প্লেগ অব এথেন্স’’ থেকে শুরু করে, ১৩৪৬ এর দ্যা বøাক ডেথ, ১৬৩৩ সালের স্মল পক্স, ১৯৮৪ এর এইসআইভি, ২০০৩ এর সার্স, ২০০৯ এর সোয়াইন-ফু, কলেরা, ২০১২ এর হাম, ২০১৪ এর ইবোলা এবং বর্তমানের কোভিড-১৯ ভাইরাস এর কারনে সৃষ্ট মহামারীতে মানুষের প্রাণহানির সাথে সাথে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং সামজিক অস্থিরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার উপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। শিক্ষার সাথে অর্থনৈতিক অবস্থার একটা যোগসূত্র রয়েছে, তাই বর্তমান মহামারীতে শিক্ষাব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি ব্যহত হচ্ছে।

বাংলাদেশে করোনার থাবার কারনে গত ১৭ই মার্চ মাস হতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যে: ১ম সাময়িক পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। ২য় সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আামাদের দেশে ১ম শ্রেণি থেকেই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু আছে এবং লেখাপড়া গতিশীল রাখতে এটাই প্রধান পন্থা হিসাবে পরিগনিত হয়।

এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালু রাখতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে:

১। রাজধানীসহ সারাদেশের অল্প কিছু স্বনামধণ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পাঠদান এবং অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষাও গ্রহণ করছে। এই পদ্ধতির সঠিক এবং কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যদিও সংসদ টেলিভিশন বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত পাঠদান সম্প্রচার করছে। তবে ক্যাবল সুবিধা না থাকায় এবং অভিভাবকের অসচেতনতায়/অনীহায় অনেক ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

২। ক্যাচমেন্ট ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের খোঁজ নেওয়া, রুটিন করে প্রতিদিন ৫-১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে মোবাইল বা অন্য কোন মাধ্যমে যোগাযোগ করে সরাসরি তাকে লেখাপড়ার বিষয়ে সুনিদ্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া এবং পরবর্তিতে ফিডব্যাক নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩। যারা স্থানীয় শিক্ষক, তারা সুবিধাজনক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন। এতে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং অভিভাবকও সচেতন হবে।

৪। এই সময় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরাও বাড়িতে অবস্থান করছে। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খোঁজ বা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে তাদের কাজে লাগানো যেতে পারে।

৫। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জনপ্রিয় বেসরকারী টেলিভিশনেও পাঠদান প্রচার বা নিউজ স্ক্রলে সংবাদ প্রচার করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৬। উপজেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা পরিষদ এর সহায়তায় স্থানীয় ক্যাবল নেটওয়ার্কে উপজেলার পারদর্শী কিছু শিক্ষকদের দিয়ে রুটিন অনুসারে পাঠদান প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারেন।

৭। ”পরীক্ষার জন্য লেখাপড়া’’ এই ধারা থেকে বেরিয়ে ”জীবনের জন্য লেখাপড়া’’ এই চেতনায় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে লেখাপড়ার প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।

৮। শিক্ষার্থীর বাড়িতে যদি বড় কোন ভাই-বোন থাকে তাহলে তাদেরকেও সংসদ টিভি বা অন্য কোন চ্যানেলের পাঠদান শিশুদের দেখানো এবং বাড়ির কাজ তদারকী করতে বলা যেতে পারে।

৯। স্থানীয় উপাসনালয়ের মাইকে মাঝে মধ্যে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া যতে পারে।

১০। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মী বা স্বাস্থ্যকর্মী যারা প্রতিনিয়ত এলাকায় মুভমেন্ট করেন, তাদেরকে সহায়ক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বৈশ্বিক এই মহামারী কাটিয়ে পৃথিবী আবার নতুন ছন্দে মুখনিত হবে, জীবন পাবে নতুন শক্তি, নতুন প্রেরণা। সেই নতুন সূর্য্যে আলোকিত হবে সবার ভুবন।

ততোদিন সবাই ঘরে থাকি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। নিজে সুস্থ থাকি এবং অন্যকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করি।

(উজ্জল কুমার বিশ্বাস, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মধুখালী, ফরিদপুর)

 
Electronic Paper