ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শাহেদ আলীর অপ্রকাশিত কবিতা

সংগ্রহ ও ভূমিকা : এনাম রাজু
🕐 ১২:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২০

‘জিবরাঈলের ডানা’ খ্যাত বাংলা সাহিত্যে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব কথাশিল্পী শাহেদ আলী। সাহিত্যে যে শাখায় তিনি হাত রেখেছেন সেখানেই ফলেছে উজ্জ্বল সাহিত্যরত্ন। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সৈনিক। একাধারে ইসলামি চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, অনুবাদক, গবেষক ও অধ্যাপক ছিলেন।

উভয় বাংলা সাহিত্যে তাকে ছোটগল্প ও অনুবাদকর্মে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। জিবরাঈলের ডানা, একই সমতলে, অতীত রাতের কাহিনী, অমর কাহিনী, নতুন জমিনদার নামক ছোটগল্পের বইগুলো শাহেদ আলীকে পৌঁছে দেয় পাঠকদের খুব কাছে। উপন্যাস- হৃদয়নদী, অনুবাদকর্ম : মক্কার পথ (মূল : মুহাম্মাদ আসাদ), ইতিবৃত্ত (মূল : হিরোডাটাস) অন্যতম। এছাড়াও শিশুদের জন্য লেখা- রুহির প্রথম পাঠ, সোনার গাঁয়ের সোনার মানুষ, ছোটদের ইমাম আবু হানিফা। শাহেদ আলী ছোটগল্পের জন্য ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি এবং ১৯৮৯ সালে একুশে পদক লাভ করেন। শাহেদ আলীর মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী ভাষাসৈনিক, কবি ও গল্পকার অধ্যাপক চেমন আরা প্রবন্ধ সমগ্র (এক), অপ্রকাশিত উপন্যাস ‘কাদা মাটির সাতকাহন’ গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেন। এছাড়াও শাহেদ আলীর রচিত অপ্রকাশিত আরো কিছু গল্প, উপন্যাস, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ সমগ্র (দুই), চিঠিপত্র ‘কথাশিল্পী শাহেদ আলী-চেমন আরা ট্রাস্ট’ কর্তৃক প্রকাশের কাজ সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায়। কথাশিল্পী শাহেদ আলী অসংখ্য কবিতাও রচনা করেছেন। যা তার জীবদ্দশায় প্রকাশ করতে পারেননি। সেই অপ্রকাশিত কবিতা থেকে কয়েকটি কবিতা পাঠকের জন্য নিবেদন করা হল। আগামীতে আরো প্রকাশের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

 

নিয়তি

ধাতব মনের হীরাকাটা ধারে চিত্ত
কেটে কুচিকুচি, শংকা কিসের আর
হও না পাষাণী, ধুকে এ কপাল নিত্য
করবো বুকের যন্ত্রণা সংহার।

প্রস্তরে মাথা ধুকে পাই যন্ত্রণা
সমাজের দাস, তবু মুক্তির সাধ
রক্তে আমার আনে মহা মন্ত্রণা
প্রলয় তুফানে ছিন্ন ঘরের ছাঁদ।

নিয়তির লিপি থির বিদ্যুৎ লিখা
আকাশের গায়েÑ বিচ্ছেদ অনিবার্য;
তবু প্রোজ্জ্বল হৃদয় অগ্নিশিখা,
মৃত্যু জেনেও মরণে করে না গ্রাহ্য।

০৮.০৯.৬২


নির্জন মেঘ

কুঞ্চিত চুলের ঢেউ বুকে পিঠে ছড়িয়ে এলিয়ে
শাদা বুটিদার শাড়ি তনু অংগে জড়িয়ে পেঁচিয়ে
আজ তুমি বসেছিলে ভোরবেলা পড়ার টেবিলে
সমুখে জানালাখানি নিজ হাতে খুলে দিয়েছিলে
উন্মনা ভ্রমর সম ঘুরে ঘুরে মুগ্ধ সূর্যকর
চুম্বন করিতে ছিলো দেহতর, আনন্দ মুখর।

দুয়ারে দাঁড়ায়ে তব মুখপানে চেয়ে অকস্মাৎ
বিদ্যুৎতের ক্ষিপ্রতায় কে যে এলো সুখের ধ্রুপতি
আমার বুকের মাঝে, দেখিলাম সৌন্দর্য প্রতিমা
জানিছো আলোর মাঝে, মুখে তব সূর্য অরুনিমা
তোমার দেহের জেগতি হাসিতেছে চিলেকোঠা ভরি
তার মধ্যে ভেসে আছো অবাস্তব কল্পনা আধারী।
বিচ্ছুরিদে দেহ থেকে নরম নরম আলো কণা
তোমারে ঘিরে যেন সংগীতের অব্যক্ত মূর্ছনা!
সুস্মিত আনন তুমি মোর প্রাণে তাকালে যখন,
পড়িলো না চক্ষে পাতা, নির্নিমেষ ফেলিয়া নয়ন
চাহিনু তোমার পানে, বারবার বাক্যহীন সুখ
কী এক ব্যথায় ফের পরিপূর্ণ হয়ে গেলো বুক!

১৭.০৯.১৯৬২

 

পীরিতি

পীরিতের শেল বুকে যার কলংক তার অলংকার
কুল মানের ভয় নাই রে তার;
পীরিতের নয় নিশানি, সদায় থাকে উদাসিন গোÑ
ওগো চে’রা মলিন থাকে তার
দিবানিশি বে-কারার।
ক্ষুধা নিদ্রা নাই তার মনে, জলধারা দুই নয়নে গো!
ছির ঘোরে প্রেম ধুন্দে-দিবানিশি ইন্তেজার।
হাসি-খুশি নাই তার মনে, সদায় থাকে ঘোর নয়নে গো!
ওগো লাজ ভয় নাই তার-কলঙ্ক তার অলঙ্কার!
প্রথম পীরিতে মজা দ্বিতীয় পীরিতে সাজা গোÑ
তারা কেওরের কথা নাহি শুনে, কেবল বন্ধু বন্ধু সার।


দেহ-জ্যোতি

মৌনবতী গো ধবধবে শয্যায়
অংগ রেখো দূর হিংলাজ যাত্রী!
(আপনার মনে পড়ছে এ কোন গ্রন্থ?)
পাপড়ি-নরম আলোকের বন্যায়
ভাসে কী যে সুখ, ঘনায়ে এলো যে রাত্রি।
(মুখময় ভাসে শান্তি যে অফুরন্ত)

আঁধারে যদিও মগ্ন বহির্বিশ্ব
লক্ষ সিতারা তবু আসমানে জ্বলে
তবু চিলেকোঠা, একি অপরূপ দৃশ্য
সয়লাব যেন বিজলি আলোর ঢলে।

হেরি মুহূর্তে মানিলাম বিস্ময়
রুশ্নির মাঝে আলোর মূর্তি হেন
বসে আছো তুমি সুঠাম অংগময়
জোছনার ঢেউ নৃত্য করিছে যেন।

বংকিম গ্রীক বেকায়ে চাহিলে আর
নয়নের তারা মুহূর্তে টলোমলো
তোমার দেহের জ্যোতিতে অন্ধকার
বিতাড়িত তাই, চিলেকোঠা ঝলোমলো।

১৭.০৯.৬২

 

তুমি

তোমার দেহের লাবণ্যে ধরা পেয়েছি ‘খুবি’
সমুদ্র জলে ধোওয়া সু-শুভ্র উজল ‘রুবি’।

তোমার চলার ছন্দে জগৎ নৃত্য পরা
তব নিস্কাশে জাগে বসন্ত মৃত্যু হরা

তব সলজ্জ হাস্যে উছলে স্বর্গ সুধা
জড়িত তোমার আঁখি পল্লবে প্রণয় সুধা

তোমার চোখের আলোকে উজ্জ্বল আঁধার ধরা,
তব কণ্ঠের রাগিনীতে দূর ক্লিন্ন জরা

পবিত্র তব হৃদয়-রঙে আকাশ নীল
তব জোয়ানীর সুরভি স্নিগ্ধ এই নিখিল।

১৬.০৯.১৯৬২

 

মন

মনরে বেলা গেল সন্ধা হইল, ভুলিয়া রইলাম কারে দেখি;
সঙ্গের সাথীরা সবাই দিয়ে যায়রে ফাঁকি।
মনরে হুশ, গেল বুদ্ধি গেল, চোখের গেল জ্যোতি,
কারে লইয়া করবাও তুমি এইভাবে বসতি।
মনরে আক্কেল ফইম গেল, তনটির গেল বল,
কও তো দেখি পাগল মন আর কি বা সম্বল?
মনরে ভবে আইচায় বেপারেতে লইয়া পরধন,
সব খোয়াইলাম তরে, এখন কি নাইয়া গমন?
মনরে স্ত্রী-পুত্র ভাই বন্ধু কেউ না যাবে সঙ্গে,
বিপাকে ঠেকিয়া কাঁন্দে ফকির জী অলঙ্গে।

 

তুমি আর আমি

তুমি আর আমি যেন এক ঝিনুকের দুই খোল
মধ্যে আমাদের প্রেম, মুক্তাদানা স্বচ্ছ সমুজ্জ্বল।

 
Electronic Paper