ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভুবন আমার রাঙাল সুরে

মৃত্তিকা দেবনাথ
🕐 ১২:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০

যখন আধো আধো কথা বলতে শিখি তখন থেকে একটু একটু করে গান গাইতে থাকি। আমার মা, মামা, দাদুরা সবাই গান করতেন। মায়ের কাছ থেকেই মূলত সংগীতসত্তাটি পাই। প্রতিদিন ভোরবেলায় বাবার সুমধুর কণ্ঠে প্রাণবন্ত প্রভাতী গাওয়া খুব আকর্ষণ করত। বাবার গাওয়া প্রভাতী শুনে শুনে মুখস্ত করে ফেললাম। প্রভাতী গাওয়াও রপ্ত করেছিলাম, সেই ছোটবেলায়।

গ্রামের মামা ছিলেন রমেশ ম-ল। উনি গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েদের নিয়ে নাচ, গান শিখিয়ে দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, কালী পূজা, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, পহেলা বৈশাখ, ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফ্রেরুয়ারি, ২৬ মার্চসহ বিভিন্ন দিবসে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতেন। সেই রমেশ মামার উদ্যোগে সংগীত শেখানোর জন্য বান্দা সংগীত বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল চালু হয়েছিল। সেই স্কুলের গানের শিক্ষক ছিলেন পূর্ণ চন্দ্র মণ্ডল।

গানের স্কুলে অনেক ছেলেমেয়ে ভর্তি হল। কয়েক জনের নাম কোনোদিনও ভুলব না। রাখি, সোমা, মঞ্জু, সঞ্জয়, লালু, নিত্যানন্দ, হংস, সুদীপ্তা, রূপাসহ অনেকে। তারা আমার থেকে অনেক বড় ছিল। সুরও খুব ভালো ছিল। গানও।

৩/৪ সপ্তাহ শুধু গানের স্কুলে বসে থাকতাম চুপ করে। দেখতাম কে কী গাইছে, কীভাবে হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে। একদিন স্যারকে বললাম, আজ থেকে গান শিখব। স্যার বললেন, ঠিক আছে।

গান শেখার প্রথম ক্লাস। তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। ক্লাসে বসেছি চুপচাপ। স্যার একজন একজন করে ডাকছেন গান শেখার জন্য। কয়েকজনের পরে আমাকে ডাকলেন। আগে কখনোই হারমোনিয়াম ধরিনি। সেই দিনই প্রথম হারমোনিয়াম বাজাব।

স্যার হারমোনিয়ামের পাশে বসতেই বললেন বাজাও। পারবে তো!

ভয়ে ভয়ে হারমোনিয়ামে প্রণাম করে সা রা গা মা পা ধা না সা বলতেই পাশের থেকে জোরে অট্টহাসি শুরু হল। একসঙ্গে অনেক জনের।

স্যার সবাইকে বকা দিয়ে হাসি বন্ধ করালেন। আমাকে কোলের কাছে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তুমি কিছু মনে করো না ওদের হাসিতে। আমি আশীর্বাদ করছি, তুমি একদিন বড় সংগীত শিল্পী হবে। চর্চা করে যাও মন দিয়ে।

তাদের বিদ্রপের হাসি মনে যেভাবে আঘাত করল, তার থেকেও বেশি মনকে পূর্ণ করল স্যারের আশীর্বাণীতে।

পূর্ণ স্যারের পূর্ণ আশীর্বাদ মাথায় ধারণ করে শুরু করলাম সংগীতের কঠোর সাধনা। বাড়িতে তখন হারমোনিয়াম ছিল না। তবুও চর্চা করতেই হবে। শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে। পণ করলাম।

যেখানে সেখানে সারগাম রেওয়াজ করতাম, বইতে, লেখার খাতাতে, স্কুলের বেঞ্চ, খাবারের প্লেটে ও হাতে-পায়ে। এসব কাণ্ড কারখানা দেখে ছোড়দা বলে, কী করিস তুই!

আমি বলি, গানের রেওয়াজ করি। আমাকে শিল্পী হতে হবে। খুব বড় মাপের।

ছোড়দা আমাকে কর্ণফুলি কাগজে হারমোনিয়ামের রিড এঁকে দিয়েছিল। সেখানে হারমোনিয়ামের কোনো শব্দ বা সুর নেই, নেই কোনো আওয়াজ। তাতে কীÑ সুর তো আমার কণ্ঠ থেকে আনতে হবে।

কঠিন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমি, শিল্পী হতে হবে। তবে শুধুই এক রকম গানের জন্য নয়, সকল ধরনের গানের জন্য। যখন যে সঙ্গীত গাইব, শ্রোতারা যেন মনে করে, আমি শুধু সেই সঙ্গীতেরই শিল্পী!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper