সুষ্ঠু বিচারই পারে মুক্তি দিতে
ইকবাল হাসান
🕐 ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২০
বালককাম একবিংশ শতাব্দীর সকল সমাজেই বিকৃত যৌনাচার। বর্তমান সমাজে নারীর পাশাপাশি ছোট ছেলে অর্থাৎ বালকের প্রতিও যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। শিশুরা জলের মতো। তাদের যেরকম শিক্ষা দেওয়া হয় কিংবা পায় তারা সেরকমভাবেই বেড়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে এরকম আচরণের ফলে অনেকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। সাধারণ দশটা ছেলের মতো সে তার শৈশব কাটাতে পারে না। দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায় অতীত।
সামনের দিনেও মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকে অন্যদের চেয়ে। ছেলেদের সঙ্গে এরকম ঘৃণিত ঘটনা বেশিরভাগ ঘটে থাকে মাদ্রাসাগুলোতে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেখানে মুসলমান সেখানে এরকম ঘটনা সকলের জন্য অস্বস্তিকর।
বালককামের প্রচলন এই দেশে বহু আগে থেকেই। প্রায় দেড়শ বছর আগের বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলায় বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান নামে নতুন গ্রামীণ সঙ্গীতধারা সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন এই সঙ্গীত ধারাতে কিশোররা মেয়েদের পোশাকে নাচার চল প্রচলিত হয়। গ্রাম্য অঞ্চলের অতি জনপ্রিয় নতুন সঙ্গীতরীতিতে নারী বেশধারী কিশোরদের উপস্থিতির কারণেই এর মধ্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে। সেই সময়ের জোতদাররা এরকম কিশোরদের পাওয়ার জন্য লালায়িত হতে থাকে। ঘেটুপুত্র’র চল এখন না থাকলেও কিশোরদের প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের যৌনতার বিষয়টি এখনো আছে।
অপরাধীর মাধ্যমে বিভিন্ন ভয়-ভীতি বা হুমকির শিকার হয়ে ছেলে শিশুরা যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের অভিযোগ গোপন করে। এছাড়াও, ধর্ষণকে সাধারণভাবে শুধুমাত্র নারীর বিরুদ্ধে হওয়া যৌন অপরাধ মনে করার পেছনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও দায়ী।
ছেলে শিশুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিকৃত যৌনাচারগুলো ঘটে থাকে অনেকাংশে আপনজন দ্বারা। এছাড়া, বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় মাদ্রাসার হুজুর কর্তৃক ছাত্র ধর্ষণের ঘটনা উঠে এসেছে। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনাই সমাজের জন্য ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এরকম ঘৃণিত কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন কিন্তু আমরা মাদ্রাসায় হুজুর কর্তৃক সংগঠিত এরকম কাজের পেছনের ব্যাপারগুলো কি ভেবে দেখেছি?
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত মাদ্রাসার প্রকরণগুলো হল ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা, ফাজিল মাদ্রাসা, কামিল মাদ্রাসা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা। হুজুর কর্তৃক ছাত্রের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারগুলো বেশি ঘটে থাকে কওমি মাদ্রাসায়। এসব মাদ্রাসাগুলো অনেকাংশে পরিচালিত হয় বেসরকারিভাবে। অর্থাৎ, জনগণের দানের টাকায় এইসব মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিবছর বিশাল সংখ্যক ছাত্র কওমি থেকে বের হয় কিন্তু সেই তুলনায় চাকরি থাকে সেই মসজিদের ইমামতি, বাচ্চাদের আরবি পড়ানো ইত্যাদি। এসব থেকে খুব বেশি আয় না হলেও নামাজ পড়াতে কিংবা বাচ্চাদের পড়াতে দেরি হলে সাধারণ মুসল্লিরা নানান কথা শোনায়। অনেক সময় চাকরি চলে যাওয়ার হুমকিও থাকে।
এই ক্ষেত্রে অতি অল্প টাকায় সংসার চালানোর জন্য তার পরিবারকে দূরে কোথাও রাখতে হয়। এর ফলে, হুজুর কিংবা মাদ্রাসার ওস্তাদদের স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক বজায় থাকে না। এমনকি তারা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেও যেতে পারে না চাকরি হারানোর ভয়ে। এর ফলে তাদের মনে ধীরে ধীরে বিকৃত মানসিকতার জন্ম হয়। তাদের স্বাভাবিক যৌন প্রয়োজন না মেটায় সেটা অস্বাভাবিকভাবে মেটান তারা।
ধর্ষণ, শিশুকামিতা, বালককাম’র মতো বিকৃত যৌনাচার সমাজে কখনো কাম্য নয়। বিকৃতি মানসিকতা এবং বিকৃত মানসিকতার লোকদের রুখে দিতে চাই সুষ্ঠু আইন ও বিচার। এই বিকৃত মানসিকতা দূর করতে যেসব হুজুর আমাদের নামাজ পড়ান কিংবা বাচ্চাদের ওস্তাদ হিসেবে আছেন তাদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল করা উচিত। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান, অধিক কর্মসংস্থান ও পর্যাপ্ত ছুটির ব্যবস্থা করা জরুরি। এছাড়াও, বাচ্চাদের শেখানো উচিত কোনটা ভালো স্পর্শ আর কোনটা খারাপ স্পর্শ। সর্বোপরি, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সচেতন থাকলেই এই ধরনের বিকৃত মানসিকতা থেকে মুক্তি মিলবে।
ইকবাল হাসান : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়