সুন্দরের প্রতীক
আরিফ আনজুম
🕐 ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২০
জীবন মানেই তো সুন্দর। যারা এই সুন্দরকে আঘাত করতে চায় তাদের বলি কিছু রোজনামচার তুচ্ছ অনুভূতি। সহস্রবার পুণ্য করলেও মৃত মানব জনম ফিরে পাওয়া যায় না। একটি জীবন আরো জীবন নিয়ে আসে... উক্তিটির গভীরতাকে অনুভব করো। জ্বর হলে কপালে মায়ের হাতের ছোঁয়াকে অনুভব করো। বাড়ি ফিরতে রাত হওয়াতে, বাবার উৎকণ্ঠাকে অনুভব করো। মনে করো ছোটবেলায় ভাইবোনরা কেমন সামান্য একটি পেন্সিলের দখল নেওয়ার জন্য মারপিট করতে, বড় হয়ে সেই আর না ফিরে পাওয়া দিনগুলোর কথা।
আরো অনুভব করো, বৈদ্যুতিক চিঠির বদলে বাংলা সন তারিখ দিয়ে চিঠি লেখার আনন্দ, সাজানো বাগানে যত্নে বেড়ে ওঠা ফুল দেখা, কোনো খাল-বিলে বা ডোবা-পুকুরে পদ্মফুল দেখার আশ্চর্য আনন্দকে কিংবা প্রথম প্রেমে পড়া, হোক সে ভুল মানুষের সঙ্গে বা ভুল সময়, তাও সেই অনুভূতিকে অনুভব করো। অমাবস্যার নিঝুম রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাজার তারা দেখার আনন্দকে অনুভব করো। মাঘী পূর্ণিমার চাঁদকে একবার না বারবার দেখার মুহূর্তকে অনুভব করো। গ্রীষ্মের দারুণ রোদে হঠাৎ একচিলতে ছায়া পাওয়ার আরামকে অনুভব করো।
সেই সঙ্গে গ্রীষ্মের আম, বর্ষার ইলিশ, শীতের নলেন গুড়ের সন্দেশ। বৃষ্টি বেলার শেষে, বাষ্পের মধ্যে বৃষ্টি খোঁজার ঘ্রাণকে আরো একবার অনুভব করো। শরতের নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলাকে দেখো। শীতকালীন বইমেলার অপেক্ষার অবসান ঘটার উত্তেজনাকে অনুভব করো। বসন্তের ‘কী যেন হারিয়ে গেল...’ সেই আবেগকে অনুভব করো। আরো কতো কী... সেই সব স্বাদকে আরো একবার অনুভব করো। এতকিছু অনুভব করতে যে পারবে সেই তো নিজেকে ভালোবেসে ফেলবে। আর নিজেকে ভালোবাসার আনন্দই হল জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। জীবনে এত কিছু আছে জানার, দেখার, শোনার, ছোঁয়ার, তাহলে কেউ কী করে ভাবে এই জীবন উদ্দেশ্যহীন। যদি মৃত্যুভয়ে কাতর হয়ে যাও তাহলে বলি সবই অবিনশ্বর।
সর্বসাকুল্যে একটি কথা না বললেই নয়, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কয়েক হাজার গ্রহ, নক্ষত্র আছে। তার মাঝে একটি গ্রহেই প্রাণ আছে। এই জীবন বা প্রাণ আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। সূর্য, চন্দ্র সবই কোনো বিশেষ মুহূর্তে বিশেষ জায়গা থেকে সুন্দর হয়ে ওঠে। জীবনের গুরুত্ব অনেক। কিন্তু জীবনের কোনো শেষ সীমা আমাদের জানা নেই। জীবন বা প্রাণ কার কতটুকু, কতটুকু সে বাঁচবে সেটা কারোর পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। তাই হয়ত জীবনের স্বাদ এতটা সুন্দর।
এই যে জীবন এতে চড়াই উতড়াই সব কিছুই আছে। সময় সবসময় একস্রোতে একভাবে অনুকূলে কখনোই চলে না। তাই কখনও কখনও সমাজ ও সভ্যতার কাছে ব্যক্তি বিশেষে জীবনকে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়। তার সেই মানসিক হার বা হীনম্মন্যতা থেকে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অনেকেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে ব্যাহত হয়। এর ফল যে শুধু তার জীবনেই পরে তা নয়। আনুষ্ঠানিক সমাজ ও সাংসারিক জীবনেও তা পরে। তবে আশার ব্যাপার, এসব পরিস্থিতিতে কিছু মানুষ আর ফিরতে পারে না।
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই তা থেকে নিজেকে পুনর্মূল্যায়ন করে এবং জীবনের স্রোতে ফিরে আসে। এর কারণ হল বেঁচে থাকার আনন্দ। সমস্ত দুঃখ, কষ্ট ও পরাজয়ের মধ্যে, তার জীবনের কিছু স্বর্ণোজ্জ্বল মুহূর্ত, তার স্মৃতিগুলো মনে বেঁচে থাকার আনন্দ জাগায়। তাকে স্পৃহা ও শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। তাই মানুষ তার সমস্ত পরাজয় থেকেও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এই বেঁচে থাকার আবার কয়েকটা বিচিত্র উদাহরণ আছে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন অবলম্বনকে উপায় করে বেঁচে থাকে। কিছু মানুষ সামান্য পেয়ে, তার বিশাল অপ্রাপ্তিকে ভুলে সামান্য কিছুর মধ্য দিয়েই খুঁজে নেন আনন্দ অতি সহজে। আবার কিছু মানুষ, তার সমস্ত প্রাপ্তির মধ্যেও সুখী হতে পারেন না। তিনি তার কি অপ্রাপ্তি আছে এটা খুঁজতে গিয়েই বাঁচার আনন্দে হারিয়ে যান।
আমাদের বড়রা বা বিভিন্ন ধার্মিক গুরুদেবরা বা মোটিভেশনাল স্পিকার যারা আছেন তারা সকলেই হেরে যাওয়া মানুষ, অসহায় মানুষ, পরাজিত মানুষদের সামান্য কিছুর মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দটা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর যে মানুষ তিলরূপ প্রাপ্তির মধ্যে এই আনন্দ সহজে পেয়েছেন তিনি সর্বসুখী। জীবনের ঊর্ধ্বে উঠে জীবনকে উপলব্ধি করাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমাদের লক্ষ্য হবে সুস্থ জীবন এবং জীবনের মধ্যে খুঁজে নেওয়া আনন্দ ও সুস্থতা।
আরিফ আনজুম : শিক্ষার্থী, শিবগঞ্জ সরকারি এমএইচ কলেজ, বগুড়া