আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বর্ণাঢ্য জীবন
সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর
🕐 ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২০
অনেকদিন বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়ে বিভিন্ন রোগে ভোগার পর ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাপা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আজ মঙ্গলবার তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে রংপুরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসুচি।
কর্মসুচির মধ্যে রয়েছে- জাপা প্রধান এরশাদের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীর কর্মসুচি সকাল ৯টায় শুরু হবে। এরপর রংপুর নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে কোরআন তেলওয়াত এবং নগরীর প্রায় ২শ’টি মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা খোলা কাগজকে জানান, সকাল ১০টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের পল্লীনিবাসের বাসভবনে স্থাপিত জাপা প্রধানের কবরে প্রথমে রংপুর জেলা ও মহানগর জাপার নেতাকর্মীরা পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন এবং এরপর যথারীতি অন্যান্য জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দরা পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। সকাল ১১টায় জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা‘র নেতৃত্বে জাপা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এরশাদের কবর জিয়ারত ও পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। পরে সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন।
এদিকে, প্রধান সামরিক আইন ও রাষ্ট্রপতি পদে ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় নয় বছর বাংলাদেশ সরকার চালানো ব্যক্তি এরশাদ এদেশের রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে ছিলেন আলোচিত ও সমালোচিত।
পল্লীবন্ধু এরশাদের জন্ম, শিক্ষা জীবন এবং সেনাবাহিনীতে চাকুরি জীবন ছিল অনেক আলোচিত ও ঘটনাবহুল। ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন পল্লীবন্ধু এরশাদ। বাল্যকালে শহরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন প্রয়াত রাজনৈতিক এই নেতা। তিনি ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে নিয়োগ লাভের মধ্য দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন ।
১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন তিনি। তারপর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব ও পরে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এই মহান নেতা।
দেশের মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনের পরে ১৯৭৩ সালে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এডজুটেন্ট জেনারেল পদে নিয়োগ দেন সে সময়কার সরকার প্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারপর ১৯৭৮ সালে ডিসেম্বর মাসে এরশাদ চীফ অব আর্মি স্টাফ নিযুক্ত হন ও পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে নিযুক্ত হয় সাবেক এই সেনাপ্রধান। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং পরে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৮৬ সালে ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
নবগঠিত এই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠা চেয়ারম্যানও হন তিনি। সেসময় দলের মহাসচিব অধ্যাপক এমএ মতিনকে নিযুক্ত করে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন এরশাদ। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে ১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসাবে পাঁচ বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
নির্বাচিত হওয়ার পর ১০ নভেম্বর তৃতীয় জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের আহবান করেন তিনি। পরে বিরোধী দলগুলোর প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর এরশাদ সংসদের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর প্রধান বিরোধী দলগুলো ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন বর্জন করেন। পরে এরশাদ শাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর অবিরাম আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরে তিনি পদত্যাগ করেন।
এরপর ১৯৯১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ গ্রেফতার হন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে কারাগারে থাকা অবস্থায় রংপুরের পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন তিনি। ১৯৯৬ এর সাধারন নির্বাচনেও এরশাদ সংসদের পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। দীর্ঘ ৬ বছর কারাভোগের পর ১৯৯৭ সালে ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু আদালতের রায়ে দ-িত হওয়ার কারণে সংসদে তার আসন বাতিল হয়। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পার করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন নির্বাচিতও হয়েছেন।
এভাবে কিছু সময় কাটানোর পর এরশাদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়রি জাতীয় নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার দল জাতীয় পার্টি তখন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হয়েছিলেন। আর এরশাদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত হন। দাম্পত্য জীবনে এরশাদ ও রওশনের ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ ও এরশাদ-বিদিশার পুত্র এরিক এরশাদ ।