টেস্ট কমার অনেক কারণ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২০
দেশে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে করোনা ভাইরাসে পরীক্ষার সংখ্যা কেন কমে গেছে, সে ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে কিছুদিন ধরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১২ হাজারের কাছাকাছি রয়েছে। নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা কমার পাশাপাশি কমেছে নতুন শনাক্তের সংখ্যাও, যদিও পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭টি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৪২৩টি নমুনা। যদিও জুন মাসেও প্রতিদিন ১৭ হাজার করে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার কারণে রোগী শনাক্তের সংখ্যাও কমেছে। যদিও এখনো পরীক্ষার বিবেচনায় প্রতি চারজনে একজন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আগে এই হার ছিল ২১ শতাংশের কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল সোমবার বলেছেন, ‘আমার তথ্য বিশ্লেষণে দেখছি, আমাদের নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমেছে। এর কারণ হিসেবে অনেকগুলো ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।’
`সুস্থতার সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, যারা সুস্থ হয়ে গেছেন, তাদের দ্বিতীয়বার আর পরীক্ষা করানোর দরকার হচ্ছে না। এজন্য পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা কমেছে,’ তিনি বলছেন। কম পরীক্ষার পেছনে কারণ হিসেবে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পরীক্ষা করানোর জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি ফি ধার্য করা হয়েছে। সেই কারণে কিছুটা কমতে পারে।‘ ‘তাছাড়া মানুষের মধ্যে আতঙ্ক অনেকটাই কমে গেছে। মানুষ পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।’
ডা. নাসিমা সুলতানা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের যেসব বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যেখানে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময় নির্দিষ্ট, সেখানে তিনটার পরেও অনেকে নমুনা দেয়ার জন্য লাইন দাঁড়িয়ে থাকতেন। কিন্তু এখন একটার পরেই বুথগুলো শূন্য হয়ে যায়। নমুনা পরীক্ষা করার জন্য কেউ আসে না।’
তিনি বলছেন, ‘নমুনা পরীক্ষা করার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। সেই কারণে পরীক্ষাগারে নমুনা আসছে না। তাই নমুনার সংখ্যা কমে গেছে।’
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘সবাইকে বলবো, যাদের নমুনা পরীক্ষা করা দরকার, তারা অবশ্যই আপনারা নমুনা যেখানে সংগ্রহ হয়, সেখানে যাবেন এবং নমুনা দেবেন, পরীক্ষা করবেন।’
অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকার একটি ফি নির্ধারণ করলেও, দরিদ্রদের জন্য পরীক্ষা এখনো বিনামূল্যে রয়েছে।
তিনি বলছেন, ‘দরিদ্রদের জন্য নমুনা এখনো ফ্রি। যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নমুনার জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ আছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য, দরিদ্র মানুষের জন্য নমুনা সংগ্রহ ফ্রি।‘ ‘কাজেই আপনারা সরকারের এই সুবিধা অবশ্যই গ্রহণ করতে পারেন। যাদের দরকার অবশ্যই নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করাবেন।’
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমাদের ব্যবস্থাপনা এমন হওয়া উচিত, যারই পরীক্ষার প্রয়োজন, তিনি যেন এটা সহজে করাতে পারেন। সেটা তিনি যেই শ্রেণিপেশার মানুষ হোক না কেন। কিন্তু সেই জায়গাটায় সমস্যা রয়েছে।’
জুন মাসের শেষে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি এবং জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ‘চাহিদার তুলনায় এখনো আমাদের টেস্টের সংখ্যা কিন্তু কম। সেটা বাড়ানোর জন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছি, যাতে আরটিপিসিআরের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যান্টিজেনের মতো পরীক্ষাও চালু করা হয়। সেটা এর মধ্যেই দুটি জায়গায় শুরু হয়েছে, আরও বাড়ানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘যতজন পরীক্ষা করাতে চাইবেন, সবাই যেন করাতে পারেন। কেউ যেন ফেরত না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা সব পেশাজীবীর, সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে।’
এদিকে করোনা ভাইরাসের টেস্ট নিয়ে প্রতারণা এবং টেস্টের মান নিয়ে উদ্বেগ থাকায় ইতালি বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, করোনা ভাইরাস টেস্টের মান যদি উন্নত না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বেকায়দায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।-বিবিসি বাংলা