ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নরসিংদীতে করোনা রোধে একজন নিষ্ঠাবান যোদ্ধা

খন্দকার শাহিন, নরসিংদী
🕐 ১০:০৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০২০

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশ অগ্রণী সেনানী ভূমিকা পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সততা ও নিষ্ঠার প্রতীক হয়ে সাহসী মনোবল নিয়ে মানবিক ভূমিকা রেখেছেন নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার) পিপিএম। তার সুদক্ষ দিকনির্দেশনায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলার ৭টি থানার সকল পুলিশ সদস্যরা যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রম আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সরকারের লকডাউন ঘোষণার পূর্বে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ, পরবর্তীতে লকডাউন নিশ্চিত করা, করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির লাশ ধর্মীয়ভাবে দাফন, নিরাপদ সৎকার কাজের সরঞ্জামাদি বিতরণ ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ। একই সঙ্গে চালাচ্ছেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ক্যাম্পেইন। নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা মাথায় গামছা বেঁধে কেটেছেন অসহায় কৃষকের জমির পাকা ধান। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করছে ত্রাণ সামগ্রী। এখনো ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

হটলাইনে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত অভুক্ত মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। রমজান মাসে এতিম, প্রতিবন্ধী, ভাসমান ও ছিন্নমূল অনাহারী মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন ইফতার সামগ্রী। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ ফ্রি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তারদের সঙ্গে নিয়ে তৈরি ভ্রাম্যমাণ টিম এ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ি বহর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এলাকা থেকে এলাকায় এবং ফ্রি ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। 

সম্প্রতি মানুষকে ঘরে রাখতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে ‘সুলভ মূল্যে ঘরের বাজার’ ভ্রাম্যমাণ বাজার ব্যবস্থা চালু করা হয়। করোনার ছোবল থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের রক্ষা করতে পুলিশ লাইন্স, নরসিংদী ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জীবাণুনাশক টানেল বসানো হয় এবং পর্যায়ক্রমে জেলার ৭ টি থানায় জীবাণুুনাশক টানেল বসানো হয়।

করোনা আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে এলাকাবাসী ভয় পেলেও পুলিশ সদস্যরা স্বমহিমায় এসব লাশের দাফন সম্পন্ন করছেন।

করোনার দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে সর্বাধিক সেবা প্রদান করে আলোচনায় এখন জেলা পুলিশ নরসিংদী। তাই সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন জেলা পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা। সর্বশেষ লকডাউন নিশ্চিতে জেলা পুলিশের কর্মকা- ও ধান ঘরে তোলার সময়ে কৃষকের ধান কেটে দিয়ে আলোচনার সম্মুখ ভাগে চলে আসে এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

রমজান মাসের সময়ে ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে না দেয় সে লক্ষ্যে বাজার গুলোতে মনিটরিংসহ সাড়াশি অভিযান চালানো হয়।

মত বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করা হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণে সকলকে ঘরে অবস্থানের জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এর বাইরেও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, এতিম, পথ শিশু, রিক্সাচালক, ভিক্ষুক, দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে জেলার ৬টি উপজেলার ৭টি থানায় ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

লকডাউন নিশ্চিতে জীবনবাজি রেখে দিবানিশি বিরামহীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা পুলিশ নরসিংদী। করোনার কবল থেকে মানুষকে সুস্থ রাখতে শহরে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হচ্ছে। জোরদার করা হয়েছে পুলিশি টহল। নরসিংদী জেলার সঙ্গে অন্যান্য জেলা থেকে প্রবেশ ও প্রস্থান রোধে সড়ক, মহাসড়ক ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুসারে লকডাউনের পর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনে যাত্রী সেবা তদারকি অব্যাহত রেখেছে নরসিংদী জেলা পুলিশ।

সমস্যায় পড়া মানুষকে সহায়তার জন্যে স্ব-শরীরে উপস্থিত হচ্ছেন জেলা পুলিশের কর্ণধার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার) পিপিএম।

পুলিশ সুপার নরসিংদী প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার) পিপিএম বলেন, পুলিশের প্রধান কাজ হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখা। এই দুটি কাজের পাশাপাশি এখন আমরা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় দিন রাত কাজ করে চলেছি। লকডাউন নিশ্চিত ও মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। ঝুকিপূর্ণ জেলা থেকে মানুষের প্রবেশ ও প্রস্থান রোধে সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭২টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

এ পর্যন্ত ১০ (দশ) হাজারেরও বেশি পরিবারের মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম করা হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃতদের দাফন কাফন ও সৎকার করছে পুলিশ সদস্যরা। বাজার নিয়ন্ত্রণসহ গুজব রোধে সকল ধরনের কাজ করছে জেলা পুলিশ। জনগণ যাতে ঘরের বাইরে না যায় সেজন্য ভ্রাম্যমাণ সুলভ মূল্যে ঘরের বাজার ব্যবস্থা চালু করেছি।

এক কথায় বলতে গেলে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক অবস্থার প্রেক্ষিতে সকল কর্মকাণ্ডে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। পুলিশ তো সবসময়ই মাঠ পর্যায়ে অনেক কাজ করে থাকে। সরকারের ঘোষণা অনুসারে লকডাউনের পর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনে যাত্রী সেবা তদারকি অব্যাহত রেখেছি। করোনাকালে আমাদের উল্লেখিত কাজসমূহ অব্যাহত থাকবে শেষ পর্যন্ত।

জেলা পুলিশ নরসিংদীর মিডিয়া সমন্বয়কারী ও জেলা গোয়েন্দা শাখা নরসিংদীর পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) রুপণ কুমার সরকার পিপিএম জানিয়েছেন, নরসিংদী জেলা পুলিশের সুপার হিরো আমাদের পুলিশ সুপার নরসিংদী প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার) পিপিএম স্যার। স্যারের সুদক্ষ দিকনির্দেশনায় নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলার ৭টি থানার সকল পুলিশ সদস্যরা করোনা সংকট মোকাবেলায় ও লকডাউন নিশ্চিতে দিবানিশি কাজ করে যাচ্ছে। অসহায়দের খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণসহ সকল ধরনের কাজ করা হচ্ছে।  

এছাড়া নরসিংদী জেলায় করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যগণ হলো- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) জাকির হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শফিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) বেলাল হোসাইন, রুপণ কুমার সরকার সহ পুলিশ পরিদর্শক -০৭ (সাত) জন, সাব-ইন্সপেক্টর- ১০(দশ) জন, এএসআই- ০৫ (পাঁচ) জন, নায়েক- ০১ (এক) জন, কনস্টেবল- ০৮ (আট) জন, সরকারি বাবুর্চি- ০১ (এক) জন। মোট করোনাভাইরাস আক্রান্ত- ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) জন। হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে ০৭ (সাত) জন। বাকি সদস্য সবাই সুস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছেন।

 

 
Electronic Paper