ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অপেক্ষার শেষ কবে বন্ধু

জি এ মিল্টন
🕐 ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০২০

করোনার কারণে গত ২০ মার্চে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ বন্ধ ঘোষণা যে এতদিন পর্যন্ত গড়াবে তা কারো কল্পনাতেও আসেনি। সব শিক্ষার্থীদের ধারণা ছিল ১৫ থেকে ২০দিন, সর্বোচ্চ এক মাস এ অবস্থা থাকবে। তারপর যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা বাসায় যাওয়ার পর পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে থাকে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও ক্রমেই বাড়তে থাকে।

গত সোমবার বন্ধু নাজমুল হককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে পোস্ট করতে দেখেছি, ‘অপেক্ষা আর কত?’ এছাড়াও অনেক বন্ধুদের ফেইজবুক মেসেঞ্জার কিংবা গ্রুপে বলতে দেখেছি, ‘আর ভাল লাগছে না এ বন্দি জীবন, পরিস্থিতি কবে ভালো হবে কিংবা ক্যাম্পাসের দিনগুলোকে খুব মিস করছি, কবে যে ক্যাম্পাসে সবার সাথে দেখা হবে।’ কিংবা ছোট ভাই-বোনদের ফেইজবুকে পোস্ট করতে দেখেছি, ক্যাম্পাসের ক্লাস-পরীক্ষার সময়গুলো ছিল অত্যন্ত বোরিং তারপরও সেগুলোকে খুব মিস করছি। এতদিন কি বাসায় থাকা যায়! বাসায় আর একটুও ভাল লাগছে না ইত্যাদি সচারচরই দেখা মিলছে এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

আবার অনেকে প্রিয়জনের সাথে ক্যাম্পাসের অনেক আনন্দঘন মুহূর্তগুলোকে খুব মিস করছে। বন্ধুদের কয়েকজনকে বলতে শুনেছি, ‘পরিস্থিতি যে অবস্থা তাতে তার (প্রিয়জন) সাথে আর দেখা হবে কিনা কে জানে।’ প্রায় চার মাস হতে চলল তবুও এ অবস্থার উন্নতি হচ্ছেনা। খুলছে না বিশ^বিদ্যালয়।
দেখাও হচ্ছে না আর সেই প্রিয়তমার সাথে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে ঘরের কোণে আবদ্ধ সবাই। যেন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে প্রকৃতি ও মানবসকল। বন্ধু-বান্ধব আর প্রিয় ক্যাম্পাস না দেখলে কি পড়াশোনার মনোযোগ পাওয়া যায়! দীর্ঘ পাঁচ বছর যেখানে অবস্থান করেছি যেখানকার মাটি-মানুষদের যে অসংখ্যবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আর কতদিন এভাবে জীবন চলে। আর কতদিন আবদ্ধ ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে কিংবা ছুটির তারিখ আর কতবার পিছানো হবে তা আর কে জানে। পড়াশোনার বিন্দুমাত্র উন্নতি ঘটাতে পারছি না। যখনই বই নিয়ে পড়ার টেবিলে বসছি ঠিক তখনই কোনো এক আনমনা আমায় উড়ে নিয়ে যাচ্ছে পড়ার টেবিল থেকে। যেন ক্যাম্পাস আমায় ডাকছে। পড়ালেখা ভালো না লাগার দরুণ বিরক্তির সুরে বইটা টেবিলে রেখেই বিছানার উপর ধপাস করে শুয়ে পড়ছি। আর এক শোয়াই সারাটা দিন মাটি। চোখের সামনে শুধুই বন্ধু-বান্ধব আর মতিহারের সেই প্রিয় ক্যাম্পাস ভেসে উঠছে।

আমার মতো যারা সরকারি চাকরির পেছনে ছুটতে শুরু করেছে তাদের যদি এ করুণ দশা হয় বন্ধু-বান্ধব কিংবা ক্যাম্পাসের জন্য মন-প্রাণ চঞ্চল হয়ে ওঠে তাহলে যারা ক্যাম্পাসে নতুন প্রবেশ করেছে কিংবা যারা বিশ^বিদ্যালয় পড়াশোনার মধ্যম পর্যায়ে অর্থাৎ তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষে পা দিয়েছে তাদের কি অবস্থা সে কথা ভাবাই দুষ্কর।
একদিন বন্ধু হাবিবুর রহমান আবদুল্লাহ্কে ফেইজবুকে বলছি, ‘বন্ধু, আর তো বাসায় থাকতেই পারছি না। শুধু ক্যাম্পাসে যেতে মন চাচ্ছে। সব বন্ধুদের সাথে যদি একটু দেখা করতে পারতাম...। কথা শেষ না করতেই আবদুল্লাহ বলে উঠলো, ‘আমার তো করুণ অবস্থা। এখানে না হচ্ছে পড়াশোনা না হচ্ছে অন্য কিছু। শুধু দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।’

অন্য আরেকদিন মেসেঞ্জার গ্রুপে ক্যাম্পাস বন্ধুদের সাথে কথা হচ্ছিল। ‘কে কেমন আছিস’ বলতেই সবার যেন একটাই উত্তর ‘তোদের খুব মিস করছি। কবে যে আবার সেই প্রিয় ক্যাম্পাসে দেখা হবে।’

ইলিয়াস আহমেদ রনিকে ‘কি খবর বন্ধু’, বলতেই সে বলে উঠলো ‘আরে ক্যাম্পাস ছাড়া কি আর জীবন চলে-রে। গ্রামে না চলছে একাডেমিক পড়াশোনা না চলছে চাকরির পড়াশোনা। এতদিন বাসায় থাকতে হবে তা কখনো ভাবতেই পারিনি। ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য মন অস্থির হয়ে আছে। হাসতে হাসতে ইলিয়াস বলে আমার তো কোন প্রিয়জন-টন নেই। তবে যাদের সেসব আছে তাদের কি অবস্থা; না পারছে আড্ডা দিতে না পারছে দুইজন একসাথে বসে কথা বলতে।’

ঠিক ইলিয়াসের কথার মতোই মনে হয় এমন প্রিয়জনদের বুকেও বইছে যন্ত্রনার হাহাকার।

প্রিয় মানুষকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট। কবে হবে কষ্টের অবসান। এভাবে আর কিছুদিন থাকলে মনে হয় দম বন্ধ হয়েই যাবে। তাহলে কি প্রিয় ক্যাম্পাস আর বন্ধুদের সাথে দেখার আকাক্সক্ষা থেকেই যাবে, নাকি বিশ^ একদিন করোনামুক্ত হবে? সত্যিই একদিন বিশ^ তার স্বাধীন স্বত্তায় ফিরে আসবে। তখন বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে খুলে দেওয়া হবে। সবাই আগের মতো ফিরে পাবে তাদের প্রিয় ক্যাম্পাস আর ক্যাম্পাসের মানুষগুলোকে। প্রিয়জন ফিরে পাবে তাদের প্রিয়জনদের আর বন্ধু-বান্ধবরা তাদের প্রিয় বন্ধুদের। দেখা মিলবে প্রিয়জনদের সেই হাসির ঝিলিক।

 
Electronic Paper