ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চামড়া খাতে ঋণের নামে হরিলুট

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১০:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৮, ২০২০

ঈদ এলেই সরকার ঢাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়। কিন্তু চামড়া কিনে বিক্রির পর ঋণ ফেরত দেন না ব্যবসায়ীরা। এখন পর্যন্ত ঢাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ফেরত দেননি। এতে প্রান্তিক কৃষক চামড়ার দাম না পেলেও মহাজনরা ঠিকই টাকা সরিয়ে ফেলেন। আর ব্যাংকগুলোও পুঁজি হারায়। আসন্ন ঈদে আবারও সহজ শর্তে চামড়া-ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া খাতে ঋণ দেওয়ার নামে সরকারি ব্যাংকগুলোতে হরিলুট চলছে। প্রতি বছর এ খাতে যেভাবে ঋণ দেওয়া হয়, সে হারে আদায় হয় না। ঋণের বড় অংশই চলে যায় অন্য খাতে। এর বেশিরভাগই খেলাপিতে পরিণত হয়। একপর্যায়ে আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ব্যাংকগুলো নির্ধারিত সময় পর অবলোপন বা ব্যাংকের মূল হিসাব থেকে বাদ দিচ্ছে। এভাবে ব্যাংকে রাখা আমানতকারীদের টাকা গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর পকেটে চলে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক থেকে চামড়া খাতে বিতরণ করা পুরনো ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। এ খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। যার বেশিরভাগই দীর্ঘদিনের পুরনো। বাকি ৪২৮ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত রয়েছে। এগুলো চার ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছরে বিতরণ করেছে। এর মধ্যে একটি অংশ আদায় হয়েছে। আর কিছু ঋণ বকেয়া থাকলেও তা গ্রাহক-ব্যাংকার সম্পর্কের ভিত্তিতে সমন্বয় করে আবার নতুন ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবার কোরবানির চামড়া ক্রয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক সোনালী, জনতা ও অগ্রণী।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক গত ৭ বছরে চামড়া শিল্পে ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ৮৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ঋণ গেছে নিয়মিত চামড়া শিল্পে। বাকি ৮০৩ কোটি টাকা গেছে কোরবানির চামড়া ক্রয়ে। এসব ঋণ ১০ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে প্রায় ৫৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক থেকে নতুন করে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। ব্যাংকাররা জানান, নানা অব্যবস্থাপনা, অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণ, যাচাই-বাছাই না করে ঋণ অনুমোদন ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার কারণে বিতরণকৃত ঋণের একটি বড় অংশ খেলাপি হয়ে গেছে।

জানা গেছে, জনতা ব্যাংক এ পর্যন্ত চামড়া শিল্পে ১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে। পুরনো ঋণের বেশির ভাগই খেলাপি। গত বছর ব্যাংকটি ঋণ দিয়েছিল ২০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যেই প্রায় ৭০ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। এবার ভালো দেখে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে জনতা ব্যাংক।

এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক এ পর্যন্ত চামড়া শিল্পে ঋণ বিতরণ করেছে ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ব্যাংকটি ২০১৩ সালে ৮ প্রতিষ্ঠানকে ৯০ কোটি ৮৯ লাখ, ২০১৪ সালে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ১২৭ কোটি ৫০ লাখ ও ২০১৫ সালে ৩ প্রতিষ্ঠানকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকটি এ খাতে ৬০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। এসব ঋণের বেশিরভাগই অনাদায়ী। আদায় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ২০১৭ সালে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ  রেখেও শেষ পর্যন্ত কোনো ঋণ দেয়নি ব্যাংকটি। তবে ২০১৮ সালে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। ২০১৯ সালে দিয়েছিল ১৮৫ কোটি টাকা। এবারও কোরবানির চামড়া ক্রয়ে ঋণ দিতে ১৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ  রেখেছে ব্যাংকটি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রূপালী ব্যাংক ২০১৯ সাল পর্যন্ত চামড়া শিল্পে ঋণ বিতরণ করেছে ১ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। এছাড়া পুরনো খেলাপি আছে ১৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে হোসেন ব্রাদার্স ট্যানারির কাছে ২৭ কোটি ২০ লাখ, মাইজদী ট্যানারির কাছে ২৪  কোটি, এফকে লেদারের কাছে ৫১  কোটি ও মিজান ট্রেডার্সের কাছে ৩২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

এসব ঋণ ১৯৮৫ সাল থেকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। তবে ২০১৭ সালে কয়েকটি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে মন্দের ভালো বিবেচনায় নিয়ে ১৪৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঋণ নিয়মিত থাকায় ২০১৮ সালে ১৫০ কোটি এবং ২০১৯ সালে ১৫৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। তবে পুরনো টাকা ফেরত না আসায় এবার নতুন করে ঋণ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মাত্র ২ শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে চামড়ার ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। এ সুবিধা পেতে হলে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ব্যাংকগুলো নিজেরাই এ ঋণ পুনঃতফশিল করতে পারবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে না। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ঋণগ্রহীতাদের আওতার বাইরে কোনো কারণে ঋণ শ্রেণিকৃত হয়ে থাকলে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সচল থাকলে তা পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া যাবে।

 
Electronic Paper