ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু ৯ জুলাই

আলী ইউনুস হৃদয়, রাবি
🕐 ১০:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৭, ২০২০

দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন উপাচার্য। প্রত্যেকেই শিক্ষকতা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনাও করেছেন এই বিদ্যাপীঠে। বতর্মানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। তাই নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত সোমবার বিতর্ক সংগঠন গোল্ড বাংলাদেশ’র বিশেষ আয়োজন ‘ঐতিহ্যে-সাফল্যে-সম্ভাবনায়’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অংশ নিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

সংগঠনটির সাবেক সভাপতি কাজী সফিকের সঞ্চালনায় এ আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন, জাতীয় কবি কাজী    নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও  প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ অংশ নেন।

আলোচনার শুরুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান। এরপর তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সীমিত পরিসরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এখন অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য। আর তারা না থাকলে কীভাবে ভালো থাকা যায় আশা করি বুঝতে পারছেন। প্রতি বছর আমরা যেভাবে আনন্দ করতাম সেভাবে আনন্দ করতে পারিনি, তারপরও তো জন্মদিন আনন্দের।

অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে এই উপাচার্য বলেন, আমার ধারণা করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে বেশকিছু পরিবর্তন আসবে। তাই আগামীতে অনলাইন টিচিংয়ের ব্যাপারে আমাদের জোর দিতে হবে তা সহজেই বুঝতে পারছি। গত ২৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একটি ভার্চুয়াল আলোচনা হয়েছে। অনলাইন ক্লাসের বিষয়টি সময়োপযোগী ও কার্যকরী উদ্যোগ। ক্লাস টিচিংয়ের বিকল্প অনলাইন ক্লাস হতে পারে না। তবে হ্যাঁ এ সময়ে অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পারি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর যুক্ত করতে হবে।

সবাইকে যুক্ত না করা গেলে কিন্তু অনলাইন ক্লাসের সুফল পাওয়া যাবে না। সেজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সবধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন বলেও জানিয়েছি।  আশা করছি, আগামী ৯ জুলাই থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরু করব। শুরু করার পর জানতে পারব কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সেটাও বিবেচনা করতে পারব। প্রথমদিকে আমাদের নতুন কিছু সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হবে। তারপরও তো শুরু করতে হবে।

আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক বিষয়ে রাবি উপাচার্য বলেন, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে আমাদের সকলকে চেষ্টা করতে হবে। সে জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকেও নজর রয়েছে। আর এই উন্নয়নের প্রচেষ্টাও অব্যাহত আছে। বিভিন্ন আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনের বর্ধিত কাজ চলছে। এছাড়া আরও নতুন দুটি আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবন নির্মাণের সবধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজ চলমান থাকবে বলে আশা করি। 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাণের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই আমি আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী বলেন, সকলকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। রাজশাহীর প্রতি ভালোবাসা সবসময়ই আছে। উপাচার্যের দায়িত্ব সম্মানের সঙ্গে শেষ করে যেন আবার প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরতে পারি সেই প্রত্যাশা করি। আর দ্রুতই আমরা করোনা উত্তর পৃথিবীতে নতুনভাবে মানিয়ে একসঙ্গে চলতে পারব।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম পরে শিক্ষকতা করেছি। এখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা একসঙ্গে হতে পেরেছি ভেবে ভালো লাগছে। গোল্ড বাংলাদেশ’র এমন আয়োজনের জন্য আমি আনন্দিত বোধ করছি। তবে করোনার বিপর্যয়ের কারণে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। আজকের এ আয়োজনের মাধ্যমে বলতে চাই, আমাদের শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যারয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাই। যেখানেই থাকি না বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিনে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু এবার করোনাকালের সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন ছাড়াই দিবসটি চলে গেল। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুদায়িত্ব পেয়েছি। সে জায়গা থেকে আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। সবশেষে বলব, আমরা সবাই প্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেই শেষদিন পর্যন্ত থাকব।

প্রসঙ্গত ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকার দেশের সব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। রাজশাহীতে এ সময় স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

 
Electronic Paper