করোনা রোধে নিবেদিত খানসামা থানা পুলিশ
এসএম রকি, খানসামা, দিনাজপুর
🕐 ১২:১৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৭, ২০২০
‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’- বর্তমান করোনাযুদ্ধে সেটাই প্রমাণ করেছে দিনাজপুরের খানসামা থানা পুলিশ। ‘মুজিবর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ এ স্লোগানটিও বাস্তবতা পেয়েছে এবারের করোনাযুদ্ধে। করোনা থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে নিজেদের সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আর এমন মানবিক ভূমিকায় সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশনায় ও পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন পিপিএম বিপিএম বারের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বীরগঞ্জ সার্কেল) ওয়ারেস হোসেনের তত্ত্বাবধানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও প্রণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, কোয়ারান্টিন নিশ্চিতকরণ, নিজেদের রেশন অসহায়দের মাঝে বিতরণ, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং লকডাউনে কর্মহীনদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন থানা পুলিশ সদস্যরা।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও মানবিক থানা পুলিশের বিরামহীন ছুটে চলা নিয়ে দৈনিক খোলা কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় কথা বলেছেন ওসি খানসামা শেখ মো. কামাল হোসেন।
খোলা কাগজ : আসসালামু আলাইকুম।
ওসি কামাল : ওয়ালাইকুম সালাম।
খোলা কাগজ : কেমন আছেন?
ওসি কামাল : আলহামদুলিল্লাহ।
খোলা কাগজ : খানসামা উপজেলার বর্তমান করোনা পরিস্থিতি কেমন?
ওসি কামাল : বর্তমানে উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭ জন ও সুস্থ ১১ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১ জন।
খোলা কাগজ : কবে থেকে করোনা প্রতিরোধে কাজ শুরু করেন?
ওসি কামাল : ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ায় পর থেকেই সরকারের নির্দেশে কাজ শুরু করে পুলিশ।
খোলা কাগজ : শুরুর দিক করোনা প্রতিরোধে পুলিশের কী ভূমিকা ছিল?
ওসি কামাল : শুরু থেকেই খানসামা থানা পুলিশ উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহলকে সঙ্গে নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং ও লিফলেট বিলি করা হয়। বিদেশ ও অন্য জেলা থেকে আগতদের কোয়ারান্টিন নিশ্চিতকরণ, মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে কাজ করা, হাট-বাজার জনসমাগম এড়াতে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয় এবং চেকপোস্টে নজরদারি বাড়ানো হয়।
খোলা কাগজ : ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ অন রেডজোন জেলা থেকে আগতদের জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ওসি কামাল : এরকম কেউ উপজেলায় প্রবেশ করলেই বাধ্যতামূলক ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টিন কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টিন নিশ্চিত করতে কাজ করেছি। এজন্য সংক্রমণ হার তুলনামূলক কম।
খোলা কাগজ : লকডাউনে থানা পুলিশের ভূমিকা কী ছিল?
ওসি কামাল : লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় এক মাসের রেশন অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণ এবং খাদ্য সংকটে থাকা শতাধিক প্রতিবন্ধী, হিজড়া ও হরিজন সম্প্রদায়ের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
খোলা কাগজ : খানসামা উপজেলায় করোনা উপসর্গে মারা যাওয়া নরসিংদী ফেরত এক ব্যক্তির দাফনে কেউ না আসায় আপনারা দাফন করেছেন এটি সম্পর্কে কী বলবেন?
ওসি কামাল : জী, আমরা সামাজিক ও পেশাগত দায়বদ্ধতা থেকেই ইউএনও স্যারসহ মৃত্যু ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করি।
খোলা কাগজ : করোনা আক্রান্তের জন্য কী কী কাজ করেন?
ওসি কামাল : কারও করোনা রেজাল্ট পজিটিভ আসার পর তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্বশরীরে দেখা করা হয়, যেন মানসিকভাবে সাহস পায় এবং কেউ যেন খারাপ চোখে না দেখে সেজন্য প্রতিবশীদের সচেতন করা হয়।
খোলা কাগজ : গ্রাম পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে মতামত কী?
ওসি কামাল : বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যে কাজ করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
খোলা কাগজ : পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
ওসি কামাল : ইতিমধ্যেই স্থানীয় সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি মহোদয়, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহায়তায় পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার প্রদান করা হয়েছে। তাদের পর্যায়ক্রমে আরও সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
খোলা কাগজ : খানসামা উপজেলার জনগণকে সেবা দিতে গিয়ে আপনার মূল্যায়ন কেমন?
ওসি কামাল : এটি ইতিবাচক। যে কোনো নির্দেশনা বাস্তবায়নে জনগণ সবসময় পুলিশকে সহায়তা করেছে।
খোলা কাগজ : করোনা পরিস্থিতি খানসামাবাসীর জন্য কী বলবেন?
ওসি কামাল : নিজেদের সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়েই জনগণকে নিরাপদ রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে মাস্ক ব্যবহার করুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সকলে সুস্থ থাকুন।
খোলা কাগজ : আপনাকে ধন্যবাদ।
ওসি কামাল : আপনাকেও ধন্যবাদ। সাবধানে থাকবেন।