ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গৌরবের ৬৭ বছর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ওয়াসিফ রিয়াদ
🕐 ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৫, ২০২০

১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ ৬৮ বছরের পথচলায় নিজস্ব আলোয় আলোকিত উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গৌরব ও ঐতিহ্যে বিশ্বময় উদ্ভাসিত আজ। দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে সোচ্চার থাকা এ বিদ্যাপীঠ জন্ম নেয় ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে আজকের এ অবস্থানে আসতে দীর্ঘ কণ্টকময় পথ পাড়ি দিতে হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট এক কমিটি গঠন করা হয়। 

১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করার দাবি তোলেন। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। একের পর এক আন্দালনের চাপে টনক নড়ে দেশের সুধীমহল ও সরকারের।

অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়। ৬ জুলাই অধ্যাপক ইতরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য করে বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার খ্যাতিতে দেশের একটি শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় এ বিশ্ববিদ্যালয়। ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষাদান, বিদ্যাচর্চা, গবেষণা ও পা-িত্যের সুখ্যাতি দেশ পেরিয়ে বিস্তৃতি লাভ করে উপমহাদেশ, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের আনাচে-কানাচে। মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮ হাজারের বেশি। নয়টি অনুষদের ৫৮টি বিভাগে পাঠদান করা হচ্ছে এখন। এছাড়াও রয়েছে ছয়টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১৩টি একাডেমিক ভবন। ১৭টি আবাসিক হল, যার মধ্যে ১১টি ছাত্র ও ৬টি ছাত্রীহল এবং গবেষক ও বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ডরমিটরি। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা ১২৬০ জন, কর্মকর্তা রয়েছেন ৭৩৪ জন।

সম্প্রতি স্কোপাসর প্রকাশিত জরিপে গবেষণাকর্ম এবং গবেষণা সংশ্লিষ্ট পরিমিতির নিরিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। দেশের অন্যতম সেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো অত্যাধুনিক এবং শিক্ষা ও গবেষণার মান সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে এ মহাপরিকল্পনাসহ আরও বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যার মধ্যে সাত পুকুর গবেষণা প্রকল্প, গবেষণা জালিয়াতি রোধে প্ল্যাগারিজম প্রকল্প, বিশ্ববিদ্যালয় আরকাইভস ও অনলাইনে তথ্য জমা রাখার জন্য ‘আরইউ ক্লাউড’, ব্র্যান্ডিং গিফট শপ, বিশ্ববিদ্যায়ের নিউজলেটার ‘বিদ্যাবার্তা’, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যচিত্র, সৌন্দর্যবর্ধণ, ওয়েবসাইট আধুনিকীকরণ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অফিস, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের নামকরণ।

এছাড়াও একটি ২০ তলা আবাসিক ভবন, ছেলেদের ও মেয়েদের একটি করে ১০ তলা আবাসিক হল নির্মাণ এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেছেন, চলমান প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও মডেল বিশ্ববিদ্যালয়। সুদীর্ঘ ৬৭ বছর পেরিয়ে ৬৮ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশকে দিয়েছে বিশ্বের মাঝে অতুলনীয় খ্যাতি ও গৌরব। তৈরি করেছে দেশ-বিদেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান পণ্ডিত ও গবেষক।

 
Electronic Paper