পাঁচ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি, দুর্ভোগ
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ০১, ২০২০
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হওয়ায় অবনতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের। অপরদিকে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার পাঁচ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন যাপন করছেন।
কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের। গত এক সপ্তাহের অব্যাহত বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া বানভাসী অনেক পরিবারের ঘরে খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন তারা। সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও অপ্রতুলতার কারণে অনেকের ভাগ্যে জুটছে না তা। জেলার ৯ উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৬০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলসহ সবজি ক্ষেত।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার পারবতীপুর চরের মজির আলী, সবিরন, রব্বানী জানান, গত ১ সপ্তাহ ধরে পারবতীপুর চরের সব ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়িতে শুকনো জায়গা না থাকায় চুলা জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে তাদের। পার্শ্ববর্তী চর গ্রাম গারুহারা বলদিয়াপাড়ার সুরুজ্জামান ও শাহাজাহান জানান, ঘর-বাড়িতে পানি উঠলেও নৌকা না থাকায় ঘরের চৌকি উঁচু করে সেখানেই বাস করছেন তারা। খাদ্য সংকটে ভুগলেও এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পৌঁছায়নি তাদের কাছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের মতো অবস্থা ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের অববাহিকার উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ি ও রাজারহাট উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলের। অন্যদিকে বন্যার পানিতে ডুবে বুধবার এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় গত তিন তিন শিশুসহ মোট চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৬৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, জেলার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরো ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।
অপরদিকে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার সাত উপজেলার ৮ পৌরসভা ও ৪২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে ৩ লাখের বেশি মানুষ। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। বন্যার পানিতে ডুবে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ০২ সেন্টিমিটার কমে গতকাল বুধবার সকাল থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষদের জন্য ৬০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩৮টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ৪৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে যার মধ্যে ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৬২০ পরিবারের ৫ হাজার মানুষ অবস্থান করছে।
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পানিবন্দি মানুষ বিভিন্ন বাঁধের উপর অশ্রয় নিচ্ছে। সেই সাথে গবাদী পশু নিয়ে পড়েছে বিপাকে। গবাদীপশু নিয়ে রাত কাটাচ্ছে এক সাথে। কষ্টের বানে ভাসছে পানি বন্দি মানুষ।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জে পাঁচটি উপজেলার ৩১টি ইউনিয়নের ২৪৯২৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ২২টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও চরাঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জে ১৪ সেন্টিমিটার ও কাজিপুরে ৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুরে যমুনার পানি স্থিতিশীল থাকবে বলে জানিয়েছে বন্যা পুর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র।