ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষের ছাগলবৃত্তান্ত

আব্দুল্লাহ আল মাছুম
🕐 ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২০

মহামারির কারণে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা ছেড়েছে ক্যাম্পাস। কিন্তু আবাসিক হল ফাঁকা হয়নি। শিক্ষার্থীরা না থাকলেও থাকছে ছাগল। ঘটনাটি ঘটেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। শহীদ সালাম বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ ছাগলদের এই সুযোগ করে দিয়েছেন। ছাগলরা মনের সুখে হলময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাচ্ছে, নাচ্ছে, যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে জৈব সারের জোগান দিচ্ছে।

এই মহৎ কাজে সাধুবাদ না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা রিপোর্ট লিখে পত্রিকার পাতা ভরিয়ে ফেলছে। এমন অবস্থায় এই মনোরম আবাসিক হলে ছাগলদের অবস্থান টিকে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এসব খবর হলে অবস্থান করা পাঁচ ছাগলের কানেও পৌঁছেছে। তাই ছাগলদের মনে আগের মতো প্রফুল্লতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।

নিরীহ ছাগলদের পক্ষে কল্লা উঁচু করার কেউ না থাকায় অগত্যা আমাকেই মাঠে নামতে হল। পাঁচ ছাগলের বদৌলতে পাঁচটি সুসংবাদ আতশ কাচে ধরা পড়ল। চোখ থেকে মাস্ক নামিয়ে একবার তাতে চোখ বুলিয়ে নিন-

করোনায় আশার আলো : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বহুদিন থেকে বন্ধ। কোথাও কোথাও ধুলোর আস্তরণ জমে ভূগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হওয়ায় প্রতœতাত্ত্বিকদের ডাক পড়ছে। পরিস্থিতি যখন এমন তখন আশার আলো নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন এই প্রাধ্যক্ষ। অলস পড়ে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনমুখী করার নব আবিষ্কারে দেশ এই অধ্যাপকের জন্য গর্ব বোধ করছে।

সেরা বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শীর্ষে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। বিশ্ব সম্প্রদায় যদি জানতে পারে আবাসিক হল থেকে উন্নত জাতের ছাগল পয়দা হচ্ছে তবে কোনো সূচকের বাধা-ধরাই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শীর্ষ দশে পৌঁছতে বাধা দিতে পারবে না। জিডিপিতে অবদান রাখার জন্য দেশেও বিশেষ মর্যাদা ভোগ করবে।

কর্মচারীদের মঙ্গল : আবাসিক হলটির কর্মচারীদের উচিত প্রাধ্যক্ষকে সকাল-বিকেল-রাতে স্যালুট করা। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে থাকা করোনাকেও স্যালুট করতে বাধ্য করা। প্রাধ্যক্ষ কত বড় উপকার করেছে তা তারা এখনো বুঝতে পারছে না। করোনায় শুয়ে বসে দিন পার করলে মেদ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মেদ বাড়ার সঙ্গে কত কত অসুখ যে ঘাড় মটকে দিতে চাইবে তার ইয়ত্তা নেই। মেদ নিয়ে আপনাদের উপাচার্য কী মসিবতে রয়েছেন তা একবার ভাবুন না। প্রাধ্যক্ষ সাহেব আপনাদের ভালোবাসেন বলেই ছাগল চরানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।

ভূত-প্রেত দমন : কোনো বাড়ি বহুদিন নির্জন পড়ে থাকলে ভূত-পরী তার দখল নেয়। এটা তো সবার জানা কথা। ছাত্রদের হল যদি কোনো পরীর দখলে চলে যায় তবে কেল্লাফতে। দূরদর্শী প্রাধ্যক্ষ তাই ছাগলদের পাহারাদার হিসেবে মোতায়েন করেছেন।

গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত : গবেষণার বিষয়বস্তু খুঁজতে গিয়ে পাগল হওয়ার দিন শেষ। কলা, ব্যবসায়, বিজ্ঞানসহ সব ধরনের বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্র্থীদের গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করল এই ছাগল। হাতের কাছে হওয়ায় গবেষণার কাজও হবে সহজ। অর্থ ও সময় দুয়েরই সাশ্রয় হবে।

উপাচার্যের হাতেও বিদেশি গবেষণা প্রজেক্ট ধরা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এত সব সুবিধার মূলে যে অধ্যাপক তার জন্য নতুন চেয়ার তৈরিতে গাছ কাটতে উপাচার্যকে সহায়তা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। এছাড়াও ছাগল হল বাগানের শোভাবর্ধনকারী গাছ খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখছে। তবুও একদল অধ্যাপক নাখোশ হয়েছেন। সেসব অধ্যাপক বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, আপনারা শিক্ষার্থীদের ছাগল মনে করেন না? তবে সমস্যা কোথায়? আবাসিক হলে ছাগলরাই তো থাকছে!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper