বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাধা দূর করার উদ্যোগ
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২০
বিদেশি বিনিয়োগের পথে আইনি জটিলতা দূর করতে নতুন করে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে আইনের অস্পষ্টতা ও ব্যাংকের আইনি জটিলতা অন্যতম। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ব্যাংকের জটিলতা দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিনিয়োগের মুনাফা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া ও অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-কে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। করোনা অতিমারির বৈশি^ক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। শুরু হয়েছে নতুন অর্থনৈতিক মেরুকরণ ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
এ অঞ্চলের অনেক দেশ যেমন- ভারত, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন, বিধিবিধান, কর ব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং পদ্ধতি সহজতর করছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামোয়, নীতিসহায়, ব্যাংকিং নিয়মনীতি ও পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে সহজে প্রত্যাবাসন তথা নিজ দেশ বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অনায়াসে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশ বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়মনীতি সহজীকরণ বা যুগোপযোগীকরণ এবং তার বাস্তব প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ৮ জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নির্বিঘেœ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বিনিয়োগে এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ-লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনে সর্বোত্তম ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।’
বিদেশি বিনিয়োগের পথে অন্যতম বাধা হলো বিনিয়োগ করে যেখান থেকে মুনাফা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা আইনি প্রতিবন্ধকতা এবং আপদকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বিদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে আইনি দেন-দরবারও হয়েছে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা গেছে বলেও বলা হয়ে থাকে। এরপরই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলো।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে সহজে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে অর্থ জমা, উত্তোলন ও তাদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে পারেন, সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুততর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।’
জানা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-কে বাংলা ভাষায় রূপান্তর এবং যুগোপযোগী করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে খসড়া প্রণয়নে করা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়া হবে। তারা ২১ দিনের মধ্যে মতামত দেবেন। তারা যাতে মতামত দিতে পারেন, সেজন্য সংশোধিত আইনের খসড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।